পুরোনো হতাশা, গ্লানি আর মলিনতাকে পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাওয়া এবং যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তির বার্তা নিয়ে নতুন বছর ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে বরণ করতে কুষ্টিয়ার কালেক্টর চত্বরে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে ৷ যুদ্ধবিগ্রহের বিশ্বে শান্তির বার্তা কামনা করে মঙ্গল শোভাযাত্রার এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো’ গানটি।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি কালেক্টর চত্বর থেকে যাত্রা শুরু করে বনবিথির বটমূলে এসে সমাপ্ত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছা. শারমিন আখতার, স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক (উপসচিব) মো. আরিফ-উজ- জামান, পুলিশ সুপার মো. কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) খাইরুল আলম প্রমুখ।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। এরপর এই আনন্দ শোভাযাত্রা মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে নাম পায়। শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পেয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রাণের উৎসব বর্ষবরণ। বাংলা বর্ষবরণে বাঙালির নানা আয়োজনের মধ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রা অন্যতম। ২০১৬ সালে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় এই শোভাযাত্রা। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিভিন্ন প্রাণীদের প্রতীকী হিসেবে হাতি, হরিণ, বাঘ, বানর, পায়রা, মাছসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতি রাখা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন অক্ষর ও ঢোল তবলার ছবি রেলিতে প্রদর্শন করা হয়।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের আয়োজনে বাঙালির বর্ষবরণে অন্যতম অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন স্কুল শিক্ষার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। রমজানের কারণে আয়োজনের পরিসর ছোট করার পরিকল্পনা থাকলেও শেষ প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হচ্ছে বলে জানান আয়োজকরা।
বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা অংশগ্রহণ করেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো রয়েছে পুরো এলাকা। সর্বোচ্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
কুষ্টিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে সকাল থেকে ডিসি কোট প্রাঙ্গণে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরুর জন্য অপেক্ষা করেন বিভিন্ন নানা বয়সী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সেখানে কথা হয় কালেক্টরেট স্কুলে এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী তানহার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করি। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ না করলে বৈশাখকে অপূর্ণ মনে হয়।’
এদিকে এ শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসা নারীদের বেশিরভাগের পরনে শাড়ি আর মাথায় নানা রঙের ফুল দেখা গেছে। পুরুষদের পরনে সাদাসহ নানা রঙের পাঞ্জাবি। অনেকেই শরীরে এঁকেছেন বাঙালির ঐতিহ্যের নানা প্রতীক।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১৪ এপ্রিল ২০২৩

Discussion about this post