Print Date & Time : 20 April 2025 Sunday 4:19 am

কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে তেতুলিয়ায় বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়

এস কে দোয়েলঃ দে্শের মাটিতে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে দূর হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা। শরতের শুভ্র মেঘের আড়ালে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা।

এবার সেপ্টেম্বরের ১০/১২তারিখ থেকেই দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ। মাঝে মেঘলা আকাশ থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়নি। ২৭ সেপ্টেম্বর ভোর থেকেই আবার দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে পৃথিবীর সুউচ্চ এই পর্বতশৃঙ্গের দূরত্ব তুলনামূলক ভাবে কাছে। প্রতিবছর আকাশ চুম্বী হিমালয়, মেঘকন্যা কাঞ্চনজঙা আর দার্জিলিংয়ের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক ভ্রমন করেন ভারত ও নেপাল। যাদের কাছে সে সুযোগ নেই তারা ছুটে আসেন তেতুলিয়ায়।

করোনা প্রকোপে ঘরবন্ধী থাকা মানুষ বিহঙ্গের মতো ছুটে আসছেন। পর্যটক সমাগমে ব্যস্তময় হয়ে উঠছে তেতুলিয়া। হোটেল-রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল থেকে শুরু করে ব্যাটারিচালিত ভ্যান, অটোরিক্সার মতো যানবাহনগুলো ব্যস্ত। ভ্রমণ পিপাসুরা ভোর-সন্ধ্যা উপভোগ করছেন মোহনীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তারা এসেই স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছেন দুটি পর্বতশৃঙ্গের বণনা।

স্থানীয়রা জানায়, দিনে বিভিন্ন রূপে দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। সূর্যের আলোর সঙ্গে সঙ্গে কখনো শুভ্র, কখনো গোলাপি, আবার কখনো লাল রঙ নিয়ে হাজির হয় বরফে আচ্ছাদিত এই পর্বত চূড়া। ভোরে আলো ফুটতেই তা গিয়ে পড়ে ঠিক কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায়। এদিকে চারপাশে তখনো আবছা অন্ধকার থাকলেও চকচক করে চূড়াটি। ভোরের আলোয় এবং বিকেলে পর্বত চূড়াটি পোড়া মাটির রঙ নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা ঝাপসা হয়ে আসে। তখন রং হয় সাদা। দূর থেকে মনে হয় এ যেন আকাশের গায়ে এক খন্ড বরফ। এ পরিবর্তন দেখতে দুরবীণ বা বাইনোকুলারের প্রয়োজন হয় না। দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকলে এখন থেকে খালি চোখে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। পর্বত চূড়াটির নিচ দিয়ে কালো রঙে দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি এলাকা দেখা যায়।

ঢাকা, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর থেকে আসা কয়েকজন পর্যটক জানান, পর্যটক সেবা প্রতিষ্ঠান তেঁতুলিয়া ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম ও আবহাওয়া বার্তার খবর জেনে তেঁতুলিয়ায় ছুটে এসেছি কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য। দুদিন খুব মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। এভাবে কাছ থেকে দেখতে পাবো ভাবতেও পারিনি। খুব ভালো লেগেছে। এছাড়া এখানকার চা বাগান, জিরোপয়েন্ট, স্থলবন্দর, মহানন্দার পাথর উত্তোলন, সূর্যাস্ত ও সীমান্তের সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে।

বাংলা হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিক আজিজুল হক জানান, হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘিরে পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। আমাদের বেশ ব্যস্ততা বেড়েছে। পর্যটকরা আমাদের এ এলাকার অতিথি। আমরা চেষ্টা করছি তাদের প্রত্যাশিত সেবা দিতে।

এদিকে পর্যটনের সময়কে কেন্দ্র করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে এখানকার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র ডাকবাংলো ও পিকনিক কর্ণারটিকে। নির্মাণ করা হয়েছে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। মহানন্দার তীরে স্থাপনা ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে ওয়াকওয়ে ও গ্যালারি। এখানে দাঁড়িয়ে বসে ভ্রমণপিপাসুরা উপভোগ করছেন হিমালয় পর্বত, মেঘকন্যা কাঞ্চনজঙ্ঘা, দার্জিলিং এবং নদীর ওপারে ভারতের বিস্তৃত সবুজ চা বাগানসহ নানান দৃশ্য।

তেঁতুলিয়া ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজমে পরিচালক সদস্য আতিকুজ্জামান শাকিল, মোবারক হোসাইন, আশরাফুল ইসলাম জানান, এবার সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকেই মেঘমুক্ত থাকায় পৃথিবীর সুউচ্চ হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি পর্যটকদের সেবা দিতে। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে দর্শনীয়স্থানগুলো ঘুরিয়ে দেখানোর সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম জানান, এ সময়টা পর্যটনের সময়। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ যেকোন সমস্যা সমাধানে আমরা তৎপর রয়েছি। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশ টহলে রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, পর্যটকদের জন্য হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের অন্যতম আকর্ষণ। মেঘমুক্ত আকাশে কদিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভ্রমণপিপাসুদের উপস্থিতি বেড়েছে।