Print Date & Time : 22 April 2025 Tuesday 3:43 am

কুষ্টিয়ায় নৌকার বিপক্ষে আওয়ামী লীগ নেতার গোপন বৈঠকের ভিডিও ভাইরাল

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কুষ্টিয়ায় এবার চাল ব্যবসায়ী এক আওয়ামীলীগ নেতার নৌকার কুষ্টিয়ায় নৌকার বিপক্ষে আওয়ামী লীগ নেতার গোপন বৈঠকের ভিডিও ভাইরাল বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থীকে জেতানোর জন্য গোপন বৈঠকের ভিডিও ফাঁস হওয়ায় এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনা কুষ্টিয়া সদরের বটতৈল ইউনিয়নে। যেখানে গত ২১ ডিসেম্বর ওই স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান মিন্টু ফকিরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে ওইদিন তার সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া ২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত আছেন। ভিডিওটি গোপনে রেকর্ড করেছেন কোন এক অংশগ্রহণকারী। সেখানে কুষ্টিয়ার একজন জাতীয় পর্যায়ের নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তব্য রাখছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি চাল ব্যবসায়ী ওমর ফারক।
ভিডিওতে তিনি বলেন, আমাদের এখানে গ্যানজামের পর আসামিদের ছাড়ানোর জন্য আমি নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, নৌকার অবস্থানটা ভাল নেই। ওর ( নৌকার প্রার্থী) যা অবস্থা তাতে ভোট চাওয়ার মতো, করার মতো অবস্থা নেই। ওই ভিডিওতে ওমর ফারক বলেন, ওসব বিশ্লেষণে যাবো না। আমরা ঘোড়া মার্কার ভোট করছি। আমার নৌকার ক্যান্ডিডেটের অবস্থা সবাই জানেন, তার পক্ষে জেতা সম্ভব নয়। তাই নির্দেশনা আসছে ঘোড়া মার্কার (বিদ্রোহী প্রার্থী) ভোট করার। তিনি বলেন, আমি কোন নেতার নাম বললাম না, তবে আমি সিগনাল মতো কথা বলছি। এসময় উপস্থিত নেতারা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন- কে সিগনাল দিয়েছে আমি বলতে পারবো না। এতো বিশ্লেষণ করে বলা সম্ভব নয়। আমাকে বলেছে ঘোড়া মার্কার ভোট করতে, আমি ঘোড়া মার্কার ভোট করছি। তিনি বলেন, আমার সাহস নাই নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে ভোট করার। আমি নৌকাকে জেতাতে পারছি না। যেহেতু আমাদের আওয়ামী লীগ করা একজন লোক দরকার সেই হিসেবে এই নির্দেশনা দিয়েছে।
বটতৈল ইউনিয়নের কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই বৈঠকটি হয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিকের অফিসে। ২৫ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে এই বৈঠকে ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিক। তিনি বলেন, ইউনিয়নের বর্তমান পরিস্থিতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ সম্পাদক সম্পাদকসহ নেতা-কর্মীদের নামে মামলা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কী করণীয় ঠিক করতে আমি সব ওয়ার্ডের সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে ডেকেছিলাম। সেখানে আমি কোন কথা বলিনি। ওমর ফারুকই এসব বলেছেন। তবে ঘোড়া মার্কায় ভোট করার তার এ প্রস্তাব নেতারা সবাই মেনেও নেননি। আবু বক্কার বলেন, দুপুরের নামাজের আগে এসব আলোচনা হয়। পরে নামাজ পড়ে এসে সবাই খাওয়া দাওয়া করেন।
ভিডিওর এই বক্তব্যের কথা স্বীকার করেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ওমর ফারুকও। তিনি বলেন, কেউ একজন গোপনে এই ভিডিও করেছেন। তবে কোন নেতা এই সিগনাল দিয়েছেন তার নাম তিনি বলেন নি বলেও দাবি করেন।
এ ব্যাপারে কথা হয় কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার সঙ্গে। তিনি বলেন, এরকম ভিডিওর ব্যাপারে তিনি জানেন না। তিনি বলেন, দলের বিপক্ষে কেউ কথা বললে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে এই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ মোমিন মণ্ডল বলেন, এই বৈঠকের ভিডিও আমিও দেখেছি। এটা খুবই নিন্দনীয়। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি ওমর ফারুককে উদ্যেশ্য করে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি আসছেন জামায়াত থেকে। জামায়াত-বিএনপিকে সমর্থন করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন নি। তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যই তিনি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে আগামী ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।