কুমারখালী উপজেলার উত্তর চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) মধ্যরাতে বিদ্যালয়ের আধাঁপাকা টিনসেট ঘরের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক কক্ষে এঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থীদের সনদপত্র, বইপত্র, গুরুত্বপূর্ণ নথি ও কাগজপত্রাদি, আসবাবপত্রসহ দুইটি কক্ষের সবকিছু পুড়ে ছাই গেছে। এতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতির ধারনা করা হচ্ছে। কিন্তু এই রাতে বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরী সোহান মোল্লা অনুপস্থিত ছিলেন।
তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের ভাষ্য, আগামী রোববার (৯ এপ্রিল) বিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদ নির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা। এনিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিরোধ চলছে। ভোটকে কেন্দ্র করে একপক্ষ তাঁর প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটাতে পারে।
আর আওয়ামী লীগের দু’পক্ষেরর নেতাকর্মীরা বিদ্যালয়ের আগুন নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছেন। একপক্ষ বলছেন, পরাজয়ের ভয়ে ভোট বন্ধ করতে প্রতিপক্ষ বিদ্যালয়ে আগুন দিয়েছে। অপরপক্ষ বলছে, তাঁদের ফাঁসাতে প্রতিপক্ষ আগুনের নাটক সাজিয়েছে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান কার্যালয়ে আগুন দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে গ্রামবাসী আগুন নিভাতে ছুটে আসে এবং পুলিশ ও ফাঁয়ার সার্ভিসে খবর দেন তাঁরা। খবর পেয়ে রাত আড়াইটার দিকে শৈলকূপা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালায়। পরে স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিসের প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে বিদ্যালয়ের আধাঁপাকা টিনসেট ঘরের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের সনদপত্র, বইপত্র, গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল কাগজপত্রাদি, আসবাবপত্রসহ দুইটি কক্ষের সবকিছু পুড়ে ছাই যায়। এতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতির ধারনা করা হচ্ছে। তবে আগুনের সুত্রপাতের সঠিক কারণ জানা যায়নি।
আরো জানা গেছে, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যদুবয়রা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ আলী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি আকাশ রেজার সমর্থক ও নেতাকর্মীদের বিরোধ ও উত্তেজনা চলছিল। আকাশ ও সবুজ পক্ষ ভোট বন্ধের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রিজাডিং কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন। রাত তিনটার দিকে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় এলাকায় শতশত মানুষ। সেখানে পুলিশের সদস্যরাও রয়েছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান কার্যালয় ও শিক্ষক কক্ষে আগুনের ধোঁয়া বের হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি দিয়ে আগুন নিভাচ্ছে। বইপত্র,প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ যাবতীয় মালামাল পুড়ে গেছে।
এসময় কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলীর সাথে। তিনি বলেন, আগামী রোববার বিদ্যালয়ে ভোট হওয়ার কথা। এনিয়ে স্থানীয় দুই গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। একপক্ষ ভোট বন্ধের জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তাঁর ভাষ্য, বিদ্যালয়ের ভোট বন্ধ করতেই কোনো পক্ষ হয়তো বিদ্যালয়ে আগুন লাগিয়েছে। আগুনে বিদ্যালয়ের ২০০১ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে গেছে।
বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন খান বলেন, শিক্ষার্থীদের সনদপত্র, বইপত্র, গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল কাগজপত্রাদি, আসবাবপত্রসহ দুইটি কক্ষের সবকিছু পুড়ে ছাই গেছে। এতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিদ্যালয়ের। তিনি অপরাধীর শাস্তির জন্য আইনের আশ্রয় নিবেন।
শুক্রবার সকালে আবারো সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, আগুনে পোড়া বিদ্যালয় দেখতে এসেছেন স্থানীয়রা। এসময় বয়োজ্যেষ্ঠ আনছার বিশ্বাস বলেন, যাঁরা একাজ করতে পারে, তাঁরা মানুষও খুন করতে পারে। এদের কঠিন শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এবিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, রাত দুইটার দিকে তিনি আগুনের খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন। কিভাবে আগুন লেগেছে তা তিনি জানেননা। তবে তাঁর ধারণা, প্রতিপক্ষরা নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে ভোট বন্ধ করতে এমন নেক্কারজনক ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিছে। আগুন নিভাতে সবাই আসলেও প্রতিপক্ষের কেউ আসেনি বলে জানান তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা আকাশ রেজা ও যুবলীগ নেতা সবুজ আলী বলেন, মসজিদের মাইকে প্রচার শুনে তাঁরা আগুন লাগার বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তাঁদের ভাষ্য, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। অথবা তাঁদের ফাঁসাতে প্রতিপক্ষরা এমন জগন্য কাজ করতে পারে।
এবিষয়ে জানতে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমানকে ফোন দিলেও তিনি তা ধরেননি।
শৈলকূপা ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ও এলাকাবাসী মিলে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমান তদন্ত স্বাপক্ষে পরে জানাতে পারবেন তিনি।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোহসীন হোসাইন বলেন, স্কুল ভোট নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ চলছে। তাঁর ধারণা, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ফাঁসাতে এমন কাজ করতে পারেন। তবে তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে তিনি জানান।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ৭ এপ্রিল ২০২৩