Print Date & Time : 4 May 2025 Sunday 8:32 pm

কুমারখালী সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য!

আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু, কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনিয়ম,স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে এডহক কমিটির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক মোহা. আবুল কাশেম ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, এডহক কমিটির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার মোদক ও ভোকেশনাল শাখার ট্রেড ইন্সট্রাক্টর আব্দুস সাত্তার এর সাথে পরস্পর যোগসাজশে খন্ডকালীন শিক্ষক কর্মচারীর নামে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে এ নিয়োগ দিয়েছেন ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়শিম/শা-১৩/এমপিও-১২/২০০৯(অংশ)/২০৭ নম্বর স্মারকে৪ ফ্রেব্রুয়ারি/২০১০ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান(স্কুল, কলেজ,মাদ্রাসা ও কারিগার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ)যামার্চ/২০১৩ পর্যন্ত সংশোধিত এর শিক্ষক ও কর্মচারীদের- বেতন ভাতাদির সরকারি অংশ প্রদান এবং জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা জারি করে। ৪ ফ্রেব্রুয়ারি/২০১০তারিখে প্রকাশিতএমপিও নীতিমালা অনুযায়ীউক্ত বিদ্যালয়ে প্রাপ্যতা অনুযায়ীপূর্ণাঙ্গ শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত হয়েছেন। ২০১০ সালের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ীএমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন১৫ জন এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন ৪ জন। বিদ্যালয়টিতে ভোকেশনাল শাখায় শিক্ষক রয়েছেন ৮ জন এবংওল্যাবশপ এসিস্ট্যান্ট পদে রয়েছেন ২ জন। ২০১০ এবং ২০১৮ সালের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী জেনারেল ও ভোকেশনাল শাখায় কোনো শিক্ষক কর্মচারীরপদ শূন্য নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়,যেসব উপজেলায় সরকারি স্কুল ও কলেজ নেই সেই সব উপজেলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়একটি স্কুল ও একটি কলেজ সরকারি করণের ঘোষণা দেয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কুমারখালী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের তালিকাভুক্ত হয়।শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৬/০১/২০১৮ তারিখে ৩৭.০০.০০০০.০০০.১৫.০০১.১৭-২৩ নম্বর স্মারকে কুমারখালী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সকল প্রকার নিয়োগ, পদোন্নতি, স্থাবর অস্থাবর সম্পদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।প্রধান শিক্ষক মোহা. আবুল কাশেমও সহকারী প্রধান শিক্ষকসন্তোষ কুমার মোদকওআব্দুস সাত্তার পরস্পরযোগসাজশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্যও করে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ব্যাকডেটে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভুয়া রেজুলেশনতরি,মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়নও ভুয়া নিয়োগ বোর্ড গঠনকরে ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগদিয়েছেন।

