নিম্ন মানের ধান চাউলে ভরে উঠছে সরকারী গুদাম
কুষ্টিয়ার খাদ্য দপ্তরে চলছে হরিলুট কারবার। ডিসি ফেুডের দপ্তর দুর্ীতির আঁখড়ায় পরিনত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে ডিসি ফুড নিজে দুর্নীতির সাথে জড়িত। তিনি বিশেষ সুবিধা নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।
জানা গেছে, ডিসি ফুড তার পছন্দের মিলার ও ডিলারদের দিয়ে দুর্ীতি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল অংকের টাকা। যার ফলে প্রায় সব গুদামেই মিলছে নিম্নমানের ধান চাউল ও আটা। এব্যাপারে তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কল ধরেননি। তাঁকে এসএমএস দিয়েও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
দেশতথ্যের কুমারখালী প্রতিনিধি ছা্ব্বির হোসেন জানিয়েছেন, কুমারখালীতে ৩০ টাকা কেজির ওএমএস চাউলের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কুমারখালীর বাসিন্দা রোকেয়া বেগম (৪৫) জানিয়েছেন, ওই চাউলের বেশিরভাগই পঁচা, ছত্রাকযুক্ত, দুর্গন্ধ ও মাছি চাউল। এসব চাউল কোন ভাবেই খাওয়ার উপযোগী নয়। তিনি এমন চাউল বাড়িতে নিয়ে রান্না করতে পারেননি।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার পৌর এলাকার দুইটি ওএমএস চাউলের ডিলার পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, কুমারখালী খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহকৃত চাউলে মধ্যে বেশ কয়েক বস্তা পঁচা, ছত্রাকযুক্ত, দুর্গন্ধযুক্ত মাছি চাউল ভালো চাউলের সাথে মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
গতকাল (১ মার্চ) মঙ্গলবার উপজেলায় খাদ্য অধিদপ্তরের চাউলের ট্রাক আনলোড করার সময় দেখা যায় বেশিরভাগ বস্তায় মিলারের সিল নাই। অথচ নিয়ম অনুযায়ী আছে বস্তার একপাশে খাদ্য অধিদপ্তরের সিল আর অন্যপাশে থাকবে মিলারের সিল। কিন্তু মিলারের সিল ব্যতিত বস্তার চাউল গুলোই নিম্নমানের দেখা যায়। এবিষয়ে ওএমএস চাউলের ডিলার মিজানুর রহমান জানান, আমরা ফুড অফিস থেকে চাউল সংগ্রহ করি। মাঝে মধ্যেই দেখি ভালো চাউলের মধ্যে খারাপ চাউলের মিশিয়ে দেয়। সব বস্তাতো আর দেখে নেওয়া যায় না।
আরেক ডিলার মোতালেব হোসেন বলেন, আমরা অসহায়, কিছু বলতে গেলে যদি ডিলারশীপ বাতিল করে দেয়। সেই ভয়ে কিছু বলতে পারি না। খাদ্য গুদাম সার্চ করলে এরকম বহু বস্তা নষ্ট মাছি চাউল পাওয়া যাবে।
চাউল উত্তলন করতে আসা মালিয়াট গ্রামের আকলিমা খাতুন (৪০) বলেন, আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে এই সরকারী চাউল কিনে খায়, মাঝে মধ্যেই পঁচা লাল চাউল দেয় কিন্তু কিছু বলতে পারিনা কেনবা গরীবের কথা শুনবে কে?
আরেক ভুক্তভোগী উপজেলার বাটিকামারা এলাকার শাহনাজ বেগম জানান, ঘন্টা পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যখন পঁচা চাউল পায় তখন আর মনে চায়না সরকারি চাউল নিতে আসি কিন্তু পেটের দায়ে আসি কিছুই করার নেই।আর এতো সব অভিযোগের তীর কুমারখালী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) জামশেদ ইকবালের বিরুদ্ধে। তাই সবকিছু মিলিয়ে ভুক্তভোগীরা মনে করেন, অনিয়ম ও দূর্নীতির আতুর ঘর বানিয়ে ফেলেছে কুমারখালীর সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) জামশেদ ইকবাল। আর এতো সব অভিযোগের তীর কুমারখালী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) জামশেদ ইকবালের বিরুদ্ধে।
গত দুই বছরে এই একই অভিযোগে বেশ কয়েকবার কুমারখালী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামশেদ ইকবালের বিরুদ্ধে ভি,জি,ডির চাউল সরবরাহে অনিয়মের খবর জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হলেও তার বিরুদ্ধে কোন উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা, এরশাদ আলী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) জামশেদ ইকবালকে দায়ী করে বলেন, এরপর থেকে এধরণের নিম্ন মানের চাউল যাতে গুদামে না আসে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। যেহেতু চাউল বুঝে নেই খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেহেতু তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাকে সুপারিশ করবো।
এবিষয়ে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) জামশেদ ইকবাল কথা বলতে রাজি হননি। এছাড়াও মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিতান কুমার মন্ডল বলেন, এমন অভিযোগ ওসি-এলএসডির বিরুদ্ধে কয়েকমাস আগে যখন শুনি তখন আমি গুদাম থেকে ভাল চাউল ও সঠিক পরিমান বুঝে নিয়ে ডিলারদের প্রত্যয়ন দেওয়ার কথা বলি,যদি কোন ডিলার প্রত্যয়ন না দেই আর আগের মতই সব চলতে থাকে তাহলে ওসি-এলএসডির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এল//দৈনিক দেশতথ্য//০১ মার্চ,২০২২//