এক ছাত্রীর গায়ে কাঁদা পড়ার জেরে হামলা ভাংচুর। হল বন্ধ করায় ছাত্ররা চরম বিপাকে। চার ছাত্র হাসপাতালে। হামলা ও ভাংচুরের হোতা ছা্ত্রলীগ নেতা
মঙ্গলবার (২১ জুন/২০২২) দুপুর ১ টায় চলছে তুমুল বৃষ্টি। এর মধ্যে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মাঠে শিক্ষার্থীরা মাঠে ফুটবল খে তে ছিল। এসময় তাদের বল পড়ে কাদার উপর। তাতে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর গায়ে ছিটকে পড়া সেই কাদা। এরপর ওই ছাত্রীর ৫ম সেমিষ্টারে পড়ুয়া বন্ধুর সঙ্গীয় সহপাঠীদের হামলায় লালন শাহ হোষ্টেলে শুরু হয় ব্যাপক ভাংচুর ও মারধর।
এঘটনায় ইন্সস্টিটিউট চত্বরে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষনিক একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং ডেকে ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মীর মশাররফ হোসেন ও লালন শাহ ছাত্র হোস্টেল এবং তাপসী রাবেয়া ছাত্রী হোস্টেল বন্ধের ঘোষনা জারী করে। এরপর মঙ্গলবার সন্ধার ৬টার মধ্যে হোস্টেল খালী করার হুকুমজারী করে কর্তৃপক্ষ।
বৈরি আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে চরম বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে দুর দুরান্ত থেকে আসা ছাত্রীরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ে।

মঙ্গলবার দুপুর ১ টার সময় কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এ ঘটনা ঘটে। হামলা ও মারধরের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীরা হলো, আসিফ (২০), মাহি (১৮), অন্তর(২২), সেতু (২২) সহ আরো অনেকে। তারা কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা শংকামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্র জানায়, লালন শাহ হোস্টেলের শিক্ষার্থীদেও ফুটবলের কাদা ৫ম পর্বে পড়ুয়া মীর মোশাররফ হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থী তার ১ম পর্বে পড়ুয়া ছাত্রী বন্ধুর গায়ে পড়ে। এ নিয়ে লালন শাহ হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী তার হোস্টেলের নেতা ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এআর আনাস পারভেজের কাছে নালিশ করে। এরপর ওই ছাত্রলীগ নেতা তার বাহিনীসহ লালন শাহ হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এসময় আক্রান্ত কক্ষগুলির জানালা দরজা আসবাবপত্রসহ মূল্যবান জিনিষপত্র ভাংচুর করে। ওই সময় রুমে যাদের পেয়েছে তাদের উপরও তারা হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে।
লালনশাহ হোস্টেলের বাসিন্দা রাকিবের অভিযোগ, আমরা মাঠে ফুটবল খেলার সময় এক মেয়ে শিক্ষার্থীর গায়ে কাঁদা লাগায় ওই শিক্ষার্থীর বন্ধুর তর্কাতর্কি হয়। ওই ছেলে এই বিষয়টি ছাত্রলীগের সভাপতি আনাসের কাছে নালিশ দেয়ায় ওরা আমাদের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এই আনাস পারভেজ আরও এক বছর আগেই তার কোর্স সম্পন্ন করলেও এখনও সে প্রভাব খাটিয়ে হোস্টেলে অবস্থান করে। এখানে থেকেই সে নানা ধরণের অপরাধ কর্মকান্ডসহ ইতোপূর্বেও অসংখ্যবার শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে।
৫র্ম পর্ব কম্পিউটারের শফিকুল বলেন, আজকে ক্যাম্পাসে আনাস না থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না। অনেকদিন ধরেই এরকম একাধিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এতে কলেজের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ওর জন্যেই আজকে সকল শির্ক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করার মতো ভোগান্তিতে পড়তে হলো।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা আনাস পারভেজ বলেন, ‘ঘটনা শুনার পর সিকিউরিটি ইনচার্জ রফি উদ্দিন বাবলুকে মোবাইলে জানায়। তিনিই আমাকে ওখানে যেতে বলেন। আমি সেখানে গেলে ওরাই আমার উপর হামলা চালায়।’ আমার চুড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে গেছে ঠিকই; আমার রেজাল্ট না হওয়া পর্যন্ত হোষ্টেলে আমার সিট বৈধ ভাবেই বরাদ্দ আছে।
কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সস্টিটিউটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা রবিউদ্দিন বাবলুর ০১৭১২১৭২৩২৯ একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। কলরিসিভের অনুরোধ জানিয়ে খুদে বার্তা দিলেও তিনি কোন সাড়া দেননি।
কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সষ্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনির হোসেনের মুঠোফোন নং ০১৫৫৬৩০৪৬৮ তে কল করে এবং খুদেবার্তা দিয়েও তিনি দেশতথ্য প্রতিবেদককে কোন সাড়া দেননি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি সাব্বিরুল আলম জানান, ‘মঙ্গলবার দুপুরে পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হামলা ভাংচুর মারধর এবং উত্তেজিত পরিস্থিতির সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেছি। সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্তৃপক্ষের হলত্যাগের নির্দেশ থাকায় সবাই হল ছেড়ে বাড়ি চলে গেছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ২১,২০২২//

Discussion about this post