এনামুল হক: ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট কুষ্টিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
অনেক আসামি নিয়মিত সরকারি কলেজে ক্লাস নিচ্ছেন এবং অফিস করছেন। কিন্তু তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
এতে মামলার বাদী পক্ষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি ও হামলার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া শহরের কুঠিপাড়া এলাকার বাসিন্দা জান মোহাম্মদ জানু শেখের ছেলে শেখ সবুজ রহমান(৪০) নামের এক ব্যক্তি গত ৫ আগস্ট সাড়ে ৩টার সময় শহরের কোর্টপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। হত্যার উদ্দেশ্যে ছোড়া এই গুলিবর্ষণের হুকুম দাতা হিসেবে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ ১৩ জন শিক্ষকসহ মোট ২১ জনের নাম উল্লেখ করেন। এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ৫/৭ জনের বিরুদ্ধে বাদী সবুজ রহমান কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। অথচ তারা নিয়মিত সরকারি অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ মামলার আসামির হলেন, কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিশির কুমার রায়, সাবেক উপাধ্যক্ষ আনছার হোসেন, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আকলিমা খাতুন, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রোকনুজ্জামান, ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাসেমুজ্জামান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বিকাশ চন্দ্র সাহা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নবীনূর রহমান খান, প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফিরোজ রহমান, গনিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনিরুজ্জমান মন্ডল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলতাফ হোসেন, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রথিন্দ্র নাথ সাহা, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা আফরোজ রেশমা, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নূর ইস সাবা হোমায়রা।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইয়াছির আরাফাত তুষার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদ আহমেদ, সাবেক সহ সভাপতি সজীব শেখ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ান রনি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম সুইট,
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য লাম, ছাত্রলীগের নেতা শশী, আড়ুয়া পাড়ার বাসিন্দা রাকিব।
বাদী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আমি আর. আর. স্ট্রিট রোডের মেহেরজান রেস্টুরেন্টের সামনে পৌছাইলে ১ নম্বর থেকে ১৩ নম্বর আসামীদের (আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদি শিক্ষক) নির্দেশে বাকি আসামীরা আমাকে ধাওয়া করে এবং তাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করতে থাকে। তাদের ছোঁড়া গুলির আঘাতে আমার সারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৩০টি গুলি লাগে। অন্যান্য আসামীরা আমার শরীরে বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ীভাবে মারপিট করিয়া জখম করে। ঘটনাস্থলে আমি জ্ঞান হারাইয়া ফেলি। সেই সময় অজ্ঞাতনামা আন্দোলনরত ছাত্রগন আমাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, কলেজ মোড়, কোর্টপাড়া, কুষ্টিয়াতে নিয়ে ভর্তি করে।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, সেখানে আমি চিকিৎসা গ্রহন করি। পরবর্তীতে আমি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপনা মতে ঔষধ গ্রহন করি। কিন্তু আমার শরীরে গুলি লাগা স্থানে ফুলে যায় এবং প্রচন্ড ব্যাথা করিতে থাকিলে আমি ২০২৪ সালের ৯ নভেম্বর তারিখ হইতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, কুষ্টিয়ায় চিকিৎসা গ্রহন করিতে থাকি। অদ্যবধি আমি শরীরে গুলি নিয়ে চিকিৎসাধীন আছি। আমি দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকায় এবং চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ্য হওয়ায় ঘটনাটি তৎকালীন ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও ছাত্র প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনা করে আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করিতে বিলম্ব হইল।
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের লোকজন বলেন, আন্দোলকারীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিরা নিয়মিত অফিস করছেন। অথচ তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। এ মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
এবিষয়ে মামলার এজাহারভুক্ত কয়েকজন আসামি বলেন, আমরা নিয়মিত অফিস করি। আমরা জামিন নিইনি। আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সঠিক না।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশাররফ হোসেন বলেন, এই মামলা আমি দায়িত্ব পাওয়ার অনেক আগে হয়েছে। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।