কুষ্টিয়ায় ডোপটেস্টের ব্যবস্থা নেই। তারপরও ডোপটেস্ট কার্যক্রম চালু করতে কুষ্টিয়ার বিআরটিএ সিভিল সার্জনকে চিঠি দিয়েছে। সিভিল সার্জন অসহায়ত্ব জানিয়ে বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছেন। এই দুই দপ্তরের চিঠি চালাচালির চক্করে পড়ে আটকে আছে কয়েক হাজার চালকের লাইসেন্স। লাইসেন্স না থাকার পরও তারা সড়কে গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। লাইসেন্স বিহিন চালকদের কারনে সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা। দেখার কেউ নেই, বলাও কেউ নেই
পেশাদার গাড়িচালকদের লাইসেন্স প্রাপ্তির আবশ্যক শর্ত হিসেবে ডোপটেষ্টকে বাধ্যতামূলক করেছে বিআরটিএ। এটি বাস্তায়নের নির্দেশনা দিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হতেও সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের বরাবর পত্র পেরণ করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও কুষ্টিয়া জেলায় এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোন দৃষ্টান্ত দেখাতে পারেনি জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ সিভিল সার্জন ও বিআরটিএ। এ কারণে কুষ্টিয়ায় গত পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন কার্যক্রম। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন জেলার কয়েক হাজার পেশাদার চালকসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। পরিস্থিতি উত্তোরণের দায় নিচ্ছেন না কেউ। বিআরটিএ পত্র দিচ্ছেন সিভিল সার্জনকে পক্ষান্তরে সিভিল সার্জন কার্যালয় হতে নিজেদের অসহায়ত্ব জানিয়ে পত্র দিচ্ছেন বিআরটিএ’কে।
কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতির কার্যকরি সভাপতি,নূরুল ইসলাম বলছেন, ‘কুষ্টিয়ায় ডোপ টেস্ট যারা করবেন তাদের কাছে বারংবার ধর্না দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে পেশাদার পরিবহণ শ্রমিক তার পরিবার পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পেশাদার গাড়িচালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে বিআরটিএ। ৩০ জানুয়ারি থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হলেও এখনও এই জেলায় চালু হয়নি ডোপ টেস্ট সুবিধা।
ফলে আটকে আছে চালকদের নতুন লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন কার্যক্রম। নতুন লাইসেন্স ইস্যু করতে না পারায় রাস্তায় নামতে পারছেন না অনেক চালক। আর লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় রাস্তায় পুলিশি হয়রানির মুখে ভোগান্তি পোহাচ্ছে পেশাদর চালকরা।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পেশাদার মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারী মোঃ মক্কেল মন্ডল বলেন, ‘হঠাৎ বিআরটিএ নিয়ম করছে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের জন্য ডোপ টেস্ট লাগবে।আমি লাইসেন্সের জন্য বিআরটিএ অফিসে লিখিত, ভাইবা ও প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছি।
গত মার্চ মাসের ২৪ তারিখে বিআরটিএ অফিস আমার ডোপ টেষ্ট করার জন্য কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসে চিঠি দিয়েছে। ওখানে যেয়ে শুনলাম কুষ্টিয়ায় এই পরীক্ষা হয় না। তাহলে আমরা কী করব ? ‘পাঁচ মাস ধরে লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন হচ্ছে না। রাস্তায় নামলে পুলিশ ধরে হয়রানি করে।’
আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘বিআরটিএ অফিসে আসছিলাম ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে। এখন এসে শুনি তারা কোনো আবেদন জমা নেবে না। আগে ডোপ টেস্ট করতে হবে, পরে আবেদন নেবে।
বিআরটিএ কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ আতিকুল আলম বলেন, ‘ডোপ টেস্ট সনদ না মেলায় পাঁচ মাস ধরে পেশাদার গাড়িচালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে সাড়ে ৩শত জনের ডোপ টেষ্ট সনদের জন্য কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসে পত্র প্রেরন করেছি। ডোপ টেস্টের কাগজ না পাওয়ায় সেগুলো আমরা দিতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, ডোপ টেষ্টের বিষয়ে সিভিল সার্জন স্যারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। গত মাসেও চিঠি দিয়েছি। ডোপ টেষ্ট না হওয়ায় পত্র প্রেরন করেও লাভ হচ্ছে না। আবেদন করেও সহস্রাধিক মানুষ প্রায় ৫মাস ধরে ডোপ টেষ্টের অপেক্ষায় প্রতিদিন এই দপ্তরে ঘুরছেন।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা: আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন করে সরকারের নেয়া একটা সিদ্ধান্ত তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত চুড়ান্ত ভাবে বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগবে। এ কাজটি তো আর সিভিল সার্জন তার ব্যক্তিগত অর্থব্যয়ে করবেন না ? সে কারণে বিষয়টি এতাদিন ধরে ঝুলে আছে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে যে ডোপটেষ্টের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে; তা বাস্তবায়ন করতে ইতোমধ্যে ৫লক্ষ টাকা সরকারী বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। আশা করছি চলতি জুন মাসের ১৫তারিখের মধ্যেই আবেদনকারীদের ডোপটেষ্ট শুরু করা যাবে। যারা আবেদন করেছেন তারা ওই সময়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে স্যাম্পল দিয়ে টেষ্ট করিয়ে নিতে পারবেন।’
উল্লেখ্য সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে প্রেরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে- ‘পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের জন্য দেশের সকল পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে ডোপ টেষ্টের ব্যবস্হা গ্রহন করা বাধ্যতামূলক জানিয়ে পত্র প্রেরণ করেছে সংশ্লিষ্ট স্বাস্হ্য অধিদপ্তর ও সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বরাবর। এ মোতাবেক জানুয়ারি মাসেই বিআরটিএ একটি পরিপত্র জারী করেছে। সেখানে সারাদেশের সকল পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে এবং ঢাকা মহানগরীর ক্ষেত্রে ৬টি প্রতিষ্ঠানে অথবা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের অধীন/অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে পেশাদার চালকেরা ডোপ টেষ্ট করতে পারবে।এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ অফিস হতে নির্ধারিত ফরমে অনুরোধ জানিয়ে ডোপটেষ্টকারী প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিতে হবে। ডোপটেষ্টকারী প্রতিষ্ঠান ডোপটেষ্ট রিপোর্ট অনলাইনে বিআরটিএর সহকারী পরিচালক কে প্রেরন করবে এবং মূল রিপোটের কপি লাইসেন্স প্রার্থীর নিকট হস্তান্তর করবে। বিআরটিএ অফিস অনলাইন কপি ও মুল কপি যাচাই করে মাদকাসক্ত না হলে লাইসেন্স প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//জুন ০৭,২০২২//

Discussion about this post