রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনে তৎকালীন সময়ে কুষ্টিয়ায় যে ক’জন ভূমিকা রেখেছিলেন তাঁদের অন্যতম ছিলেন মরহুম অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস সাত্তার।তিনি ১৯৫০ সালের মার্চ মাসে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা পেশা ও কুষ্টিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্র ছিলেন। তিনি রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে ২য় শ্রেনীতে বি এ (অনার্স) সহ ১৯৪৬ সালে এম এ পাশ করেন।
১৯৪৭-৪৮ এর ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ঢাকা অবস্থান করেন এবং রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের স্থপতি অধ্যাপক আবুল কাশেম, সাহিত্যিক অধ্যাপক শাহেদ আলীর ঘনিষ্ট জন হিসেবে ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সূত্রে তৎকালীন তমুদ্দুন মজলিসের সাথে তাঁর যোগাযোগ ছিল। ১৯৫০ সালে কুষ্টিয়া আসার পরও তিনি এই আন্দোলনের সাথে সম্পর্ক হীন হননি। ১৯৫১ সালে কুষ্টিয়ার তমুদ্দুন মজলিসের পুর্নাঙ্গ কমিটি সগঠিত হলে তিনি কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি নির্বাচিত হন। (তথ্য সূত্রঃ কুষ্টিয়ার ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস)।

ভাষা আন্দোলনে তার গরুত্বপূর্ন অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৪ সালের ২১ ফেব্র“য়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উদযাপন পরিষদ কর্তৃক তাকে সম্মাননা পত্র ও ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।
তাঁর কর্মময় জীবনে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। সমগ্র কুষ্টিয়ায় ছড়িয়ে কাছে তার অসংখ্য গুনগ্রাহী ছাত্র ছাত্রী। তিনি ১৯২৩ সালের ২ জানুয়ারী নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার অন্তর্গত হাসমারী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। ছাত্র জীবনে জুনিয়র বৃত্তি হতে শুরু করে প্রায় সকল পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৪০ সালে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় তিনি সমগ্র বাংলায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯৪২ সালে প্রথম বিভাগে বৃত্তি লাভ করে আই এ এবং ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে ২য় শ্রেনীতে বি এ (অনার্স) সহ ১৯৪৬ সালে এম এ পাশ করেন। এছাড়াও ২০০৫ সালে জাতীয় শিক্ষক দিবসে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে তাকে কুষ্টিয়া জেলার প্রবীন ও কৃতি শিক্ষকের সম্মাননা পত্র ও ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।
কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি কুষ্টিয়া বড় জামে মসজিদের সেক্রেটারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহ কমিটির সহ সভাপতি, কুষ্টিয়া আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া শহর সমাজ সেবা প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
নিজ জেলা নাটোরে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তালবাড়ীয়া হতে দাউদা বিল, কুচগাড়ী, বোয়ালমারীর নিকট আফরা বিলে প্রায় ৬ মাইল দৈর্ঘ্য খাল খনন হয়েছে। যা বর্তমানে সাত্তার মিয়ার খাল নামে পরিচিত।
(তথ্য সূত্রঃ চলন বিলের ইতিকথা-অধ্যাপক এম এ হামিদ)
তিনি ১৯৮১ সালে কুষ্টিয়া সরকারী গার্লস কলেজ হতে অবসর গ্রহন করেন। অবসর গ্রহনের পর কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলার হালসা আদর্শ মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির এম পি ও ভুক্তি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ২৯/০১/২০০৬ তারিখে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//ফেব্রুয়ারী ২০//২০২২//

Discussion about this post