Print Date & Time : 11 May 2025 Sunday 3:56 am

কুষ্টিয়ায় বাড়ছে পানি ভাঙ্গছে পাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফারাক্কা থেকে নেনে আসা গঙ্গা-পদ্মার শাখা প্রশাখায় প্রবাহিত বানের জল উপচে প্লাবিত হচ্ছে জেলার বিস্তিৃর্ন নিন্মাঞ্চল। কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ পয়েন্ট, শিলাইদাহ ও গড়াই নদীর রেলসেতু পয়েন্টে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপ স্কেলে বিপদ সীমা ইতোমধ্যে ছুঁই ছুই করছে বলে নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া।

শুক্রবার সকাল ৬টায় হার্ডিঞ্জ পয়েন্টে পদ্মার পানি মাপ ছিলো ১৪ দশমিক ১৭ সে:মি: যার বিপদ সীমা হলো- ১৪ দশমিক ২৫ সে:মি: এবং গড়াই সেতু পয়েন্টে পরিমাপ ছিলো ১২.৪৪ যার বিপদ সীমা ১২ দশমিক ৭৫ সে:মি:। গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে দশমিক ১৭ সে:মি:। পানি বৃদ্ধির এই মাত্রা অব্যাহত থাকলে আজ সন্ধার মধ্যেই পদ্মার পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করবে। পদ্মার পানি বৃদ্ধির এই ধারা আগামী ২৩ আগষ্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাসে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে পদ্মা- গড়াইয়ে পানি বৃদ্ধির কারণে একদিকে ইতোমধ্যেই জেলার নিন্মাঞ্চল/চর এলাকার কৃষিজমি এবং লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে নদীর পাড় ভাঙ্গন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর হতে নির্বাহী প্রকৌশলী কুষ্টিয়ার দপ্তরে প্রেরিত সতর্কবার্তায় জেলার নদী ভাঙ্গন প্রবন ২৫টি স্পটকে সনাক্ত করে সেখানে জরুরী সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশনাসহ প্রযোজনীয় জরুরী আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানালেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আফছার উদ্দিন।

তবে প্লাবন, ভাঙ্গন ও আক্রান্তসহ উপদ্রুত এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার যথেষ্ট সক্ষমতা তাদের নেই বলেও জানালেন এই নির্বাহী প্রকৌশলী।

শুক্রবার দুপুরে জেলার ৬টি উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, সব কয়টি উপজেলাতেই নিন্মাঞ্চলের কৃষিজমি ও বসতবাড়ী প্লবিত এবং কোথাও কোথাও পাড় ভাঙ্গনে শিকার হয়ে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। সেখানে সাধ্যমতো ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছেন উপজেলা প্রশাসন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ইতোমধ্যে নদীর পাড় ভাঙ্গনের মুখে জেলায় সরকারী বেসরকারী ও জনপদ ক্ষতির শিকার হওয়া ১৪টি স্পটে জরুরী আপদকালী পদক্ষেপ হিসেবে ভাঙ্গন ঠেকাতে বালিভর্তি জিও ব্যাগে ফেলানো হয়েছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ন হিসেবে চিহ্নিত এসব স্পট হলো- দৌলতপুর উপজেলার চিলমারি, ফিলিপ নগর ও মরিচা। ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ও রায়টাঘাট। মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া, সদর উপজেলার, সেখ রাসেল কুষ্টিয়া হরিপুর সংযোগ সেতুর প্রতিরক্ষা বাঁধ ও স্কুল মাদ্রাসা। কুমারখালী উপজেলার সুলতানপুর ,কোমরভোগ, শিলাইদহ, চাপড়া ও তেবাড়িয়া। খোকসা উপজেলার কালিবাড়ি ও ওসমানপুর আবাসন প্রকল্প।

এছাড়াও স্যাটেলাইট (সিজিআইএস) হতে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নদী ভাঙ্গনের অধিক ঝুকিপূর্ন স্পট হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে চিহ্নিত হয়েছে হেলালপুর, উসমানপুর, আবেদের ঘাট, কুলদিয়া, ভুড়কা, পুরাতন কুস্টিয়া, শিমুলিয়া, কমলকান্তি, গনেশপুর, তেবাড়িয়া, এনায়েতপুর, লালপুরসহ প্রায় ২৫টি স্পটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

গড়াই নদীর ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত শেখ রাসেল কুস্টিয়া হরিপুর সংযোগ সেতুর প্রতিরক্ষ বাধ ঠেকাতে কর্মরত পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার উপসহকারী প্রকৌশল মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানে যে পরিমান ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে গুরুত্বসহকারে নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালিভর্তি জিওব্যাগ ফেলছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় ব্যাগ সরবরাহের চরম ঘাটতি রয়েছে। সেকারনে কাজের গতিও কাঙ্খিত মাত্রায় করতে পারছিনা। বলতে পারেন টাকা দিয়েও চাহিদা মতো জিও ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে না।

ঠিকাদার হবিবর রহমান বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার হওয়ায় তাৎক্ষনিক এসব জরুরী কাজের বোঝা আমারদের ঘারেই চাপানো। আমরাও করি। কিন্তু সমস্যা হলো প্রতি বছরই এধরণের কমবেশী জরুরী কাজ করে দিই ঠিকই কিন্তু এসবের বিল পাইতে আমাদের চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। কেেব একাজের বিল পাবো তা বরা মুস্কিল।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আব্দুল হামিদ বলেন, পদ্মা গড়াইয়ের সব কয়টি ঝুঁিকপূর্ন স্থানে বিশেষ নজর রেখে পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। যেখানেই সমস্যা সৃষ্টি হবে গুরুত্ব বিবেচনায় সেখানেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে জরুরী কাজের পরিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুত ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। আমরা বিভিন্ন সোর্সকে কাজে লাগিয়ে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছি।