Print Date & Time : 10 May 2025 Saturday 10:58 am

কুড়িগ্রামে সৈয়দ শামসুল হকের বার্ষিকী পালন

শাহীন আহমেদ, কুড়িগ্রাম ।।কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে শায়িত সব্যসাচী কবি সৈয়দ শামসুল হকের ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সকল স্তরের মানুষজন।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে শায়িত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সমাধিতে  জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষজন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিনহাজুল ইসলাম, পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যাক্ষ মির্জা নাসির উদ্দীন, একুশে পদক প্রাপ্ত  অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, প্রেসক্লাব সভাপতি রাজু মোস্তাফিজ, এ্যাড আহসান হাবীব নীলু প্রমুখ ।

বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী খ্যাত সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের থানা পাড়ার পৈত্রিক নিবাসে  জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ হক তার বাবা-মায়ের আট সন্তানের মধ্যে সবার বড়।বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও মা হালিমা খাতুন। বাবা পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার।

বাংলা সাহিত্যের সব শাখায় সমানভাবে পদচারণার জন্য সৈয়দ শামসুল হককে “সব্যসাচী লেখক” বলা হয়।তিনি ১৯৬৪ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন।১৯৬৬ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন তিনি। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ১৯৮৪ সালে একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। এছাড়াও সাহিত্যে তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল স্বর্ণপদক, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।

১৯৫০-এর দশকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস “দেয়ালের দেশ”।এছাড়াও তার লেখা অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে খেলারাম খেলে যা, নিষিদ্ধ লোবান, সীমানা ছাড়িয়ে, নীল দংশন, বারো দিনের জীবন, তুমি সেই তরবারী,কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন ও নির্বাসিতা।

তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে: একদা এক রাজ্যে, বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা, পরানের গহীন ভিতর, অপর পুরুষ, অগ্নি ও জলের কবিতা। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ও নুরুলদীনের সারা জীবন সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাট্য। 

সৈয়দ শামসুল হক মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত তিনি বেশ কিছু সিনেমার চিত্রনাট্য লিখে সুনাম কুড়িয়েছেন। যেমন- মাটির পাহাড়, তোমার আমার, কাঁচ কাটা হীরে, বড় ভালো লোক ছিল ইত্যাদি। তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন।

১৯৭১ সালের নভেম্বরে তিনি লন্ডন চলে যান। সেখানে বিবিসি’র বাংলা খবর পাঠক হিসেবে চাকরি করেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসর্মপণের খবর পাঠ করেছিলেন তিনি।

সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন, “জন্মে জন্মে বার বার কবি হয়ে ফিরে আসব এই বাংলায়” আর আমরাও বারবার বরণডালা সাজিয়ে রাখব দেশজ এই কবিকে স্বাগত জানাতে। কবি থাকবেন বাংলার কথায় ও মানুষের কবিতায়।কবি থাকবেন ছন্নছড়া মানুষের ঐক্য প্রতিষ্ঠায়। তাই তো তিনি সংকটময় মুহূর্তে দেশের হাজারো নুরুলদীনের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন “জাগো বাহে কনঠে সবাই”

সৈয়দ সামসুল হকের ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক বলেন, আমার বাবা এখানে সাহিত হয়েছেন ৬ বছর ধরে। যে-দিন থেকে তিনি এখানে সাহিত হন আমিও হয়ে গেছি বাবার মত কুড়িগ্রামের সন্তান।  আমরা সকলের মুখে শুনছি এখানে তার নামে কমপ্লেক্স করা হবে। তবে কবে নাগাদ করা হবে আমারদের কারই জানা নেই। আমাদের দাবি দ্রুত কমপ্লেক্সেটি হলে সবার জন্য ভালো হতো।

আর//দৈনিক দেশতথ্য//২৭ সেপ্টেম্বর-২০২২