কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাসব্যাপী প্রতিদিন শতাধিক রোজাদারদের জন্য ইফতারের প্যাকেট ও শরবত সরবরাহ করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মসজিদ, মাদ্রসা, ব্রীজ ও ফুটপাতে সাজিয়ে রাখা থাকে ইফতারের সুদৃশ্য বক্স ও রুহ আফজা শরবতের বোতল। সেখান থেকে একের পর এক ইফতারের প্যাকেট তুলে নেন রোজাদার ব্যক্তি।
রোজা রেখে তারা যেন একটু ভালো ইফতারি খেতে পারেন, সে জন্যই এই উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন কুষ্টিয়ার নারী বাতায়ন নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
মৌবন পরিচালিত নারী বাতায়ন এমন মহতি উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। সংগঠনটির সদস্যরা প্রতিদিন শ্রম দিয়ে ইফতারসামগ্রী ফুটপাতে সাজিয়ে রাখেন।
আসরের নামাজের পর একেক দিন একেক স্থানে রাস্তার পাশে নারী বাতায়ন সংগঠন ইফতার সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন স্বেচ্ছাসেবকরা। চলার পথে ইফতার হাতে পেয়ে অনেকের মুখেই ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি। সে সময় দুহাত ভরে দোয়া করেন আয়োজকদের জন্য। এ রকম ব্যতিক্রমী আয়োজন দেখে যেমন খুশি উপকারভোগীরা, তেমনি আলোচনা ও প্রশংসায় ভাসছেন সংগঠনটির সদস্যরা।
সড়কে চলাচলরত ইজিবাইকের চালক কিংবা রিকশাচালক অথবা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া রোজাদাররা যে যার মতো করে একটি প্যাকেট নিয়ে চলে যান। মূলত কুষ্টিয়া শহরের অসহায়, দরিদ্র কিংবা স্বল্প আয়ের দিনমজুরদের জন্য এমন ব্যতিক্রমী ইফতারের আয়োজন করছে কুষ্টিয়ার নারী বাতায়ন।
কুষ্টিয়ার খাদ্য ও মিষ্টান্ন উৎপাদন প্রতিষ্ঠান মৌবনের উদ্যোগে এই নারী বাতায়ন পরিচালিত হয়ে আসছে। নারী বাতায়ন নামের এই সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য এমন মহতী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
দেখা গেছে, প্রতিদিন বিকেল পাঁচটার দিকে ইফতারের জন্য তৈরি করা প্যাকেট একেক দিন শহরের একেক সড়কে রাখা হয়। প্রতি প্যাকেটে মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বুন্দিয়া, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, খেজুর রাখা হয়। সঙ্গে থাকে এক বোতল বিশুদ্ধ খাবার পানি। সড়কের পাশে ফুটপাতে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় প্যাকেটগুলোকে।
শহরতলির মঙ্গলবাড়ীয়া থেকে রিকশা নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন আবদুস সালাম। তিনি জানান, সংসারে পাঁচজন খানেওয়ালা। দিনশেষে আড়াই শ টাকা আয় হয়েছে। দিনভর যা আয় করিছি, তা দিয়ে সংসারের জন্য চাল-ডাল, তেল-লবণ কিনতি হবি। ইফতারি কিনব ক্যাম্বা কইরি। রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা আমাকে ডেকে এই ইফতারের প্যাকেট দিল। আমিও নিয়ে নিলাম। যারা দিচ্ছে তাদের জন্য অনেক দোয়া করি।
ষাটোর্ধ্ব রিকশাচালক কুদ্দুস আলী বলেন, প্রয়োজনের তাগিদেই রিকশা নিয়ে রাস্তায় বাইর হইছি। বেলা ডুইবি যাচ্ছে। ইফতারের সুময় হয়ে গেলে। কী করব ভাবছিলাম। হঠাৎ এরা ডেকে ইফতারের বাক্স হাতে ধরিয়ে দিল। রাস্তার পাশেই রিকশায় বসে ইফতার করলাম।
নারী বাতায়ন সংগঠনটি একটি মৌবন উদ্যোগ। মূলত নারীদের উন্নয়ন ও কল্যাণের পাশাপাশি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজ করে। এটি একটি মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের অনুমোদনকৃত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সংগঠনের সদস্য আশিকুজ্জামান রনি বলেন, এই রমজানে শহরের কিছু রিকশাচালক, অটোচালক, পথচারী ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য ইফতারের আগ মুহূর্তে আমরা নারী বাতায়ন সংগঠনের মাধ্যমে শতাধিক ইফতারসামগ্রীর প্যাকেট সড়কের এসব ফটুপাতে রাখছি। যাদের প্রয়োজন হচ্ছে তারা নিয়ে যাচ্ছে। পুরো রমজান মাসে এভাবে অসহায় মানুষদের মুখে ইফতারসামগ্রী তুলে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর বলেও জানান তিনি।
মৌবনের নির্বাহী পরিচালক ও নারী বাতায়নের সভাপতি সাফিনা আনজুম জনী বলেন, নারীদের উন্নয়ন ও নারীদের স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রয়েছে নারী বাতায়ন সংস্থা। যেটির উদ্যোগে রয়েছে মৌবন।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছর আমাদের প্রতিষ্ঠানের আশপাশের মসজিদ ও অসহায় দুস্থদের মাঝে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করে থাকি।পুরো রমজান মাস জুড়েই প্যাকেট করা ইফতারসামগ্রী ও পানীয় ইফতারের আগ মুহূর্তে রাখা হতো। এতে শহরের রিকশাচালক অটোচালক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কিছুটা হলেও উপকারে এসেছে।