নাসিং ইনষ্টিটিউট ইনচার্জ কাঞ্চল মালার বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বিস্তর অভিযোগ তুলেছে ওই প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ নিয়ে ইনচার্জের অপসারণের দাবিতে কয়েক দফা আন্দোলন ও বিক্ষোভ করে তারা।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, কম্পিউটার ল্যাবের এসি খুলে নিয়ে গেছে, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব পরিত্যাক্ত প্রায়, অন্যান্য ল্যাবগুলোও করুণ দশায়।ব্যবহারিক ক্লাস সর্বশেষ কবে হয়েছে স্মরণে নেই তাঁদের। ৩ বছরের শিক্ষাজীবনে তাঁরা এক-দুই বার গ্রন্থাগারে ধরেশের ভাগ্যলাভ করে, হিসাবরক্ষক ও অফিস সহকারীর কক্ষে বিলাসবহুল এসি জাতীয় ও বিভিন্ন সচেতনামূলক দিবসে চাঁদা আদায়, নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, খোরাক বাবদ উদ্বৃত্ত টাকা ফেরৎ না দেওয়া এবং স্নাতক পড়ুয়া ছেলে ও পরিবারসহ চতুর্থ তলার মেয়েদের দু’টো কক্ষ দখলে নিয়ে বসবাস ও শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ করে ইনচার্জ কাঞ্চন মালা।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর রুমে দেখা গেলো বিলাসবহুল এসি। মিললো নিষিদ্ধ গাইড বই বানিজ্যের নমুনা। নিউরন পাবলিকেশন্সের নতুন গাইড বইয়ের স্তুপ পড়ে আছে ইনচার্জ কাঞ্চনমালার কক্ষেই। এছাড়াও ইনচার্জ কাঞ্চনমালা তাঁর স্বামী ও স্নাতক পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে চতুর্থ তলার দু’টো কক্ষ দখল করে বসবাস করে।ল্যাবের এসিগুলো খুলে তিনি তার ওই শোবার ঘরে লাগিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ব্যবহারিক ক্লাস ঠিকমতো হয়না।লাইব্রেরি রুমে করে গিয়েছি মনে নাই। আমাদের কাছ থেকে জাতীয় এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক দিবসে জনপ্রতি ১৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হয়।৩য় বর্ষের গাইড বই বাবদ মাথাপিছু নেওয়া হয়েছে ১৩০০ টাকা।ম্যামের ছেলে বিড়ি-সিগারেট খেয়ে দুর্গন্ধ ঢাকতে মেয়েদের রুমে গিয়ে পারফিউম চাই।বিভিন্ন সময় বন্ধুদেরও নিয়ে আসে।
ইনচার্জ ম্যাম আমাদের বিভিন্ন সময়ে ফেল করানোর হুমকি দেয়। বাবা-মা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। কানধরে উঠবস করায়, মারধর করে। আমাদের নিম্নমানের খাবার দেয়।খাবারের কোনো রুটিন অনুসরণ করে না।খিচুড়ী আর নিরামিষই চলে সবসময়। কালেভদ্রে মাছ দিলেও তার আকার খুবই ছোট।এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) ঢাকা থেকে নিয়মিত পরিদর্শনে যে ম্যাম ইনষ্টিটিউট পরিদর্শনে এসেছেন তিনিও প্রথমে আমাদের সাথে কোন কথা বলেননি। আমরা বলার চেষ্টা করলেও সুযোগ দেননি। শনিবারে আমাদের আন্দোলনের চাপে সামান্য কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। তবুও ইনচার্জ ম্যামের উপস্থিতিতেই। সেসময় ইনচার্জ ম্যামের বিরুদ্ধে আমাদের আনিত অভিযোগকে তিনি অতি স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন। আমরা ইনচার্জ ম্যামের অপসারণের জোর দাবি জানাচ্ছি। ঢাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিকাল ৩ টার দিকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (শিক্ষা ও পিএমআইএস) রাহেলা আক্তার চৌধুরী নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী ইনষ্টিটিউট পরিদর্শনে আসেন কুষ্টিয়ায়। খবর সেয়ে কুষ্টিয়ার স্থানীয় ও জাতীয় গনমাধ্যমের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি ওই পরিদর্শন কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করলে