কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: জন্ম দান করেই নবজাতক সন্তানকে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যান পাষন্ড এক মা। জন্মের পর গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওই নবজাতক ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের নবজাতকদের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রে (স্ক্যানু) ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়া ওই নবজাতকের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে। তিনি এসিল্যান্ড হিসাবে সিলেট বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। ১০ বছর বিবাহিত জীবনে ওই দম্পতির কোন সন্তান হয়নি। চিকিৎসকরা ওই দম্পতিকে জানিয়েছেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাদের আর কোনো দিন সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১০ টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ সাইদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক জানান, নবজাতক ওই শিশুটির দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ১৪ জন দম্পতি আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন করেন। আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারি- বেসরকারি চাকরিজীবী,ব্যবসায়ী, প্রবাসী,চিকিৎসক,প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ছিলেন। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই ও চুলচেরা বিশ্লেষণের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভা আহবান করা হয়। সভায় ১৮ জন সদস্যের প্রত্যেকেই উপস্থিত ছিলেন। আবেদনগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে শিশুটির সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে শিশু আইন ২০১৩ সংশোধিত ২০১৮ (৮৬) ধারা অনুযায়ী সর্ব সম্মতিক্রমে আবেদনকারী দম্পতিদের মধ্যে একজন দম্পতির হাতে শিশুটির দায়িত্বভার অর্পণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জেলা প্রশাসক জানান, দু-একদিনের মধ্যেই শিশুটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই দম্পতির হাতে হস্তান্তর করা হবে। মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক আরিফুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) আনম আবুজর গিফারী, এনডিসি শাহেদ আরমান, কুষ্টিয়ার সমাজসেবা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মুরাদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.এম এ মোমেন জানান, শিশুটি বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছে।
প্রসঙ্গত গত বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভোরের দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য এক নারী আসেন। হাসপাতালের নিবন্ধন বইতে তিনি নিজের নাম রিমি (২৬), পিতা/স্বামীর নাম মোমিন, কবুরহাট, জগতি, কুষ্টিয়া বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মাহাফুজুর রহমানকে জানান, তার পেটে ব্যথা হচ্ছে। চিকিৎসক ওই নারী অন্ত:সত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তির নির্দেশনা দেন। কিন্তু ওই নারী গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তি হতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই চিকিৎসক তাকে সার্জারী ওয়ার্ডে ভর্তির নির্দেশনা প্রদান করেন। পরবর্তীতে সকাল ৮ টার দিকে তার তীব্র আকারে পেটে ব্যথা শুরু হলে তাকে গাইনী বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই নারী নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জন্য দেন। কিছুক্ষণ পর ওই নারীকে ওয়ার্ডে পাঠানো হলে একপর্যায়ে তিনি সদ্য ভুমিষ্ট নবজাতক সন্তানকে ফেলে রেখে কৌশলে পালিয়ে যান। সেই থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শিশুটিকে নবজাতকদের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি রাখা হয়েছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে মোহাম্মদ আলী। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, নবজাতক শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি সানিধ্য ধুবই জরুরি। যে কারণে শিশুটির মধ্যে যাতে কোন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা না হয় সেজন্যই মূলত হাসপাতালের ওই নিবিড় বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। ওই পরিচর্যা কেন্দ্রের যখন যে নার্স ডিউটিতে রয়েছেন তিনিই পরিচর্যাসহ দেখভাল করছেন। শিশুটির ওজন প্রায় তিন পাউন্ড। শিশুটিকে জন্ম দিয়ে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//১৭ সেপ্টেম্বর-২০২২

Discussion about this post