গোফরান পলাশ, কলাপাড়া (পটুয়াখালী): পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেলের জালে ধরা পড়েছে গিনি অ্যাঞ্জেলফিশ বা আফ্রিকান অ্যাঞ্জেলফিশ নামের একটি বিরল প্রজাতির মাছ।
গত ৮ সেপ্টেম্বর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেলে আ. জলিল মাঝির জালে এ মাছটি ধরা পড়ে।
মঙ্গলবার সকালে মাছটি আলীপুর মৎস্য বন্দরে নিয়ে আসলে এটিকে একনজর দেখতে ভিড় জমে যায়। এটি অনেকের কাছে অ্যাকুরিয়াম ফিশ নামেও পরিচিত।
রঙিন ও দৃষ্টিনন্দন এ সামুদ্রিক মাছটি মূলত উষ্ণমন্ডলীয় প্রবাল প্রাচীরের পরিবেশে বাস করে, এমন তথ্য মৎস্য বিশেষজ্ঞদের।
মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Holacanthus africanus। এই মাছটি সাধারণত ‘আফ্রিকান অ্যাঞ্জেলফিশ’ নামে পরিচিত।
মাছটির আকার ১৪ ইঞ্চির মতো। গায়ের গাঢ় সোনালী পটভূমিতে হলুদ অনুভূমিক দাগ, মুখে হালকা হলুদ-সোনালী ‘মাস্ক’ প্যাটার্ন।
জেলে আ. জলিল জানান, সোমবার এফবি মায়ের দোয়া নামের একটি ফিশিং ট্রলারে অন্যান্য মাছের সঙ্গে এ মাছটি ধরা পড়ে।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী জামাল বলেন, এমন মাছ আমার জীবনেও দেখিনি। মাছটি দেখতে অবিকল অ্যাকুরিয়ামে থাকা মাছের মতো। বাসার সবাইকে দেখানোর জন্য মাছটির কয়েকটি ছবি তুলে নিয়েছি।
স্থানীয় বারবিকিউ ও ফ্রাই ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, প্রথম দেখে মাছটিকে আমি বাসায় নিয়ে এসেছি। তবে এ জাতীয় মাছ আমি এই প্রথম দেখলাম। মাছটি খাওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে আমার জানা নেই।
উপকূল পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন (উপরা) যুগ্ন আহবায়ক আবুল হোসেন রাজু বলেন, মাছটি সাধারণত প্রবাল প্রধান, লবণাক্ত, উষ্ণ সমুদ্র অঞ্চলে থাকে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এমন মাছ সচরাচর ধরা পড়ে না। কারণ আমাদের উপকূলীয় অংশ মূলত কাঁদা মাটি, বালুময়, প্রবাল প্রাচীর তেমন নেই। তবে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে আন্দামান সাগর সংলগ্ন, মায়ানমার উপকূলের কাছাকাছি কিছু প্রবাল প্রধান এলাকা আছে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন ও স্রোতের ধরন বদলের কারণে কিছু সামুদ্রিক প্রজাতি তাদের আবাসক্ষেত্র প্রসারিত করছে। এর কারণে হয়তো এই প্রজাতিটি বাংলাদেশের জেলেদের জালে ধরা পড়ছে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘মাছটির বাংলা নাম গিনি‘অ্যাঞ্জেলফিশ। এটি একটি বিরল প্রজাতির মাছ। মাছটি উপকূলে সচরাচর দেখা যায় না। মাছটি গভীর সমুদ্রের। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের সঙ্গে এটি জেলের জালে উঠে এসেছে। এটা জেলেদের জন্য একটি সুখবর। এসব মাছ যত বেশি ধরা পড়বে জেলেরা অর্থনৈতিকভাবে তত বেশি লাভবান হবে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাছটির নির্দিষ্ট ক্রয়মূল্য জানা না গেলেও এটি অন্যান্য মাছের সাথে সৈকতের ফ্রাই ব্যবসায়ী সেলিম জেলের কাছ থেকে ক্রয় করেন বলে জানা গেছে।