ফজলুল হক, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
পরকালের প্রথম মনজিল হলো কবর। আর সেই কবর থেকে একের পর এক চুরি হয়ে যাচ্ছে লাশের কঙ্কাল। বাদ পড়েনি কবরস্থান দেখবাল করা নিরাপত্তাকর্মীর মেয়েটির লাশও। এ যেন এমন ব্যধি মরেও অনিরাপদে লাশ। মৃত্যুর পরেও অমানুষের হানায় আতঙ্কে লাশ দাফনে অস্বস্তি বোধ করছেন স্বজনরা। তবে অচিরেই এমন অমানুষদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসী, নিহতের স্বজন ও মুসুল্লী সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুর পর কবর থেকেই কর্মকান্ডের ওপর ভিত্তি করে সুখ-শান্তি কিংবা শাস্তি ভোগ করবে মানুষ। কবরের সুখ-শান্তি ও শাস্তির ব্যাপারে কুরআন-সুন্নায় অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে।
তবে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার শ্রীফলতলী জমিদারবাড়ী সংলগ্ন কবরস্থানে ঘটছে লাশ চুরির মতো জঘন্য ঘটনা।
ইতিপূর্বে কবর খুড়ে হানিফ মিয়া, মফিজ উদ্দিন মফে, ওমর আলী, আলেয়া বেগমসহ প্রায় ১৫/২০টি লাশের কঙ্কাল চুরি হয়।
এর মধ্যে ওই কবরস্থান নিরাপত্তাকর্মী জনির মেয়ের লাশও নিয়ে গেছে অমানুষের দল। এক রাঁতে ৯টি লাশের কঙ্কালও চুরি হয়ে গেছে। আবার কোনো লাশ দাফনের সপ্তাহ যেতে না যেতেই কঙ্কাল চুরি হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় হাড়, মাথার চুলসহ বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গ পড়ে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোন নজর নেই বললেই চলে।
সর্বশেষ সপ্তাখানেক আগে রুবেল হোসেনের কবর খুড়ে অমানুষেরা দল। অল্পের জন্য রক্ষা পায় তার লাশের কঙ্কাল। প্রায় প্রতিনিয়ত কঙ্কাল চুরির মতো জঘন্য ঘটনায় ওই কবরস্থানে লাশ দাফনে অস্বস্তি বোধ করছেন স্বজনরা। কিন্তু রাত হলেই মনে হচ্ছে এই যেন কেউ কবর থেকে কারো লাশ তুলে নিচ্ছে। মৃত্যুর পর লাশটি কবর দিলেও কঙ্কাল চুরি হওয়ার আতঙ্কে দিনরাত কাটাতে হচ্ছে স্বজনসহ এলাকাবাসীর।
স্থানীয় সুমন হোসেন বলেন, মাঝে মাঝে কবরস্থানে মানুষের কঙ্কাল হাড় মাথার চুল বিভিন্ন অঙ্গ পতঙ্গ এখানে পড়ে থাকে। আমার ছোট ভাই রুবেলকে এখানে কবর দিয়েছি। কিন্তু রাঁতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি না। এই বুঝি কবর খুঁড়ে আমার ভাইয়ের লাশ নিয়ে গেল।
নুরুল ইসলাম বলেন, রাঁতের আধারে লাশ চুরির ঘটনায় খুব আতঙ্কে আছি। এখানে রাঁতে পাহারাদার বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে লাশ দাফন করে আমরা যেন নিশ্চিন্তে থাকতে পারি।
কথা হয় ওই কবরস্থানের পাহারাদার নজরুল ইসলাম জনি সঙ্গে। এ ব্যাপারে কার সঙ্গে কথা বলতে হবে তিনি নিজেও জানেন না। তবে তিনি জানান, লাশ এন্ট্রি করার জন্য আমাকে একটা খাতা দেওয়া হয়েছে। আর রাঁত জেগে পাহারা দেওয়ার জন্য কেউ বলেনি, আমি কোনো নোটিশও পাইনি। এছাড়াও গত দুই বছরে সংশ্লিষ্ট কেউ এখানে দেখতেও আসেনি। তবে আমার মেয়ের লাশও নিয়ে গেছে ওই অমানুষেরা। তবে এই দুঃখ প্রকাশের ভাষা জানা নেই বলেও জানিয়েছেন অনেকেই।
শুধু এই কবরস্থানেই নয়, আশাপুর-বেনুপুর কবরস্থান থেকে একদিনে ১৪টিসহ একাধিবার ও বিভিন্ন কবরস্থান থেকে বিভিন্ন সময় লাশের কঙ্কাল চুরি হচ্ছে।
খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শক করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত লাশের কঙ্কাল চুরি সঙ্গে জড়িত কেউই গ্রেপ্তার হয়নি। ফলে এমন ধরা ছুয়ার রাইরেই থেকে যাচ্ছে জঘন্য কাজে লিপ্ত অমানুষেরা। তবে অচিরেই মৃত ব্যক্তির লাশ চুরিসহ অমানুষদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, শ্রীফলতলী কবরস্থানের ভাউন্ডারী কাজের টেন্ডার সম্পূর্ণ। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে। শুধু এটাই নয়, আবেদনের প্রেক্ষিতে পর্যায়ক্রমে সব কবরস্থানে নিরাপত্তার জন্য আলোকসজ্জা ও সিসি ক্যারেমরা ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও কঙ্কাল চুরির বিষয় তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এস//

Discussion about this post