কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় তিন যুগ আগে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের দুপাশের সাড়ে ৩৫ মাইল পতিত জমিতে নিমতলা সুফলভোগী সমবায় সমিতির সদস্যরা রোপণ করেন। বিভিন্ন ধরনের সেসব গাছ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করেন তারা। কোটি টাকা মূল্যের গাছের ভাগ সমিতিকে না দিয়ে আদালতের আদেশ অমান্য করে ইচ্ছেমতো টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করেছেন আজাদ খান।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়ক প্রশস্ত করতে সড়কের গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রির নোটিশ নিয়ে সমিতির সাধারন সম্পাদক খন্দকার টিপু সুলতান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিভাগের হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানির পর ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ১৪ মে পর্যন্ত গাছ বিক্রির সকল কার্যক্রম স্থগিত প্রদান করেন হাইকোর্ট।
পরবর্তীতে আদালতের আদেশ অমান্য করে রাজশাহী লক্ষীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী বৃক্ষ পালনবীদ বিপ্লব কুণ্ড হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি গাছ কাটার কার্যাদেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে সড়ক বিভাগ প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ করে। দীর্ঘ শুনানির পর সমিতির সম্পৃক্ত উপকারভোগীরা গাছের শতকরা ৬৫ ভাগ গাছের অংশ পাবেন এবং বাকী ৩৫ ভাগ সরকারি তহবিলে জমা হবে বলে রায় দেন।
তবে আদালতের আদেশ অমান্য করে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। বর্তমানে সেসব গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের রায় অমান্য করে গাছ বিক্রি করেছে সওজ প্রকৌশলী সেলিম আজাদ।
নিমতলা সুফলভোগী সমবায় সমিতির সদস্যরা বলেন, ১৯৯৩ সালে প্রান্তিক চাষী ও অসহায় লোকজনদের নিয়ে আমরা নিমতলা সুফলভোগী সমবায় সমিতি গঠন করি। সংগঠনটি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নিয়োজিত। সংগঠনটি স্থাপিত হওয়ার পর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুমতি নিয়ে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের সাতমাইল-নওপাড়া বাজার হয়ে কচুবাড়ীয়া বাজার পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষ রোপন করে পরিচর্যা করে আসছি।
মাঝে মধ্যে রাস্তার এই গাছ উপড়ে গেলে অথবা গাছের মৃত্যু হলে চুক্তিনামার শর্ত মোতাবেক সরকারের কোষাগারে টাকা জমাদান পূর্বক কার্যদেশ গ্রহণ করে গাছ কর্তন করি। গাছ কর্তনের অর্থ মসজিদ, মাদরাসা ও দুস্থ পরিবাররে মাঝে এ পর্যন্ত প্রদান করে আসছি। নিয়ম অনুযায়ী গাছের ৩৫ ভাগ সমিতি পাওয়ার কথা। আদালত সেই রায় দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের কোনো ভাগ দেয়া হয়নি।
গায়ের জোরে আদালতের আদেশ অমান্য করে গাছ বিক্রি করেছে কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
সমিতির সাধারন সম্পাদক খন্দকার টিপু সুলতান বলেন, কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়ক প্রসস্থ ও উন্নতিকরণ কাজের জন্য বৃক্ষ কর্তন করা প্রয়োজন হওয়ায় সমিতির সাধারন সম্পাদক হিসেবে আমি নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) সড়ক বিভাগ কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খানের সাথে গাছ কর্তনের বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে গেলে সে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করে।
পরবর্তীতে আমি সমিতির প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাহী বৃক্ষপালনবিধ বিপ্লব কুন্ডুর কাছে গেলে তিনিও বলেন কোন রুপ ঝামেলা না করে আমাকে এবং কুষ্টিয়া নির্বাহী প্রকৌশলীকে ১০ লক্ষ টাকা করে মোট ২০ লক্ষ টাকা দিলে আমরা কাজটা করে দেবো। পরে আমি উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দায়ের করি। দীর্ঘ শুনানির পর ৬৫ ভাগ গাছ সুফলভোগী সমবায় সমিতির এবং ৩৫ ভাগ গাছ (সওজ) বিভাগের প্রাপ্য বলে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চ রায় প্রদান করেন।
সেই হিসেব অনুযায়ী সাতমাইল, নওপাড়া বাজার হতে সাড়ে ১৩ মাইল কচুবাড়ীয়া বাজার পর্যন্ত সকল বৃক্ষের ৬৫ ভাগ আমাদের অর্থাৎ নিমতলা সুফলভোগী সমবায় সমিতির। সুপ্রিম কোর্টের রায় অগ্রাহ্য করে সড়ক বিভাগের দুই কর্মকর্তা ব্যক্তি সুবিধা পাওয়ার কারণে প্রান্তিক চাষীদের দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল যৎ সামান্য মূল্য নির্ধারণ করে বিক্রয় করে দিয়েছে।
চুক্তিনামার শর্ত ও সুপ্রিম কোর্টের রায় ভঙ্গ করার শামীল। এই ধরনের স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চুক্তিনামার শর্ত ও সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য করে প্রান্তিক চাষীদের অর্থাৎ সমিতির আনুমানিক ৮০ লক্ষ টাকার ন্যায্য দাবী থেকে বঞ্চিত করেছে। এহেন অন্যায়ের সুবিচার দাবী করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খান ও রাজশাহী লক্ষীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী বৃক্ষ পালনবিদ বিপ্লব কুণ্ডর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

Discussion about this post