দীর্ঘ ৪ ঘন্টা অপেক্ষা করেও অনুমতি মেলেনি। মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া দেননি। এছাড়াও নিয়মিত পরিদর্শনে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাঁদের সমস্যা ও অভিযোগের বিষয়ে জানার কথা থাকলেও দুই দিনধরে অভিযুক্ত কাঞ্চনমালার সর্বক্ষণিক সহচার্যে থেকে শিক্ষার্থীদের কোন অভিযোগই শোনেননি তিনি। পরে শনিবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পরিদর্শক রাহেলা আক্তার চৌধুরী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এসময় কাঞ্চন মালার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগকে অতি স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে ইনষ্টিটিউটে অবস্থানরত পরিদর্শক রাহেলা আক্তার চৌধুরীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উপ-সচিব পরিচালক (প্রশাসন) নাসির উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে রাহেলা আক্তার চৌধুরীর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে অনাগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবেনা কেনো? যে কোন বিষয় নিয়েই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা যায়। তিনি বিষয়টি নিয়ে উপ-সচিব পরিচালক (শিক্ষা ও শৃঙ্খলা) মোঃ রশিদুল মান্নাফ কবীরের সাথে কথা বলতে বলেন।
রশিদুল মান্নাফ কবীর (শিক্ষা ও শৃঙ্খলা) মুঠোফোনে বলেন, রাহেলা আক্তার চৌধুরী কোন তদন্তে যায়নি। তিনি নিয়মিত রুটিনে গিয়েছেন। এছাড়াও তাঁর (রাহেলা) সাথে সাংবাদিকদের কথা বলার জন্য আমি কোনপ্রকার অনুমতি দেয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ না শোনার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তিনি শুনবেন এবং সেই অভিযোগ নিয়ে এখানে আসলেই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এবিষয়ে ইনচার্জ কাঞ্চনমালা বলেন, ল্যাবের এসি খুলে আমার শোবার ঘরে আর অতিথি থাকার ঘরে লাগিয়েছি। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর রুমে এসি থাকার কোনো নিয়ম নেই। পরিবারসহ অবস্থান করার বিষয়ে বলেন, আমার ছেলে এখানে থাকেন না, মাঝেমধ্যে আসেন।
কাঞ্চন মালা বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নার্সিং ইনস্টিটিউটে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এতে অনিয়ম তান্ত্রিক ভাবে চলা এখানকার কিছু মানুষের অসুবিধা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এখানকার টিচার জোবেদা খাতুন, রওনক জাহান, শামীমা নাসরিন এর সঠিক সময়ে আসার নির্দেশ দেয় এবং তারা অফিস সময়ে অন্য বেসরকারি প্রাইভেট নাসিং ইনষ্টিটিউটে গিয়ে ক্লাস নিতেন সেটাও বন্ধ করে সরকারী নিয়ম মানতে বাধ্য করি। এ ছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী আছে যারা নিয়ম মানতে চায় না তাদেরও সঠিক নিয়ম কানন মেনে চলতে বাধা করি। এটাই আমার অপরাধ। আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ তুলে ওই টিচাররা কয়েকজন শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিথ্যাচার করতে থাকে এবং তাদের দিয়ে আন্দোলন-বিক্ষোভ করান।তিনি এই নার্সিং ইনষ্টিটিউটের প্রকৃত সত্য তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশের জন্য অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়া নার্সিং ইনষ্টিটিউটের ইনচার্জ কাঞ্চন মালার অপসারণের দাবিতে গত ১২ জুন দুপুর ১টার দিকে ইনষ্টিটিউটের সামনে তুমুল আন্দোলন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//২০ জুন-২০২২//

Discussion about this post