কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টারস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সস্পাদক সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল হত্যায় জড়িত প্রকৃত খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন-সমাবেশ ও রাজপথে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাংবাদিকরা। কর্মসূচি পালন শেষে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, আইজিপি, মহাপরিচালক র্যাব, অতিরিক্ত আইজিপি নৌ-পুলিশ, ডিআইজি খুলনা রেঞ্জ ও কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন তারা।
সোমবার (১০ জুলাই) বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগরের সভাপতিত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাভিশনের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হাসান আলীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অংশ নিয়ে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডাবলু, কুষ্টিয়া এডিটরস ফোরামের সভাপতি মজিবুল শেখ, জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি ডাক্তার গোলাম মওলা, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু প্রমুখ।
কর্মসূচিতে কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দসহ জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা অংশ নেন।
এ সময় নেতৃবৃন্দ বলেন, রুবেল হত্যাকাণ্ডের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনার কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কারা কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা খুঁজে বের করতে সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কার্যত অদ্যবধি কুষ্টিয়ার বহুল আলাচিত সাংবাদিক রুবেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি অন্ধকার হিমাগারে গতিশূন্যতায় পড়ে রয়েছে।
কর্মসূচি শেষে কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে সাংবাদিকরা অবিলম্বে সাংবাদিক রুবেলের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খাইরুল আলমের কাছেও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
২০২২ সালের ৩ জুলাই রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড় এলাকায় কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের কার্যালয়ে বসে দায়িত্ব পালন করছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি ও স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাসিবুর রহমান রুবেল। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি কুষ্টিয়া পৌর বাজারে পৈত্রিক কাঁচামালের আড়ত ও বিভিন্ন সরকারি দফতরে ঠিকাদারি করতেন। অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় হঠাৎ করে মুঠোফোনে একটি কল আসলে তিনি কাউকে কিছু না বলেই হন্তদন্ত হয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যান। এরপর থেকে তার সবগুলো মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়। ঘটনার চার দিন পর ৭ জুলাই দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় গড়াই নদে নির্মাণাধীন গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচ থেকে রুবেলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরের দিন ৮ জুলাই নিহত রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটির বাদী নিহত সাংবাদিক রুবেলের চাচা বলেন, প্রথম প্রথম এক থেকে দুই মাস আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা ভালো ছিল। এরপর থেকে তাদের উৎসাহ ও তদন্তে ভাটা পড়ে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কারা, কী কারণে রুবেলকে হত্যা করলো তার কিছুই জানতে পারবো না এটাতো হতে পারে না। মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেওয়ার জন্য তিনি গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পুলিশের আইজি বরাবর আবেদন করেছেন। কিন্তু আবেদনের কোনো জবাব মেলেনি। মামলাটি বর্তমানে নৌ পুলিশ তদন্ত করছে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১০ জুলাই ২০২৩

Discussion about this post