নিরাপদ গর্ভপাত অধিকারের দাবী প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়ায় আন্তর্জাতিক নিরাপদ মাসিক নিয়মিতকরণ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নারীপক্ষের সহায়তায় এবং সেতু’র আয়োজনে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে শহরের লাভলী টাওয়ারের সেতু সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনা সভা’র আয়োজন করা হয়।
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো “ নিরাপদ মাসিক নিয়মিতকরণ অধিকারে জন্য আন্দোলন, সংহতি ও ন্যায়বিচার”।
সেতুর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুস সালাম খানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া পৌরসভার সংরক্ষিত কাউন্সিলর রীনা নাসরিন ও সাংবাদিক এসএম জামাল প্রমুখ।
সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অফিস, কুষ্টিয়ার মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ নওয়ার আলী।
এসময় তিনি ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ বিষয়ে অংশগ্রহণকারী গ্রামীণ নারীদের ধারণা প্রদান করেন।
তিনি এমআরএম সেবা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য এমআরএম এর ব্যবহার, পার্শ-প্রতিক্রিয়া এবং এর জটিলতা ও উপসর্গ সম্পর্কে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করেন। কারণ এই ওষুধের কারণে নারীর পাশর্-প্রতিক্রিয়া বা জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত সেই নারীকে তাঁর পরিবার যাতে সঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে আসতে পারেন। জরুরী অবস্থায় হাসপাতালে আনার ব্যবস্থা করে রাখলে কোন রোগীর চিকিৎসা পেতে দেরী হবে না এবং সঠিক সময়ে রেফারেলের কারণে অনেক মৃত্যু প্রতিরোধ করা যাবে।
তিনি বলেন, সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে অনাকাক্ষিত গর্ভধারণ রোধে (বাল্যবিবাহের ফলে অনাকাক্ষিত গর্ভধারণ এবং বয়ঃসন্ধিকালেও কেউ অনাকাক্ষিত ভাবে গর্ভধারণ করে) আমাদের দেশের নারীরা হাসপাতালে গিয়ে এমআর করতে চায়না। অন্যদিকে ওষুধ তারা নিজেরাই সংগ্রহ করতে পারে, বাড়িতে থেকেই ব্যবহার করা যায়, এর জন্য বাইরে যেতে হয় না আবার সংসারের কাজেও কোন সমস্যা হয়না ইত্যাদি কারণে ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণের ব্যাপক চাহিদা তৈরী হচ্ছে এবং জনপ্রিয়তাও বেড়ে চলেছে। তবে উক্ত বিষয়ে মানসম্পন্ন সেবার অভাবে এবং নানারকম জটিলতার কারণে নারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এর মধ্যে নারীর যৌন ও প্রজনন সেবা উল্লেখ্যযোগ্য।
সাংবাদিক এসএম জামাল বলেন, ‘প্রজননস্বাস্থ্য, মাসিক, গর্ভধারণ—এই বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা কথা বলা, আলাপ-আলোচনা করার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। প্রজননস্বাস্থ্যের সূচনাই হয় এই মাসিকের সময়কাল থেকে। এই সময়ের মাধ্যমে একজন মেয়ে পরবর্তী জীবনে একজন নারী হয়ে বেড়ে ওঠেন। সেই সময়কালটা তাঁর জীবনে অত্যন্ত সংবেদনশীল। সে কারণে এ বিষয়ে মেয়েদের স্বাস্থ্য সচেতনতা, জ্ঞানদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তাই পিরিয়ড নিয়ে খোলামেলা কথাবার্তা বলতে এবং বেশি বেশি করে জনসচেতনতা গড়তে উদ্যোগ নিতে হবে।
কুষ্টিয়া পৌরসভার সংরক্ষিত কাউন্সিলর রীনা নাসরিন বলেন, সমাজের নেতিবাচক মনোভাব ও অসচেতনতা অনিরাপদ গর্ভপাতের ঝুঁকি তৈরি করছে। নারীর নিরাপদ গর্ভপাতের অধিকার সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। জাতি, সংস্কৃতি, ধর্ম নির্বিশেষে এ অধিকার প্রায়ই খর্ব করা হয়। এসবের দোলাচলে অনেক সময় নারীর জীবনই চলে যায়। তাই নিরাপদ গর্ভপাতের অধিকারকে দৃঢ়তার সঙ্গে তুলে ধরতে হবে।
অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সেতু’র আইসিটি ব্যবস্থাপক সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস।
অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলার শতাধীক নারী ও কিশোরীরা উপস্থিত ছিলেন।
খালিদ সাইফুল // দৈনিক দেশতথ্য // ২ অক্টোবর ২০২৩