নিজস্ব প্রতিবেদক: কুষ্টিয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে ‘কিশোর গ্যাং’। উদ্ভট সব নামে এলাকাভিত্তিক নতুন নতুন সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলছে তারা। এরই মধ্যে এদের সংশ্লিষ্টতায় সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা ভয়াবহ ও বেপরোয়া রূপ নিয়েছে। পাড়া—মহল্লা—বস্তির ছিঁচকে সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে ধনাঢ্য পরিবারের ধনীর দুলাল, এমনকি স্কুল—কলেজের শিক্ষার্থীরাও এসব বাহিনীতে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের হাতে হাতে এখন দেশি অস্ত্রের ছড়াছড়ি;
বেশ কয়েকটি লোমহর্ষক ও দুর্ধর্ষ ঘটনার পর, প্রশাসনের নজরে আসে তারা ! রাজধানী ঢাকাসহ, জেলা-উপজেলা এমনকি মফস্বলেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এসব গ্যাং গ্রুপ ! এদের সবাই যে অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িত , এমনটি নয় ! তবে সদ্য মায়ের আঁচল থেকে বেরুনো উঠতি বয়সী এইসব কিশোররা খুবই আবেগপ্রবণ এবং কৌতুহলী হয়ে থাকে ৷ সবকিছুই তাদের ভালো এবং রঙীন মনে হয় ! নিষিদ্ধের প্রতি যেমন আকর্ষণ থাকে , অন্যদিকে ভালোমন্দের পার্থক্যবোধও এদের থাকে না !এজন্য নিজেদের খুব আকর্ষনীয়, একটু এক্সেপশনালভাবে অন্যদের কাছে উপস্হাপন, সর্বোপরি নিজেদের চরম স্মার্ট করে তোলার প্রানান্তকর চেষ্টা দেখা যায় এই টিন এজারদের মাঝে ! যে কারণে , বন্ধু ,সমবয়সী, সহপাঠীদের সংষ্পর্শে উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং অনুপ্রেরণায় এরা একে অন্যের সাথে খুব সহজেই কানেকটেড হয়ে যাচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে ! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপস ব্যাবহার করছে এরা ! এদের কর্মকান্ডের মধ্যে মুলত এক জায়গায় জড়ো হয়ে আড্ডা দেয়া, হাল ফ্যাশনের চুল দাড়ি কাটা, একই রকম পোশাক পরা, বাইক নিয়ে দল বেঁধে হইহুল্লোড় করা, মাদক সেবন করাসহ কখনো কখনো রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়েও এরা অংশ নিয়ে থাকে ! যেহেতু এরা খুবই আবেগপ্রবণ এবং ডেসপারেড হয়ে থাকে , তাই এদের দ্বারা যে কোন নেতিবাচক কাজও অসম্ভব নয় ! এবং প্রায়ই এক গ্রুপ , অন্য গ্রুপের সাথে দ্বন্দ _সংংঘাত ও সংঘর্ষৈ জড়িয়ে পড়ে!
অতি সাম্প্রততিক সময়ে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে , পুলিশ লাইনস স্কুল, কলকাকলী স্কুল ও কুষ্টিয়া জিলাস্কুলের ছাত্রদের ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের কিশোরদের মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে ছোট ছোট মারামারি হামলার রেশ ধরে সর্বশেষ একদিন জিলা স্কুল , পুলিশ লাইন স্কুলের ছাত্রদের সাথে বিভিন্ন গ্যাং গ্রুপের দু তিনশ বহিরাগত ও অছাত্ররা লাঠিসোটা নিয়ে চড়াও হয় কলকাকলী স্কুলের উপর ! সেখানে একজন ছাত্র সামান্য জখমও হয় ! যদিও ঐসময় স্কূলের পক্ষ থেকে পুলিশ ডাকা হয় এবং ঘটনার প্রায় সাথে সাথেই পুলিশ পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয় ! পরে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল , ও কলকাকলী স্কুলের এক হয়ে জিলা স্কুল ও কলকাকলী স্কুলের কিছু অভিভভাবকদের ডেকে নিয়ে দফায় দফায় মিটিং সিটিং করে অনাকাঙ্খিত এ ঘটনার সমাধান করেন ! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিলা স্কুলের একজন শিক্ষক বলেন , ছাত্রদের এত ঔদ্ধত্য ও নৈতিক অধঃপতন ঘটেছে। কুষ্টিয়াতে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় রেকলেস গ্রুপ বিএসবি গ্রুপ, ড্রাগন বয়েজসহ অদ্ভুত অদ্ভুত নামে অসংখ্য গ্যা গ্রুপ রয়েছে ! যাদের বেশীরভাগই ঝরে পড়া শিক্ষার্থী, অছাত্র, বেকার এব অনেকে বিভিন্ন ছোটখাটো পেশায়ও কাজ করে ! এদের রুটিন কাজের মধ্যে আছে মাদকসেবন, ইভটিজিং ও বাইক নিয়ে রেস করা বা মহড়া দেয়া , এ লাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে স্হানীয় ক্ষমতাসীন কোনো নেতার জন্য আধিপত্য সৃষ্টি করা !
যাহোক , এইসব কিশোর গ্যাং-গ্রুপকে দমন ও নিষ্ক্রিয় করতে পুলিশ প্রশাসন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ! তাদের অনেককে আটকের পর অভিভাবক ডেকে ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে ! প্রশাসনের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই ৷তারপরও এদের দমন বা নিষ্ক্রিয় করার কাজটি এতো সহজ নয় ! এদের যেকোন নেতিবাচক কাজ থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে, সর্বপ্রথমে প্রয়োজন অভিভাবকেরা ,তাদের সন্তানদের প্রতি অধিক সচেতন থাকা, সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখা এবং কড়া নজরদারি করা!
দৈনিক দেশতথ্য//এল//