কুষ্টিয়া রবিন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে ১০দিনব্যাপী আয়োজিত ‘সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিক্ষা মেলা-২০২৩’র ৩য় দিনে ‘৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ ও আমাদের শিক্ষা’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টায় কুষ্টিয়া শহরের ক্যাম্পাসে জাতীয় সেমিনারে সভপতিত্ব করেন অধ্যাপক নরু উদ্দিন আহমেদ। সেমিনারটি উদ্বোধন করেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর শাজাহান আলী।
সমকালীন প্রাসঙ্গিকতার গুরুত্ব বিবেচনায় বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর বৈশি^ক শিল্প বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় তাল মেলাতে আমাদের বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা যুগপোযোগী কিনা এবং কোন বিচ্যুতি থাকলে তা কাটিয়ে উঠে বৈশি^ক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সম্ভাব্য কৌশল ও সক্ষমতা অর্জন বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিষয় প্রাসঙ্গিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের খ্যাতনামা গবেষক শিক্ষকবৃন্দ। এসময় সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সষ্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. হাকিম আরিফ। বিশেষ অতিথি রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আ ন ম রেজাউল করীম প্রমুখ।
সেমিনারে বিষয় সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: জিয়াউল আমীন, রবিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: খোরশেদ আলম, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ^বিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের প্রভাষক তানিয়া আফরোজ তমা ও কৃষি বিভাগের প্রভাষক হাসিবুল হাসান।
এসময় বক্তারা বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মূলত প্রযুক্তির বিপ্লব, যা পৃথিবীর মানুষকে খুব দ্রুত অনেক বছর সামনে নিয়ে যাবে। প্রযুক্তির উত্কর্ষ কাজে লাগিয়ে পরিবর্তিত-পরিবর্ধিত হবে শিল্প ও অর্থনীতির সব ক্ষেত্র। ম্যানুয়াল জগৎ ছেড়ে যাত্রা শুরু হয় ভার্চুয়াল জগতের। যেখানে মানুষের আয়ত্তে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ইন্টারনেট অব থিংস, যা সম্পূর্ণ রূপেই মানব সম্পদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। প্রযুক্তি নির্ভর এ ডিজিটাল বিপ্লবকেই বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। কোভিড-১৯ পরবর্তী উন্নত বিশ্বে ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব’ বা ৪ ও জশুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশ সমূহের দরজায়ও কড়া নাড়ছে ৪ ওজ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স ও অটোমেশন, ইন্টারনেট অব থিংস, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি, সাইবার সিকিউরিটি, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, বিগ ডাটা, প ম প্রজন্মের ওয়্যারলেস প্রযুক্তি, ন্যানো টেকনোলজি, থ্রিডি প্রিন্টিং, বøক চেইন, স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের ক্ষেত্রে উচ্চ প্রযুক্তির যুগান্তকারী ব্যবহার হবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যুগে।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। স্মার্ট বাংলাদেশের মৌলিক চারটি ভিত্তি হবে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। বিগত কয়েক বছর ধরেই ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব’ নিয়ে ব্যাপক পরিসরে আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশে। এখন প্রশ্ন হলো দেশটি কি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সর্বাধিক সুবিধা নিতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত অথবা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা কার্যকর?
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় জনগোষ্ঠীকে যেসব দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন, তার প্রায় পুরোটাই নির্ভর করবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর। আগামী দিনের সৃজনশীল ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সমস্যা সমাধানে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার দিকনির্দেশনাও থাকে শিক্ষাক্রমে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী শিক্ষাক্রমের ক্ষেত্রে পাঠ্যবইকেন্দ্রিক চতুর্থ শিল্প বিপ্লব চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি শত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে শুধু যে মানুষ চাকরি হারাবে তা নয় বরং নতুন করে ১০০ কোটি মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে। এ জন্য দক্ষ নেতৃত্ব ও গুণগত শিক্ষার ওপর জোর দেয়া আবশ্যক। আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো জরুরি।
বাংলাদেশে উদ্ভাবনী জ্ঞান, উচ্চদক্ষতা, গভীর চিন্তাভাবনা ও সমস্যা সমাধান করার মতো দক্ষতাসম্পন্ন মানবসম্পদ পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয়নি। তাই সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোয় প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশ থেকে বাধ্য হয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষতাসম্পন্ন পরামর্শক নিয়োগ দিতে হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ খরচ বাবদ ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নতি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে শিল্প ও সেবাচালিত অর্থনীতিতে পরিবর্তন হচ্ছে। তাই এ পরিবর্তনের সঙ্গে মিল রেখে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন এবং প্রবল প্রতিযোগিতামূলক বাজারের জন্য নিজেদের যদি তৈরি করা না যায়, তবে হাজার হাজার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো কাজে আসবে না। আর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা লাখ লাখ শিক্ষার্থী রাষ্ট্রের বোঝা হয়েই থাকবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পার করেছি নতুন শিক্ষাক্রম এমনভাবে বাস্তবায়িত হোক, যেটি হবে একাধারে আন্তর্জাতিক মানের এবং আমাদের স্থানীয় সমস্যার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম এমন হোক যার মাধ্যমে বিশ্বনাগরিক তৈরি হবে, যা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ এবং একইসঙ্গে একুশ শতকের জ্ঞানভিত্তিক প্রজন্মের বিশ্বকে মোকাবিলার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে ।
এছাড়া দিনের দ্বিতীয়ার্ধে রব্ন্দ্রী মৈত্রী বিশ^বিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জাহিদুল আমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় লেকচার সিরিজের ‘থিওরি অব সাকসেস’ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপনা। জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষন একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ড. মো: আকতারুজ্জামান, যশোর এমএম কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগরে সহযোগী অধ্যাপক ড: মো: রেজাউল করীম, শিক্ষা নবীস গবেষক সাফি আব্দুল্লাহ এবং রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যবসা ও প্রশাসন বিভাগগের প্রভাষক জাহিদ হাসান। এই অংশের প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো: আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি বিশ^বিদ্যালয়ের মানবিক অনুষদের ডীন ড. শহীদুর রহমান। প্রক্টর হারিসবুর রহমান তামিম, মিডিয়া রিলেশন কর্মকর্তা জনাব কারশেদ আলম। সেমিনারটি স ালনা করেন প্রভাষক বাংলা বিভাগ আব্দুল গাফ্ফ্রা মিঠু।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ৪ মে ২০২৩