বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের নামে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল মঙ্গলবার ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছে বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা।
পুলিশ বক্সে আগুন, অবরোধ করে মহাসড়কে টায়ার জ্বালানো, পুলিশ ফাঁড়ি, কারখানার, হাসপাতাল ও শোরুম ভাংচুরসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের তান্ডব চলে।
এতে অচল অবস্থায় পড়ে জনজীবন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে মোতায়েন ছিল বিজিবি। তবে শুধু শ্রমিক নাকি তাদের সঙ্গে অবরোধের প্রথম দিনে বিএনপি-জামায়াতের তান্ডব? এ নিয়ে জনমনে চলছে নানা গুঞ্জন।
এলাকাবাসী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে বেতন বৃদ্ধির দাবীতে কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের টানা আন্দোলন চলছে। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে উপজেলার মৌচাক, সফিপুর, পল্লীবিদ্যুৎ, চন্দ্রাসহ বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নামে। পরে তারা লাঠিসোটা নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ রেখে বিক্ষোভ মিছিল করে। সকালে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর করে উত্তেজিত শ্রমিকরা। বেলা ১১টার দিকে উত্তেজিত শ্রমিকরা সফিপুর এলাকায় অবস্থিত গাজীপুর জেলা ট্রাফিক পুলিশের বক্সে হামলা ও ভাংচুর চালায়। এসময় তারা উত্তেজিত হয়ে ওই ট্রাফিক বক্সে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এর আগে পাশের তানহা হাসপাতাল নামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে গ্লাস ভাংচুর ও ঔষধপত্র বিনষ্ট করে। এছাড়াও মহাসড়কের আশপাশে বিভিন্ন দোকানপাটেও ভাংচুর করা হয়। দুপুরে মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ বক্স ভাংচুর করে বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা। পরে শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় তারা পাশের ওয়ালটন কারখানার একটি শোরুম ভাংচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে সেখানে দাড়িয়ে থাকা একটি পিকআপভ্যানে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা। এছাড়াও বেলা ২টার দিকে পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় ফ্রেব্রিক্স বহনকারী কভার্ডভ্যানে অগ্নিসংযোগ, মৌচাক এলাকায় অপর একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত শ্রমিকরা। পরিস্থিতি শান্তু করতে গেলে উত্তেজিত শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিভিন্ন স্থানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। শ্রমিকদের এমন তান্ডবের ঘটনায় মহাসড়কসহ জনজীবন অচল অবস্থা বিরাজ করে। এদিকে শিল্পপুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, থানা পুলিশ, জেলা পুলিশের পাশাপাশি পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বিজিবি।
এদিকে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের প্রথম দিনে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও কয়েকটি গাড়িতে আগুন, হাইওয়ে পুলিশ বক্স, পুলিশ ফাঁড়ি, হাসপাতাল ও দোকানপাট ভাংচুরের ঘটনায় নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। তবে শুধু শ্রমিক নাকি তাদের সঙ্গে অবরোধের প্রথম দিনে বিএনপি-জামায়াতের তান্ডব? এ নিয়ে জনমনে চলছে নানা গুঞ্জন।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা ইফতেখার আহম্মেদ রায়হান চৌধুরী জানান, পুলিশ বক্স, গাড়ি ও ওয়াল্টন প্লাজা শোরুমসহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে বিভিন্ন মালামাল পুড়ে যায়। তবে এসব অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তাৎক্ষনিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা যায়নি।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে উল্টো তারা আমাদের উপর হামলা করে। টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আর পুলিশ বক্স ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, কারখানা ও যানবাহন ভাংচুর কারীরা প্রকৃত শ্রমিক নয়। প্রকৃত শ্রমিকরা এসব করতে পারে না। তবে এসব ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গাজীপুর শিল্পাঅঞ্চল পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, পোশাক শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রমিকদের ভাংচুর না করে শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, আন্দোলনের নামে বিভিন্ন কারখানা, পুলিশ বক্স, হাসপাতালসহ দোকানপাট ভাংচুর এবং পুলিশ বক্স ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আমরা রাস্তায় আছি। বেলা ৩টার দিকে শ্রমিকদের মহাসড়কে দেখা যাচ্ছে না। তবে এসব তান্ডবে শ্রমিকদের চেয়ে বহিরাগতরা বেশি রয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে ৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//

Discussion about this post