কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে গণধোলাই দিয়েছে তার প্রতিপক্ষ। আধিপত্য বিস্তার ও কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জের ধরে গণপিটুনী হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ পিটিআই রোডস্থ একটি বাসায় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অবস্থান করছিল। এ সময় শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক হাসিব কোরাইশি, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তর, ছাত্রলীগ নেতা অভি, সজল,সজিবসহ তাদের প্রায় ৪০ থেকে ৫০জন ওই বাসায় গিয়ে চ্যালেঞ্জকে খুঁজতে থাকে। চ্যালেঞ্জ ওই বাসার টয়লেটের ফলস ছাদে গিয়ে লুকায়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মিরা সেখানে উঠে তাকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনে। এরপর তারা পেটাতে পেটাতে সামনের সড়কে নিয়ে এসে গণপিটুনী দেয়।
এসময় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে পিটিআই রোডে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপির বাসার সামনে নিয়ে আসে। পুলিশের সামনেই হামলাকারীরা তাঁকে জুতা-স্যান্ডেল দিয়ে মারপিট করে। পুলিশ ভ্যানে তোলার পরও তাঁকে মারপিট করা হয়। এ সময় পুলিশকে নিরব দেখা গেছে। ঘটনার সময় জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিকে ছাত্রলীগ কর্মিদের নিবৃত করতে দেখা যায়।
এরপর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে তিনি চিকিৎসা না নিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেসবুক লাইভে আসেন। তিনি বলেন, এই হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপিকে জানিয়েছি। তারা যদি বিচার না করে তাহলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
এরপর তিনি খালি গায়ে কয়েকজন কর্মিকে সাথে নিয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর মুর্যালে যান। এসময় তার মুখ রক্তাক্ত ছিল। কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছিল।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তর জানান, পিটিআই রোডের একটি বাড়িতে সে মেয়ে নিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল। এমন সময় স্থানীয় জনতা হাফিজকে আটক করে এবং গণধোলাই দেয়।
ওই বাড়ির মালিক এক নারী বলেন, চ্যালেঞ্জ আমাদের আত্মীয়। দুপুরের দিকে রস আমাদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার পর বসে গল্প করছিল। এ সময় বাইরে থেকে ছাত্রলীগের অনেক ছেলে-পেলে লাঠি সোটা হাতে বাসার মধ্যে ঢুকে পড়ে। পরে টয়লেটের ফলস ছাদে পালানো অবস্থায় তাকে মারতে মারতে নিয়ে যায়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা, কুষ্টিয়া শহর ও সরকারি কলেজসহ ছাত্রলীগের ৫ টি ইউনিটের কমিটি গঠন নিয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর আগেও তার উপর হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। দুই সপ্তাহ আগেও শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সে সময় তিনি পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন।
গুরুতর আহত শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে মূলত বিরোধ তৈরি হয়েছে। আমি ঢাকায় ছিলাম। কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়া এসেছি। দুপুরে জেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেকার অফিসে দেখা করতে যায়। সেখান থেকে বের হলে কয়েকজন যুবক আমাকে রেকি করতে থাকে। সেখান থেকে পিটিআই রোডে আমার খালার বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে আক্রমন করে জেলা ও শহর ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মি।
আমি জামায়াত-ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি এটা কি আমার দোষ? তারা আমাকে বেদম মেরেছে। দল ক্ষমতায় থাকতে এই প্রতিদান পেলাম। আমি আমার নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ ভাইয়ের কাছে বিচার দিয়েছি। করোনাকালিন আমি ও আমার ছেলেরা মানুষের জন্য কাজ করে দলের কাছ থেকে এই প্রতিদান পেলাম। আমি বিচার চাই, বিচার চাই।
চ্যালেঞ্জ অভিযোগ করে বলেন, কমিটি নিয়ে নোংরামি চলছে, তারা পরিকল্পিতভাবে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশে এই হামলা চালিয়েছে। চাকু দিয়ে আমাকে জবাই করতে চাই তারা। তারা বলে, তোর কোন বাপ বাঁচাতে পারবে না? জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু ও অজয় সুরেকা বাপ তোকে বাঁচাতে পারবে না।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে ঘটনার বিস্তারিত কোন কিছু এখনো জানি না। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আজগর আলী বলেন, এটা একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। গুটি কয়েক নেতা তাদের ব্যাক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রকশ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলা চালিয়েছে। এটা অবশ্যই দু:খজনক। কারা দলের মধ্যে ঢুকে এ সমস্ত কাজ করছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খাঁন জানান, হাফিজ একটি বাসায় দুপুরে অবস্থান করছিল। এসময় স্থানীয় জনতা ওই বাড়িতে ঢুকে হাফিজের ওপর হামলা করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ’র বিরুদ্ধে জেলা ছাত্রলীগের এক নারী নেত্রী কুপ্রস্তাবসহ দেওয়াসহ উত্যক্ত করার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন। এ ঘটনা সে সময় কুষ্টিয়াসহ দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
বা//দৈনিক দেশতথ্য// ২৩ নভেম্বর//

Discussion about this post