Print Date & Time : 19 April 2025 Saturday 4:43 am

কুমারখালী সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ

এনামূল হক ॥ কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে জাল ও ভুয়া শিক্ষক নিবন্ধন সনদে চাকরি করার দালিলিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদিকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ ঐ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষককে বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় মামলা করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বালিকা বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক মোহাঃ আবুল কাশেম ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে কুসমাবাবি/৫৩/২০২১ নম্বর স্মারকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ বরাবর শিক্ষক নিবন্ধন সনদ যাচাইকরণের জন্য পত্র প্রেরণ করেন। এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে ৩৭. ০৫.০০০০. ০১০.০৫.০০২.২০.৬০৫ নম্বর স্মারকে সহকারী পরিচালক(পমূপ্র-৩) তাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে ঐ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কুমারখালী থানায় মামলা করার নির্দেশ দেন । ঐ শিক্ষিকার নাম আসমাউল হুসনা, পিতার নাম কাজী আকবর আলী। তার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার রোল নম্বর ৩০৬১১৩৪৫, রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ৯০০০৬৬৬১, সাল ২০০৯, পরীক্ষা নম্বর পঞ্চম। অত্র প্রতিষ্ঠানে যোগদানের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১১ এবং জন্ম তারিখ ৫ জুন ১৯৭৭। ইনডেক্স নম্বর ১১০০৯১৩। তার শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি সঠিক নয়। সনদটি জাল ও ভুয়া। আসমাউল হুসনা জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন মর্মে দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। উক্ত জাল ও ভুয়া সনদধারী আসমাউল হুসনার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে কুমারখালী থানায় মামলা দায়ের পূর্বক অত্র অফিসকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছিলেন। অনুসন্ধানে জানা যায় এনটিআরসিএ হতে মামলা করার নির্দেশনাপত্র পাওয়ার দুই মাস অতিবাহিত হতে চললেও প্রধান শিক্ষক মামলা না করে ঐ শিক্ষিকাকে মামলা হতে রক্ষা করার নানা রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এনটিআরসিএ সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক মোহা. আবুল কাশেম ১৯/১০/২০২১ তারিখে কুসমাবাবি/৬৫/(২)/২০২১ নম্বর স্মারকে আসমাউল হুসনাকে সহকারী গ্রন্থাগারিক দেখিয়ে মামলা হতে অব্যাহতি প্রদানের জন্য আবেদন করেন। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ ২২/১১/২০২১ তারিখে তাজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন-৩) ৩৭.০৫.০০০০.০১০.০৫.০০২.২০.৩৪ নম্বর স্মারকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আসমাউল হুসনা সহকারী গ্রন্থাগারিক হলেও তার জন্য প্রেরিত সনদটি যা সহকারী শিক্ষক (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি) পদের জন্য প্রযোজ্য তা জাল ও ভুয়া মর্মে প্রতীয়মান হয় এবং তা ৩৭.০৫.০০০০.০১০.০৫.০০২.২০.৬০৫ সংখ্যক স্মারকে ৩০/০৯/২০২১ তারিখে এনটিআরসিএ’র ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বর্ণিত অবস্থার প্রেক্ষিতে আসমাউল হুসনাকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের কোনো সুযোগ নেই মর্মে এনটিআরসিএ
কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে। এবিষয়ে আসমাউল হুসনার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে চাকরি করি। আমার শিক্ষক নিবন্ধন সনদ লাগে না। প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম আমার কাছে সরকারিকরণের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করায় আমি না দেওয়াতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ এনটিআরসিএ তে পাঠায়। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম দুর্নীতি,অনিয়ম,জাল জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে আসমাউল হুসনাকে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করতে চেয়েছিলেন। আসমাউল হুসনার স্বামী কুমারখালী মহেন্দ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুর রহিম খান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী আসমাউল হুসনা সহকারী গ্রন্থাগারিক। তার শিক্ষক নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন নেই। প্রধান শিক্ষক মোহাঃ আবুল কাশেম তাকে সহকারী গ্রন্থাগার থেকে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে পদায়নের জন্য আমার কাছে ৩ লক্ষ টাকা দাবি করে। তার পদায়নের জন্য এই টাকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন। এ সংক্রান্ত কাজে প্রধান শিক্ষক মোহাঃ আবুল কাশেম আমার নিকট হতে ৫০ হাজার টাকাও নিয়েছেন। আসমাউল হুসনার বিরুদ্ধে কেন মামলা করছেন না এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। কুমারখালী সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান ভোকেশনাল শাখার পলি রাণী পাত্র নামে একজন শিক্ষিকাকে জাল ও ভুয়া নিবন্ধন সনদে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার মোদক পরস্পর যোগসাজস করে নিয়োগ দেওয়ায় আট বছর পূর্বে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর তার এমপিও বাতিল করে দিয়েছে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও জাল জালিয়াতি করে প্রধান শিক্ষক মোহা. আবুল কাশেম ও সহকারী প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার মোদক সব সময় ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে গেছেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আসমাউল হুসনার বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।