এনামুল হক, কুষ্টিয়া:
প্রায় দুইমাস পূর্বে সংশ্লিষ্ট আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেন কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের বিচারক) শেখ গোলাম মাহবুব’কে। এরপর অদ্যবধি বিচারক শুন্য আদালতে সিমাহীন ভোগান্তির অবসানে বিচার কার্যক্রম চালুর বিষয়ে নেই কোন ফলপ্রসু উদ্যোগ। এতে বিচাপ্রার্থীদের হয়রানি ও ভোগান্তির দীর্ঘসূত্রতা বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও আইনজীবীদের।
তারা দাবি করেন, সর্বশেষ ৪বছর পূর্বে এই কোর্টের সাবেক বিচারক মুন্সি মো: মশিয়ার রহমান বদলি হওয়ার পর থেকেই কার্যত: ঝিমিয়ে পড়েছে এই আদালতের বিচার কার্যক্রম।
জরুরী ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ দিয়ে বিদ্যমান বিচারহীনতার বৃত্ত ভাঙ্গার দাবি তাদের।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা চিলমারি চর গ্রামের আঁখি খাতুন (২৫) পারিবারিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে মামলা করেছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের সামনে প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, ‘দিনের পর দিন আদালত নির্ধারিত
তারিখে এসে কোন প্রকার বিচারিক সেবা না পেয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে। আমার বাড়ি থেকে আদালত পর্যন্ত পৌছাতে কেমন দুর্গম প্রতিকুল অবস্থা পার হয়ে আসতে হয় তা তো আপনারা ভালোই জানেন’। আরও একজন বিচারপ্রার্থী খোকসা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা সেনগ্রাম থেকে আগত রোজিনা খাতুন বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া করে বলেন, ‘বিচার প্রার্থনাকরে আদালতে এসে এমন ভোগান্তির শিকার হতে হবে আগে জানলে মামলা করতে আসতাম না। যা হবার হতো। মরার উপরে তো কোন শাস্তি নেই ? সরকার যদি জরুরী ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের বিচারক নিয়োগ দিয়ে আমাদের হয়রানি বন্ধ করুক। আদালতে এসে যেনো ঘুরে যেতে না হয়’।
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের বিচারক) আদালতের বেঞ্চ সহকারী খুরশিদ আলম জানান, ‘গত প্রায় দুই মাস হতে যাচ্ছে আমাদের স্যার না থাকায় স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম চলছে না। বিশেষ কোন জরুরি প্রয়োজন হয়ে জেলা জজ স্যার কারো উপর দায়িত্ব দিয়ে সেটা সম্পন্ন করেন’।
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রায় দুই হতে যাচ্ছে, নারী-শিশু কোর্টের স্যার না থাকায় বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আমাদের কিছুই করার থাকেনা’।
কুষ্টিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতের সরকারি কৌসুলি এ্যাড. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘বিচারক শুন্যতায় বিচার কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। স্বাক্ষি শুনানি হচ্ছেনা। মামলার বাদি-বিবাদীরা নির্ধারিত দিনে আদালতে এসে হত্যাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এতে মক্কেলদের কাছে আমরা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ছি’।
কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড এস এম শাতিল মাহমুদ বলেন, ‘গত জুলাই মাসের ১০ তারিখে মন্ত্রনালয় থেকে যে সব বিচারকদের বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছেন তার মধ্যে কুষ্টিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ
ট্রাইবুনালের বিচারক শেখ গোলাম মাহবুব রয়েছেন। সেই থেকে বিচারক শুন্যতায় এই আদালতের বিচারিক কার্যক্রম একেবারে বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে বিচার বঞ্চিত হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা অন্যদিকে বিচারাধীন মামলার সংখ্যায় পাহাড় জমে
যাচ্ছে। এছাড়া ওই আদালতের মামলায় যারা জামিনযোগ্য সেসব আসামিরা জামিন পাচ্ছেনা। এই আদালতের প্রকৃত পক্ষগণ সবাই নারী ও শিশু তারাও এখন সীমাহীন হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়েছে। সে কারনে অবিলম্বে এই আদালতে বিচারক নিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া বারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহনের অনুরোধ নিয়ে দেখা করে কথা বলেছি

Discussion about this post