নিজস্ব প্রতিবেদক : কুষ্টিয়াতে ধান, পাট, গম সহ নানা ধরনের কৃষি পণ্য উৎপাদনের ব্যাপক সুনাম এর পাশাপাশি সবজি উৎপাদনেও ব্যাপক সুনাম রয়েছে।
তবে সবজির খুচরা বাজারে আগুন থাকলেও উৎপাদিত সবজির দাম পাচ্ছে না কৃষকেরা। অভিযোগ উঠেছে পাইকারী থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত নানা সবজির দামের পার্থক্য কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
কুষ্টিয়ার উৎপাদিত সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে বিক্রি হয়। আবহাওয়া এবং মাটির গুণা-গুণের কারনে প্রায় সব ধরনের সবজি এই এলাকায় আবাদ হয়। কিন্তু উৎপাদিত সবজির সঠিক দাম না পেয়ে হতাশ এখানকার কৃষকেরা। তবে পাইকারী বাজার থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরের কুষ্টিয়ার খুচরা বাজারে সবজির দামের পার্থক্য দেখা যায় কেজিতে ২৫/৩০ টাকা করে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারন ক্রেতা, আর মাঠ পর্যায়ের পণ্য উৎপাদন করে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না কৃষকরা। তাদের দাবি বাজারে সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে বাজারের এই অস্থিরতা।
কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকার মাঠের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের উৎপাদিত ফসল আড়তে নিলে দামই দিতে চায়না আড়ত দাররা। যার ফলে লোকসান গুনতে গুনতে সবজি আবাদের অনিহা প্রকাশ করছেন তারা। কিন্তু সেই সবজি আবার খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এতে কৃষকদের মাথায় হাত উঠলে লাভবান হচ্ছে ফড়িয়া ব্যাপারিরা।
আর সাধারন ক্রেতারা ওই সব কাঁচা সবজি কিনতে গিয়ে দিশেহারা অবস্থায় পরছে।
সরেজমিন দেখাযায়, কুষ্টিয়ার উজান গ্রাম পাইকারী বাজারে কৃষকরা যে বেগুন প্রকার ভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে সেই বেগুন কুষ্টিয়ার বিভিন্ন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। ৪০ টাকার কাঁচা মরিচ ৭০ টাকায়, ১০ টাকার কচু ২০ টাকায়, ৫ টাকার পেঁপে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। উজান গ্রাম থেকে কুষ্টিয়া শহরের দূরত্ব মাত্র ৯ কিলোমিটার আর এই ৯ কিলোমিটার দূরেই কেজি প্রতি বিভিন্ন ধরনের সবজির দামের পার্থক্য কেজিতে ২৫/৩০ টাকা। আবার এ নিয়ে কথা বলতে গেলে গণমাধ্যম কর্মীদের সঠিক তথ্য ও দিতে চান না ব্যাপারিরা।
তবে ক্রেতারা বলছে মাঠ থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত সঠিক ভাবে মনিটরিং না করার কারনেই বাজারের এই অস্থিরতা। বাজার নিয়ন্ত্রনে সরকারের সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানান তারা।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড়িয়া গ্রামের বেগুন চাষী রাকিবুল ইসলাম জানান, আমার ক্ষেতের বেগুন একবারে উঠিয়ে কুষ্টিয়ার ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করেছি প্রতি কেজি ২৪ টাকা দরে। কিন্তু সেই একই মানের বেগুন আমার গ্রামের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। আমরা যারা উৎপাদন করছি সেখানে আমরাই মূল্য পাচ্ছিনা বলেও জানান তিনি।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার সবজি ব্যাপারী রহমত আলী সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা যে দামে সবজি মাঠ থেকে কিনি তার থেকে দুই বা তিন টাকা লাভে বিক্রি করে থাকি পাইকারী বা খুচরা ব্যাপারীদের কাছে।
এমন পরিস্থিতিতে কুষ্টিয়ার মিরপুরের খুচরা সবজি বিক্রেতা নাঈম খন্দকার বলছেন, আমরা ব্যাপারী এবং পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যে দামে সবজি কিনি সেই দাম অনুযায়ী বিক্রি করি। আর এই কারসাজি ব্যাপারি, আড়তদার এবং পাইকারি ব্যাপারীরা করে থাকে।
এদিকে কুষ্টিয়া জেলা সিনিয়র বিপণন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেছেন, কৃষি পণ্য উৎপাদিত কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত বিক্রয়ের মাঝে যে মূল্যের ফাঁক রয়েছে তা আগের থেকে অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে। মূলত ব্যাপারী, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা এই সুযোগ নিয়ে থাকে।
তবে আমাদের নিয়মিত বাজার মনিটরিং এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত আছে। আশা করছি খুব দ্রæতই যেটুকু সমস্যা আছে তা সমাধান হয়ে যাবে।

Print Date & Time : 8 June 2025 Sunday 2:21 pm