কুষ্টিয়ার একটি স্কুলে কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে সভাপতি-প্রধান শিক্ষকসহ পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে ২৫ লক্ষ টাকার বেশি নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ বঞ্চিত চাকুরি প্রত্যাশী, এলাকাবাসী ও স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এলাকায় এ নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে। স্কুলটির নাম খেজুরতলা পাটিকাবাড়ি মাধ্যমিক বিধ্যালয়। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নে স্কুলটির অবস্থান।
সরেজমিন এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে অভিযোগের সত্যাতাও মিলেছে। স্থাণীয়রা জানান,‘ পাটিকাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩টি পদে নিয়োগের জন্য বেশ কয়েক মাস আগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পদের মধ্যে ছিল আয়া, পরিচ্ছন্নতা কর্মি ও নৈশ প্রহরি। গত এপ্রিল মাসের শেষের দিকে নিয়োগ চুড়ান্ত করা হয়।
৩টি পদের বিপরিতে আবেদন করেন ১০জনের বেশি। এর মধ্যে আয়া পদের জন্য আবেদন পড়ে ৫টি। পাটিকাবাড়ি এলাকার হোসেন আলী। তিনি আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ কর্মি। আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল। আয়া পদের জন্য তার ছেলের স্ত্রী টিনা খাতুন আবেদন করেন। হোসেন আলীর দলের একজন নিবেদিত কর্মি ও তার পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করে চাকুরিটি তার ছেলের স্ত্রীকে দেওয়ার জন্য স্থাণীয় সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফসহ অন্য নেতারা সুপারিশও করেন।
তবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য স্থাণীয় কয়েকজন নেতা টাকার দাবি করেন। হোসেন আলী টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় শেষ পর্যন্ত বেশি টাকা পাওয়ায় অন্য এক নারীকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাজেদা খাতুন নামের ওই নারী একটি এনজিওতে চাকুরি করেন।
হোসেন আলী কান্নাজড়িত কন্ঠে অভিযোগ করে বলেন,‘ জীবনভর বিনা স্বার্থে দল করে আসছি। কোনদিন কিছু চাইনি। হানিফ ভাইসহ অন্য বেশ কয়েকজন নেতা আমার পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করে চাকুরিটি দেওয়ার জন্য সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে বলে দেন। তবে তারা অর্থ নিয়ে আমার বেটার বউকে অযোগ্য বলে বাদ দিয়ে দিয়েছে। এ স্কুলে ২০১৩ সাল থেকে প্রায় অনেক গুলো পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সবই অর্থবানিজ্যে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দলের একজন ক্ষুদ্র কর্মি হিসেবে দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষক একজন জামায়াত নেতা, তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির করতেন। তাকে কারা কিভাবে নিয়োগ দিল সেটি খুঁজে বের করুণ?
স্থাণীয়রা জানান,‘ স্কুলের সভাপতি সরফুদ্দিন মানিক বিদেশে প্রবাসে থাকতেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সফর উদ্দিন তার বন্ধু। দেশে আসার পর নিয়োগ বানিজ্যে করতে তাকে মোটা অঙ্কের টাকায় সভাপতি করা হয়। সফর উদ্দিনও দুই বার স্কুলটির সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে জোরপুর্বক স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকে সরিয়ে তিনি ফের বিদ্যুৎসাহী সদস্য হয়েছেন। নিয়োগ বানিজ্যের পেছনে সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও সফর উদ্দিনের হাত আছে। তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নিয়োগ দিয়েছে।
সাইফুল ইসলাম নামের ভুমিহীক এক ব্যাক্তি স্থাণীয় বাজারে ঝাড়ুদারের কাজ করে সবজি তুলে সংসার চালান। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক চাকুরি দেওয়ার কথা বলে দীর্ঘ সময় ধরে পাটিকাবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মির করিয়ে নিচ্ছিল। এ জন্য তাকে কোন অর্থ দেওয়া হতো না। স্কুলের সকল শিক্ষক ও এলাকাবাসী সাইফুলকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন। তবে ৯ লক্ষ টাকার বেশি অর্থ নিয়ে এ পদে আনিস উদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সাইফুল ইসলাম বলেন,‘ চাকুরি দেওয়ার কথা বলে সভাপতি মানিক, প্রধান শিক্ষক সালেহিন স্যার ও সাবেক চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন আমাকে স্কুলে কাজ করার কথা বলে। আমি তাদের কথা মত কাজ করে আসছিলাম। নিয়োগ এগিয়ে আসা চাকুরির জন্য তারা ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি বলি এত টাকা তো দিতে পারব না ৩ লাখ টাকা দেব আর বাড়িতে একটি খাসি ছাগল আছে তা জবাই করে ২০০ মানুষ খাওয়াবো। তারা রাজী হয়।
কুষ্টিয়ায় পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাওয়ার পর মানিক বলে আমার চাকুরি হবে না, ঘাপলা আছে। ১০ লাখ টাকা অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে সে জানায় আমাকে।’
একই সাথে তিনটি পদেই নিয়োগ দিয়ে ২৫ লাখ টাকার বেশি অর্থ নিয়ে সভাপতি মানিক, আওয়ামী লীগ নেতা সফর উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষক সালেহিন আয়া পদে সাজেদা খাতুন, নৈশ প্রহরীতে রাজু আহমেদ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মি পদে আনিস উদ্দিন নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আনিস উদ্দিনের বাড়ি অন্য উপজেলায়।
নিয়োগের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক সালেহিন আহমেদ বলেন,‘ আমার কিছু করার নেই, সভাপতি ও কয়েকজন মিলে লোকজন চুড়ান্ত করেছেন। আমার কোন ক্ষমতা নেই।’
সভাপতি সরফুদ্দিন মানিক প্রধান শিক্ষকের ওপর দোষ চাপান। তিনি বলেন, আমি নতুন মানুষ, আমাকে সভাপতি করেছে স্থানীয় লোকজন। প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেন, স্কুলে নিয়োগ আছে, আমি যেহেতু এসব বুঝিনা তাকে সব দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে বলি। তিনি সব করেছেন।’
সফর উদ্দিন বলেন,‘ হোসেন আলী আওয়ামী লীগের ত্যাগী একজন কর্মি। সাইফুলও দরিদ্র মানুষ। শুনেছি ঝামেলার কারনে তাদের চাকুরি হয়নি। বানিজ্যে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি এসব বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।’
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১৩ মে ২০২৩

Discussion about this post