ছাব্বির কুমারখালীঃ মাত্র তিনবছর আগেও ব্রিটিশ টোবাগো কোম্পানিতে চাকুরি করতেন আবু শাহিন (৩৫)। চাকুরির সুবাদে একবার ঝিনাইদহ জেলায় ঘুরতে গিয়েছিলেন তিনি। পথিমধ্যে কালো আখে নজর পড়েছিল তাঁর। মনের মধ্যে কৌতুহলের জন্ম হয়েছিল। কৌতুহলের সুযোগে গাড়ি থেকে নেমে আখের স্বাদ নিয়েছিলেন তিনি।
এরপর স্বাদে খুশি হয়ে শখের চাষে আগ্রহ হয় তাঁর। মাত্র তিন হাজার টাকার বীজ কিনে পাঁচশতক জমিতে শুরু করেন ফিলিপাইন গান্ডারী (আখ) চাষ। এ আখ চাষে খরচ কম, তেমন কষ্ট নেই এবং অধিক লাভজনক। তাই চাকুরি ছেড়ে শুরু করেন ফিলিপাইন আখের চাষ। এতে তাঁর বদলে যায় ভাগ্য।
বর্তমানে ছয় বিঘা জমিতে তিনি এই আখের চাষ করছেন। প্রতিবছরে উপার্জন করছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এছাড়াও আবু শাহিনের দেখাদেখি ওই এলাকায় অন্তত ২০ জন শুরু করেছেন আখের চাষ। আবু শাহিন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নদন্দনালপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের খাঁ পাড়া এলাকার নজিম উদ্দিন খাঁ’র ছেলে।
শনিবার দুপুরে খাঁ পাড়া এলাকায় গিয়ে
সফল আখচাষী শাহিনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আখচাষে বছরে একবার ফলন পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১২ হাজার পিছ ফিলিপাইন আখের চাষ করা যায়। বিঘায় বীজ, সার, শ্রমিক ও আনুষাঙ্গিক খরচসহ মোট প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়।
আরো জানা গেছে, প্রতি পিছ আখ পাইকারী ৩৫ থেকে ৪৫ বা ৫০ টাকায় বিক্রিয় করা হয়। আর খুচরা বাজারে ৫৫ থেকে ৬০ বা ৭০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এতে বিঘা প্রতি জমিতে প্রায় প্রায় চার থেকে চার লক্ষ ৮০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করতে পারেন কৃষক। ফলে খরচ বাত দিয়ে বছরে প্রায় চার লক্ষাধিক টাকা লাভ করতে পারেন কৃষক।
এবিষয়ে সফল ফিলিপাইন আখচাষী আবু শাহিন বলেন, আগে ব্রিটিশ টোবাগো কোম্পানিতে চাকুরি করতাম। চাকুরীর কারেন ২০১৭ সালে একবার ঝিনাইদহ জেলায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে এক স্থানে কালো আখ দেখে অবাক হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আগ্রহ হলো স্বাদ নেওয়ার। খাওয়ার পর খুব ভাল লেগেছিল এবং শখের চাষে মন বসেছিল। পরে সেখান থেকে মাত্র তিন হাজার টাকার বীজ কিনে পাঁচ শতাংশ জমিতে রোপন করেছিলাম। চাষে খরচ কম, কষ্ট কম ও অধিক লাভজনক। তাই ২০১৮ সালে তিন বিঘা জমিতে চাষ শুরু করি। বর্তমানে ছয় বিঘা জমিতে আখের চাষ আমার।
তিনি আরো বলেন, বিঘা প্রতি বছরে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর প্রায় চার লক্ষ ৮০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করি। বর্তমানে ছয় বিঘা জমিতে বছরে প্রায় আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকার খরচ হয়। আর ২৫ থেকে ২৮ লক্ষ টাকার আখ বিক্রি করা হয়।
জানা গেছে, শাহিন আখ চাষে মুগ্ধ হয়ে ওই এলাকায় অন্তত ২০ জন ফিলিপাইন আখ চাষের শুরু করেছেন। তাঁরাও লাভবান হচ্ছেন এচাষে। তাঁর মধ্যে সফল চাষী শাহিনের বাবা নাজিম উদ্দিন একজন। এবিষয়ে নাজিম উদ্দিন বলেন, ছেলের দেখাদেখি আমিও ছয়বিঘা জমিতে আখের চাষ করছি। এতে খরচ কম। কিন্তু অধিক লাভ। তবে ডোবা স্থানে এই আখের চাষ করা যায়না।
খাঁ পাড়া এলাকার আরে আখচাষী সাইদুল খাঁ বলেন, গতবছর থেকে আমিও দুইবিঘা জমিতে আখ চাষ করছি। প্রতিটি আখ ১০ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয়। আর ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় পাইকারী বিক্রি হয়। খুচরা বিক্রেতা জমিতে এসে আখ নিয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, ‘ কয়েক বছর আগে উপজেলায় সৌখিনভাবে গান্ডারী চাষ শুরু হয়েছিল। কিন্তু অধিকলাভজনক হওয়ায় বর্তমানে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে। দিনেদিনে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। কৃষি অফিস নিয়মিত পরামর্শ প্রদান ও খোঁজখবর রাখছে।

Discussion about this post