এবছরে কুষ্টিয়ার সড়ক মহাসড়কে দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৫৩ জন। সর্বশেষ ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২২জনের। সরেজমিন হাসপাতাল, পুলিশ ও গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে এসব দূর্ঘটনার অধিকাংশই ঘটেছে অবৈধ যানবাহন দ্বারা।
বালুবাহী অবৈধ ড্রাম ট্রাক, নসিমন করিমন আলমসাধু এবং উঠতি বয়সী কিশোর তরুণদের চালিত বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনা এসব দূর্ঘটনার জন্য অন্যতম দায়ী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া খানাখন্দের রাস্তায় যান চালকদের অসতর্কতা ও বেপরোয়া গতির কারনে সড়কে এসব মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সেই সাথে চলতি বছরে সরাসরি হত্যাকান্ডে নিহত হয়েছে ২৫জন। অস্বাভাবিক মৃত্যুর শিকার হয়েছে ১শ ৬২জন।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের লাশকাটা ঘরের সহকারী লক্ষণ লালের দেয়া তথ্যমতে ১৫ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর ১০ দিনেই এক্সিডেন্টের লাশ কেটেছেন ১৩ জনের। এরমধ্যে অবৈধ নসিমনের সাথে মোটর সাইকেল সংঘর্ষে ৮ জন, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশায় ২ শিশুসহ ৩জন, ট্রাকের সাথে নসিমন এবং মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় ২জন। এছাড়া আরও ৪ জনের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন হয়েছে। অর্থাৎ সড়ক মহাসড়কে নিহতদের ৩০% শতাংশ মৃত্যুর তথ্য কোন দাপ্তরিক তালিকায় নথিভুক্ত হচ্ছে না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত ৬দিনে লাইসেন্সহীন চালকের বালুবাহী অবৈধ ড্রাম ট্রাকের ধাক্কায় ৯ জনের মৃত্যু হওয়ার ঘটনায় জেলার আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা লাইসেন্স বিহীন অবৈধ ড্রাম ট্রাকে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এসব অবৈধ মৃত্যু দানব হোতাদের চরম বেপরোয়া হিংস্রতর কাছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নানামুখী উদ্যোগের সুফল পায়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
২৫ ডিসেম্বর রবিবার একদিনের হিসেব মতে, বিকেল ৪টার দিকে সদর উপজেলার হরিপুর গ্রামে অটোরিক্সার ধাক্কায় অন্তর (৩) নামের এক শিশু, বটতৈল-পোড়াদহ সড়কের দোস্তপাড়ায় ইজিবাইক থেকে ছিটকে পড়ে সাথী খাতুন (৩৫) নামের এক গৃহবধু এবং দৌলতপুরের শ্যামনগর গ্রামে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত স্টিয়ারিং গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ইরফান (৩৪) ও আসিফ (২৪) নামে দুই মোটরসাইকেল আরোহী যুবক নিহত হয়। এসব মরদেহের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন আপত্তি না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয় বলে নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।
২৩ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে কুষ্টিয়া শরতলীর যুগিয়ায় মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের সংঘর্ষে নাজিম উদ্দিন (৫২) নামে একজন নিহত হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার খোকসায় নসিমনের ধাক্কায় উজ্জল শেখ (৩৫) নামে একজন বাইসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিক কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের খোকসা বাসস্ট্যান্ডে এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহত উজ্জল শেখ উপজেলার খোকসা ইউনিয়নের মোড়াগাছা ক্লাবমোড় এলাকার হাতেন শেখের ছেলে।
১৮ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের লক্ষীপুর ভাটাপাড়া এলাকায় স্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমন ও বালু বোঝায় ড্রাম ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নছিমন যাত্রী এনামুল হক নামে একজন পান ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। ১৭ ডিসেম্বর, খোকসা উপজেলার কাদিরপুর গ্রামে মোটরসাইকেল ও করিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী সাব্বির হোসেন (২০) ও আসলাম আলী (২৩) গুরুতর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যায়। নিহত সাব্বির হোসেন ও আসলাম আলীর বাড়ি খোকসা উপজেলার সোমসপুর গ্রামে। তারা সম্পর্কে দুই ভাই।
১৫ ডিসেম্বর, কুষ্টিয়ায় পৃথক দু’টি সড়ক দূর্ঘটনায় ইট ভাটার মালিক ইকবাল হোসেন (৩৫) ও শিশু হোসাইন (৩) নামে দু’জনের মৃত্যু হয়। এদিনে দুপুরে কুষ্টিয়া বাইপাস সড়কে ও দৌলতপুরে পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতরা হলেন কুষ্টিয়া সদর কন্দর্পদিয়া গ্রামের মৃত ইউনুস আলীর ছেলে ইকবাল হোসেন (৩৫) এবং দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় বালিরদিয়াড় গ্রামের শফিকের ছেলে হোসাইন(২২)।
সচেতন নাগরিক কমিটি সনাক কুষ্টিয়ার সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম টুকু বলেন,‘২০২২ সালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা হত্যা ও অপমৃত্যুর মতো অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা দুই বছরে কুষ্টিয়ায় করোনাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই মৃত্যু মিছিলের লাগাম ধরতে না পারলে সমাজের স্বাভাবিক ভারসাম্য ব্যহত হবে বলে মনে করি’।
খালিদ সাইফুল / দৈনিক দেশতথ্য / ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

Discussion about this post