মাউশি অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, কোনো মাধ্যমিক বিদ্যায়য়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিতে হলে জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালাঅনুযায়ীপ্যাটার্নভুক্ত শূন্য পদ থাকতে হয়।শূন্য পদ না থাকলে কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-র্মচারী নিয়োগ দেওয়া যায় না।কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকেনিয়োগ দিতে হলে শূন্য পদের বিপরীতে জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট হতে মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন নিতে হয়।মহাপরিচালকের প্রতিনিধি মনোনয়ন পেলে নিয়োগ বোর্ড গঠন করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তুপ্রধান শিক্ষক মোহা. আবুল কাশেম কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। সূত্রে জানা যায়,মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস, সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) এর ৩০/০১/২০১৮ তারিখের ৩৭.০২.০০০০.১০৬.৪৯.০৪৯.১৭-১৮২ নম্বর স্মারকে জাতীয়করণের লক্ষ্যে কুমারখালী পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য উপপরিচালক এবং সহকারী পরিচালক(মাধ্যমিক-সেসিপ) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, খুলনা অঞ্চল, খুলনা কে পত্র দেন।মো. ইমরান আলী,সহকারী পরিচালক(মাধ্যমিক) এবং টি. এম জাকির হোসেন,উপপরিচালক স্বাক্ষরিত০৯/০২/২০১৮ তারিখের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, খুলনা অঞ্চল এর প্রতিবেদনসূত্রে জানা যায়,খন্ডকালীন পদে নিয়োগপ্রাপ্তরাহলেন-(ক) আসমা বেগম মালা,সহকারী শিক্ষক সামাজিক বিজ্ঞান, জন্ম তারিখ- ০৩/০১/১৯৭৯, যোগদানের তারিখ- ০১/০৩/২০০৩ (খ) এস এম আতি বিন বাপ্পী, সহকারী শিক্ষক, ব্যবসায় শিক্ষা, জন্ম তারিখ- ০১/০১/১৯৯০, যোগদানের তারিখ-০৮/০৪/২০১৫৩ (গ) কুতুবুল আলম,সহকারী শিক্ষক সামাজিক বিজ্ঞান, জন্ম তারিখ- ১০/০৮/১৯৮৯, যোগদানের তারিখ- ০৮/০৪/২০১৫ (ঘ) মোছা. মনিরা পারভীন, সহকারী শিক্ষক সামাজিক বিজ্ঞান, জন্ম তারিখ-১০/০১/১৯৯০, যোগদানের তারিখ- ০৮/০৪/২০১৫ (ঙ) মোছা. লুৎফুন নাহার লাবণী,সহকারী শিক্ষক জীববিজ্ঞান, জন্ম তারিখ- ২৪/০৬/১৯৮৫, যোগদানের তারিখ- ২৫/১১/২০১৭ (চ) শুভ্র প্রকাশ দে,সহকারী শিক্ষক আইসিটি, জন্ম তারিখ- ২০/০১/১৯৮৭, যোগদানের তারিখ- ০১/০৩/২০১৬ (চ) শাম্মী আক্তার,সহকারী শিক্ষক কম্পিউটার প্রদর্শক, জন্ম তারিখ- ১০/১১/১৯৯৬, যোগদানের তারিখ-২৫/১১/২০১৭ (জ) বাসনা রাণী কর্মকার,অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, জন্ম তারিখ-২৪/১২/১৯৭৯,যোগদানের তারিখ- ০৮/০৪/২০১৫ (ঝ) মোছা. রূপালী খাতুন,ঝাড়দার/অফিস– সহায়ক,জন্ম তারিখ-২১/০৩/১৯৭৯,যোগদানের তারিখ- ১৪/০২/২০১৭১০,(ঞ) সনজিত কুমার বাঁশফোড়,পরিচ্ছন্নতাকর্মী, জন্ম তারিখ- ১২/০৬/১৯৮৭, যোগদানের তারিখ-১৪/০২/২০১৭,(ট)মো.নাসিম হোসেন, নৈশ প্রহরী, জন্ম তারিখ- ০১/০১/১৯৮৯, যোগদানের তারিখ-১৪/০২/২০১৭ (ঠ) মো. আলমগীর হোসেন,অফিস সহায়ক, জন্ম তারিখ- ১১/০১/১৯৮২, যোগদানের তারিখ-১৬/০৭/২০১৭ (ড) মো. আমিরুল ইসলাম,নিরাপত্তাকর্মী, জন্ম তারিখ-২০/০৬/১৯৯৭, যোগদানের তারিখ-১১/০২/২০১৭। বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান উক্ত প্রতিবেদনের বাইরেও প্রধান শিক্ষক মোহা. আবুল কাশেম আরো কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারীকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছেন।তাদের মধ্যে আছেন মো. সেলিম রেজা বিজ্ঞান শিক্ষক, মো.মাহফুজুর রহমান ধর্মীয় শিক্ষক,মো. শহিদুল ইসলাম রিপন কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর।

এদেরকেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রধান শিক্ষক জাল ও ভুয়াকাগজপত্র তৈরি করে সরকারিকরণের তালিকায় এডহকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে তদবির চালাচ্ছেন বলে বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায় অবৈধ ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এ সব শিক্ষক-কর্মচারীর পদ সৃজন,এডহকে নিয়োগ ও পদায়ন করার জন্য মাউশি অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরনামে প্রত্যেকের কাছ থেকে সাত/আট লক্ষ টাকা প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ভোকেশনাল শাখার ট্রেড ইন্সট্রাক্টর আব্দুস সাত্তার ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা।

খন্ডকালীন হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন নাম প্রকাশনা করার শর্তে জানান, আমাদেরকে সরকারিকরণের তালিকায় নাম ঢুকানোর জন্য ধাপে ধাপে বিভিন্ন কৌশলে টাকা নিয়েছে। তারা আরো জানান, প্রধান শিক্ষক সব সময় আমাদেরকে পদ সৃজন ও এডহকে নিয়োগ পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতে বলছেন।

অবৈধভাবে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। দুদকের একটি বিশেষ সূত্র জানায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জন, কোটি টাকা আত্মসাত ও অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক মোহা. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তদন্ত হয়েছে।