ভাতার টাকা না পাওয়ার অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কুিষ্টয়ার দৌলতপুর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিন সদস্যের তদন্ত টিম আন্দোলনে অংশ নেয়া ১৭ জনের পৃথক পৃথক সাক্ষাতকার নিয়ে চুড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন সমাজসেবা অধিদপ্তরে জমা দিয়েছেন ২৭ ফেব্রুয়ারী ।
গত ২রা ফেব্রুয়ারী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সমাজ সেবা অফিসের সাড়ে ৮ হাজার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর প্রায় আড়াই কোটি টাকা গায়েবের অভিযোগ এনে ১৭ জন ভাতাভোগি ভাতার টাকার দাবিতে গণভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এরই প্রেক্ষিতে সমাজ সেবা অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিম প্রেরন করেন। তদন্ত টিমের সদস্যরা হলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেবব্রত দাস, সমাজ সেবা অফিসার রায়হান কবীর ও বিভাগীয় সমাজ সেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক সমির মল্লিক।
গত ৫ ফেব্রæয়ারী তদন্ত টিম আন্দোলনে অংশ নেয়া মো: তোফজ্জেল হোসেন,মোছা: গরবী খাতুন, মো: পলান শেখ,মোছা: নাসিমা খাতুন, মোছা: রোকিয়া খাতুন, মোছা: জোসনা খাতুন, মোছা: নাজমা খাতুন, মো: সলিমউদ্দিন, মোছা: গনজেরা খাতুন, মোছা: জানেরা খাতুন, মোছা: সুর্যজান খাতুন, মোছা: শাহারা খাতুন,মো: নওয়াব আলী,মো: আব্দুস সাত্তার, মোছা: মরজিনা খাতুন, মোছা: নছিমন নেছা ও মোছা: মিতু খাতুনের সাক্ষাতকার গ্রহন করেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে তদন্ত কমিটির জনৈক সদস্য জানান ভাতার দাবিতে আন্দোলনকারী ১৭ জনই স্বিকার করেছেন তারা নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন । ভাতা পাওয়ার পরও কেন তারা আন্দোলনে অংশ নিলেন এ প্রশ্নের জবাবে ১৭ জনই জানিয়েছেন দৌলতপুরের আতাউল মাষ্টারের ছেলে তন্ময় হক তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে ঢাকাতে নিয়ে যেয়ে আন্দোলন করান।
এ ব্যাপারে আন্দোলনকারীরা তদন্ত টিমের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন । তদন্ত প্রতিবেদনে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নকারী তন্ময় হক এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
দৌলতপুর উপজেলার ১০ নং ওয়ার্ড যুবলীগের প্রচার সম্পাদক পরিচয় দানকারী তন্ময় হকের সাথে মোবাইলে ফোন করে তিনি কেন ১৭ জন ভাতাভোগিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করালেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন আমি অসহায় ও সমস্যা গ্রস্থ মানুষের জন্য কাজ করে আত্মতৃপ্তি পায়। তাই তাদের নিয়ে আন্দোলন করেছি।
ভাতারদাবিতে আন্দোলনে অংশ নেয়া দৌলতপুরের মহররম আলীর মেয়ে নাছিমা খাতুন জানান ভাতাপ্রাপ্তি নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই, আমি নিয়মিত ভাতা পাচ্ছি । তন্ময় হক আমাকে ভুল বুঝিয়ে ঢাকায় নিয়ে যায় । আমি ক্ষমা চাই ।
একই উপজেলার আপেল মন্ডলের ছেলে নওয়াব আলী যুবলীগের পরিচয় দানকারী তন্ময় হকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করে বলেন ভুল বুঝানোর জন্য আমি তন্ময় হকের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশার বলেন টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি নিছক সাজানো নাটক। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি তন্ময় নামে এক যুবক নিজেকে আওয়ামীলীগের কর্মী পরিচয়ে ১৭ জন ভাতাভোগিকে নিয়ে গণভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন । যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তারা সকলেই নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন। রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য একটি কুচক্রি মহলের ইন্ধনে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তন্ম্য় নামের ্ওই যুবক সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ।
বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। আমি দৌলতপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত করার নির্দেশ দিই। তিনি যে, প্রতিবেদন দিয়েছেন তাতে আন্দোলনকারী ১৭ জনই ভাতা পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সংসদ সদস্য আরো বলেন তন্ময় নামের ওই যুবকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছেন বলে আমি জেনেছি ।
এ ব্যাপারে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা সমাজসেবা অধিদপ্তর ঢাকার উপ-পরিচালক দেবব্রত দাস তদন্তের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি না হলেও তিনি বলেন, আন্দোলনকারীরা নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন। আন্দোলনটা ছিল উদ্দেশ্যমুলক ।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ৮ মার্চ ২০২৩