এনামুল হক কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে বাস টার্মিনালে বৈধ টোল ইজারাদারের উপর হামলা ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখমের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
লিখিত অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুমারখালী থানার ওসি। অভিযুক্ত উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর এর দাবি এখতিয়ার বহির্ভুত এলাকায় অবৈধ টোল আদায়ের প্রতিবাদ করায় ইজারাদারের লোকজনের হামলা ও মারধরের শিক্ষার হয়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী প্রতিরোধ গড়ে তুল্লে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
বুধবার বিকেলে কুমারখালী বাস টার্মিনালে হামলার শিকার হন টার্মিনাল টোল ইজারাদার উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে ব্যবসায়ী রাকিব হোসেন। এসময় ধারালো চাপাতির আঘাতে মাথার উপরিউস্থ সিংহভাগ প্রায় দ্বি-খন্ডিত হওয়ার উপক্রম গুরুতর রক্তাক্ত জখমে আহত টোল ইজারাদার রাকিব হোসেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন। রাকিব হোসেনের অভিযোগ,‘কুমারখালী পৌর প্রশাসকের দপ্তর হতে প্রতিযোগিতাপূর্ন দরপত্রের মাধ্যমে সাড়ে ১৬লাখ টাকার রাজস্ব দিয়ে চলতি বছরে আমি পৌর বাস টার্মিনাল ও পৌর পাকিং (অটো সিএনজি ষ্ট্যান্ড ও লোড আনলোড) টোল ইজারা অনুমোদন লাভ করি’। শুরু থেকেই উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আফজাল হোসেন ওই ইজারা নিজের দলের লোকজনের হাতে তুলে দেয়ার দাবি করেন। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় প্রতিমাসে ২লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। অন্যথায় আমাকে এবং আমার লোকজনদের টোল আদায় করতে দেয়া হবেনা এমন হুমকি দিচ্ছিলো। গতকাল তাদের দাবিকৃত টাকা কেনো দিচ্ছিনা এসব বলে চাপ সৃষ্টি করে আমি এবং আমার লোকজন তাদের দাবি মেনে না নেয়ায় পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে জামাত নেতা আফজাল দাঁড়িয়ে থেকে হুকুম দিয়ে ১৫/২০জনের সন্ত্রাসী বাহিনী আমার উপর অতর্কিত হামলা করে। তারা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে একটি দোকানের মধ্যে ঢুকে পড়ি এবং আমি কুমারখালী থানায় ফোন করে সাহায্য চায়’।
ঘটনাস্থলে হামলার প্রত্যক্ষদর্শী গ্যারেজ শ্রমিক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার বিকেলে জামাত নেতার ছেলে শুভন মটর সাইকেলে টার্মিনালে এসে এক অটো থেকে টোল আদায়ে বাধা দেয়, এসময় তাদের সাথে বাক বিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে শুভনকে টোল আদায়কারীরা মারধর করে। এই ঘটনার কিছুক্ষন পর জামাতের আমীর আফজাল হোসেন তার লোকজন সহ টোল আদাকারীদের রশিদ বই ছিনিয়ে নিয়ে মারধর শুরু করে দেয়’।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আফজাল হোসেন মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, ‘টোল আদায়ের নির্ধারিত এলাকার বাইরে গিয়ে এখতিয়ার বহির্ভুত এলাকায় অবৈধ ভাবে চাদাবাজী করার প্রতিবাদ করতে গেলে ওরা আমার ছেলে শুভন’কে মারধর করে। এই অবৈধ চাঁদার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের মধ্যে পূর্ব থেকেই ক্ষোভ বিরাজ করছিলো, গতকাল ইজারাদারের লোকজন হামলা করায় এলাকাবাসী তাদের প্রতিরোধ করতে গেলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর সাথে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক কোন যোগসূত্র নেই। ওরা রাজনৈতিক ভাবে আমাকে হেয় করতে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন’।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ১০নং শৈল্য চিকিৎসা বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: সাকিব বলেন, ‘বুধবার সন্ধায় মারধরের শিকার ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর রক্তাক্ত জখমের শিকার ভর্তি হওয়া রাকিব নামের রোগীকে ওটি করে প্রায় ৭ ইঞ্চি দৈর্ঘের ক্ষতস্থানে সেলাইসহ প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ওই রোগীর কিছু পরিক্ষা নিরীক্ষাসহ আনুষঙ্গিক রিপোর্ট পর্যবেক্ষন চলছে। এমুহুর্তে রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল আছে। তবে যে কোন সময় জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় তাকে নিবির পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোলাইমান শেখ বলেন, ‘টার্মিনালে টোল ইজাদার রাকিবের উপর হামলার ঘটনায় আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রাকিবের বোন রোমানা আক্তার নিশি বাদি হয়ে উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আফজাল হোসেনের নামসহ ৯ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫/৭ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হত্যাচেষ্টার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটির তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হামলা ও মারধরে যারাই জড়িত থাক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

Discussion about this post