Print Date & Time : 10 May 2025 Saturday 3:47 am

কুষ্টিয়ায় ভুয়া এনআইডিতে আবারও অন্যের জমি বিক্রি !

 
  কুষ্টিয়ায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাতিলকৃত ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করে আবারও কোটি টাকার জমি রেজিষ্ট্রীর অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত জমির প্রকৃত মালিকের অভিযোগ, কুষ্টিয়া সদর সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের যোগ সাজসেই ওই জালিয়াত চক্রটি কৌশলে ভুয়া আমমোক্তার নামা(পাওয়ার অব এটর্নী) দলিল তৈরি এবং সেটি ব্যবহার করে এমাসের ৯তারিখে জালিয়াতি করে কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস মৌজাস্থ কালিশংকরপুর মার্কাজ মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের জমি হস্তান্তর দলিল সম্পাদন করেছে। তবে অভিযোগটিকে নাকচ করে কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিষ্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ বলেন, অভিযোগ কেউ করতেই পারেন, আমার যোগসাজসে কোন বাতিলকৃত এনআইডি ব্যবহার করে জমি ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তর দলিল সম্পাদন হয়নি। 


কুষ্টিয়া সদর সাব রেজিস্ট্রী অফিসের তথ্য সূত্রে জানা যায়, চলতি নভেম্বর মাসের ৯তারিখে শহরের পূর্ব মজমপুরের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান বিশ্বাসের ছেলে আসাদুর রহমান বাবু যার জাতীয় পরিচিতি নং ৩২৫৪৬৯২৯৪৪, তিনি ৬৫৩৫/২০১৯ নম্বরের একটি ভুয়া আমমোক্তার নামা যা জালিয়াতির অভিযোগে ২০২০ সালের ০৯নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুম থেকে জব্দ করেছে বলে গোয়েন্দা বিভাগের ওই জব্দ তালিকা সূত্রে জানা যায়। সেই একই আমমোক্তার নামা ব্যবহার করে বিক্রেতা বা দাতা সেজে কুষ্টিয়া সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ২টি দলিল নং যথাক্রমে ১২২৪৬ থেকে ১২২৪৭/২২র মাধ্যমে চৌড়হাস মৌজার আরএস খতিয়ান নং ৪৪৯ এবং দাগ নং ৮১৩২ ও ৮১৩৩/৮১৬৯ এর প্রায় ৬৪ শতাংশ জমি হস্তান্তর করেন। এই দুইটি দলিল গ্রহিতা হিসেবে দৌলতপুর উপজেলার হোসেনাবাদ গ্রামের শাহারুল ইসলামের ছেলে মোকাদ্দেস আলী এবং একই উপজেলার কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের কন্যা নুরুন্নাহার খাতুন জমির মূল্য বাবদ দাতা আসাদুর রহমান বাবুকে প্রদান করেন ১ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।


ভুয়া বিক্রেতা বা দাতা কর্তৃক হস্তান্তরিত ওই জমির প্রকৃত ওয়ারিশ বা স্বত্বাধিকার শহরের এনএস রোডের বাসিন্দা মৃত: আব্দুল হাকিমের ছেলে আব্দুল ওয়াদুদের অভিযোগ, ‘এমাসের ৯ তারিখে কুষ্টিয়া সদর সাবরেজিষ্ট্রার অফিসে সম্পাদিত ১২২৪৬ ও ১২২৪৭ নং পৃথক দুটি দলিলের আমমোক্তার দাতা আসাদুর রহমান বাবু জালিয়াতি করে করেছেন। ওই দলিলে আমমোক্তার দাতা হিসেবে যে ৬টি এনআইডি নম্বর ব্যবহৃত হয়েছে; সেগুলি এনআইডি জালিয়াতির অভিযোগে ২০২০ সালের ০৬ জানুয়ারী নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ কর্তৃপক্ষ বাতিল ঘোষনা করে পরিপত্র জারি করেন’। এই জালিয়াতির ঘটনা ফাঁসের সংবাদ ব্যাপক ভাবে জাতীয় ও স্থানীয় পত্র পত্রিকাসহ টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয় এবং দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অথচ সেই একই জালিয়াত চক্র এখনও পর্যন্ত রেজিষ্ট্রি অফিসসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ম্যানেজ করে নির্বিঘেœ এসব করে যাচ্ছে। দুধর্ষ এই জালিয়াত চক্রের তৎপরতায় আমরা পরিবার পরিজন জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে চরম শংকিত’।


কুষ্টিয়া মডেল থানায় এনআইডি জালিয়াতির অভিযোগে করা মামলার এজাহারভুক্ত আসাদুর রহমান বাবু, ‘উচ্চ আদালত থেকে জামিনে এসে গত ৯ নভেম্বর ভুয়া আমমোক্তানামা দলিল ব্যবহার করে আবারও জালিয়াতির মাধ্যমে জমি বিক্রি করেন। এই ঘটনাতে কুষ্টিয়া সদর সাব রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহসহ নেপথ্যে আরও বড় বড় প্রভাবশালী রাঘব বোয়ালের যোগসাজসেই নির্বিঘেœ এসব হচ্ছে বলে অভিযোগ প্রকৃত আব্দুল ওয়াদুদের’।


কুষ্টিয়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক হরুন অর রশিদ জানান, জালিয়াতির অভিযোগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক জব্দকৃত দলিল বিচারিক প্রক্রিয়ায় আদালত হতে অবমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কোন ভাবেই ব্যবহারের সুযোগ নেই। সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের রেকর্ড বিভাগ থেকে জব্দকৃত দলিলের বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবগত থেকেও কিভাবে সেটি আবার ব্যবহার করা হলো তা জানা নেই।


তবে অভিযোগ নাকচ করে কুষ্টিয়া সদর সাব-রেজিষ্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ বলেন, ‘অভিযোগ কেউ করতেই পারেন, আমার যোগসাজসে কোন বাতিলকৃত এনআইডি ব্যবহার করে জমি ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তর দলিল সম্পাদন হয়নি’।


উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর ও চৌড়হাস মৌজার শত কোটি টাকা মূল্যের জমি এনআইডি জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের সংবাদ প্রকাশ হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। শহরের এন এস রোডের বাসিন্দা মৃত: আব্দুল হাকিমের ওয়ারিশ হিসেবে স্ত্রী, একমাত্র পূত্র আব্দুল ওয়াদুদসহ ৪ কণ্যার নাম ব্যবহার করে ভুয়া এনআইডি তৎসহ আমমোক্তার নামা দলিল তৈরির মাধ্যমে জমি বিক্রির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এতে নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এঘটনায় নির্বাচন কমিশনেরর একজন উপ সচিবসহ ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। একই সাথে এনআইডি জালিয়াতির অভিযোগ এনে কুষ্টিয়া মডেল থানায় ১৮ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রকৃত আব্দুল ওয়াদুদ।
এবিষয়ে জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত আসাদুর রহমান বাবুর সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।