সুদীপ্ত শাহীন,লালমনিরহাট:
সিন্ডিকেট করে লালমনিরহাটে মাঠ পর্যায়ে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে ১টি অসাধু চক্র। প্রশাসন বলছে কোন সংকট নেই, পর্যাপ্ত সার মজুদ আছে। চাহিদামত বিসিআইসি ও বিএডিসি ডিলারদের প্রতিমাসে সারের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রচুর সার সরকারি গোডাউনে মজুদ রয়েছে। আবার মাঠ পর্যায়ে সারের বাজারে চিত্র ভিন্ন। তৃণমূলের কৃষক কে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হচ্ছে।
সেচ নির্ভর বোরো ধান, ভূট্টা, আলু, সরিয়াসহ নানা শীতের ফসল রোপনের ভরা মৌসুম চলছে। ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ, এমওপি, প্যাকেটজাত জৈবসার সহ সকল রাসায়নিক ও প্যাকট জাত সারের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। মাঠে কৃষক জমি চাষ করে বোরো ধানের চারা রোপনের প্রস্তুতি নিয়েছে। আলু, ভুট্টাসহ নানা ফসল ফলাতে জমি তৈরি করে রেখেছে। কৃষক চাহিদামত সার বাজার হতে কিনতে পারছেনা। জেলায় ৫টি উপজেলায় ৫২টি বিসিআইসির ডিলার রয়েছে। এসব ডিলার সরকারের বরাদ্দকৃত সার উত্তোলন করে নিজেদের গোডাউনে নিয়ে গেছে। আবার সরকারের বিআরডিসির ডিলার গণ প্রতিমাসের বরাদ্দকৃত সার পেয়েছে। প্রচুর পরিমান সার মজুদ রয়েছে। তারপরও রহস্যজনক কারণে মাঠ পর্যায়ে সার চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে আবার জেলায় সার সিন্ডিকেট চক্র এমওপি সার মার্কেট হতে উধাও করে রেখেছে।
একটি সূত্রের দাবি, প্রতিটি ইউনিয়নের বিপরীতে একজন করে বিসিআইসির সার ডিলার রয়েছে। এসব সার ডিলারের প্রতিটি ইউনিয়নে বিক্রয় কেন্দ্র থাকার কথা কিন্তু ডিলারদের নিজস্ব কোন বিক্রয় কেন্দ্র নেই। সেখানে কোন খুচরা বিক্রেতার সারের দোকানে ইউনিয়নের ডিলার গণ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সেটাকে বিক্রয় সেন্টার বানিয়ে রেখেছে। প্রশাসন পরির্দশনে গেলে সেটাকে ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে দেখিয়ে কাগজপত্র ঠিকঠাক করে রাখে।
বিজিবির নামপ্রকাশ না করার শর্তে জানান, দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে সার ভর্তি গাড়ি আটক করা হয়েছিল। পরে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে ছেড়ে দিয়েছি।
সার ব্যবসায়িদের অনেকে অভিযোগ করেন, সরিষায় ভুত রয়েছে। খোদ বিএডিসির ভিতরে দূর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা কর্মচারি রয়েছে। তারা মোটা দাগে ঘুষ না দিলে সার ছাড় দিতে চায়না।
এদিকে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে হাতীবান্ধার দোয়ানিতে অভিযান চালিয়ে সার সিন্ডিকেটের দুই সদস্যকে জরিমানা করেছে ও প্রায় একশত বস্তা ইউরিয়া সার আটক করেছে। পরে সারগুলো কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নায্য দামে কৃষকদের মাঝে বিক্রি করেছে।
মোগলহাটের কৃষক সহিদার রহমান জানান, টিএসপি সার এক হাজার টাকা বস্তা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬শত টাকা। এমওপি ৭৫০ টাকার মূল্যের পরিবর্তে এক হাজার ৫০ টাকা, ইউরিয়া সার সরকারি দরের চেয়ে প্রতিবস্তা স্থান ভেদে একশত হতে দুই শত টাকা অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকা ছাড়া মিলছে না কোন সার।
সাপ্টীবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, সরকারি ভতুর্কির সার দিয়ে সরকার তামাক চাষে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তামাক কোম্পানি বা সিগারেট কোম্পানি গুলো কৃষক কে প্রণোদনা দিয়ে তামাক চাষে উৎসাহিত করে। তামাক কোম্পানিগুলো সরকারি ভাবে সার কিনে তামাক চাষে তৃণমূলের কৃষককে সরবরাহ করার কথা কিন্তু জেলা ব্যাপক হারে তামাক চাষ হলেও কোন তামাক চাষের কোম্পানি সরকারের কাছে সরকারের প্রণোদনা মূলের ছাড় গ্রহন করে এক বস্তাও সার কিনেছে এমন তথ্য কৃষি বিভাগ দিতে পারেনি।
সারপুকুরের কৃষক ফেরদৌস আলী জানান, গোডাউন থেকে উত্তোলনকৃত সার ট্রাক ইউনিয়নে না নিয়ে শহরের গোডাউনে মজুদ রাখছে কতিপয় ডিলার।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলায় কৃষি কার্ডধারী কৃষকের সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৮ জন। তবে কার্ড এর বাহিরের কৃষক রয়েছে অনেক। অক্টোবর মাসে ৫২ জন বিসিআইসি ডিলার কে ৭শত ৭৪ মেঃ টন এমওপি (পটাশ) সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নভেম্বর মাসের জন্য বাড়িয়ে ১ হাজার ১শত ২৭ মেঃটন এমওপি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের বরাদ্দও বিতরণ চলছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পচিালক মোঃ হামিদুল জানান, সার অবৈধ মজুদ রাখার কোন উপায় নেই। প্রতিটি ডিলারের নিকট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতার মাধ্যমে সার বিক্রি করা হচ্ছে। কেউ অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
ওদিকে বিসিআইসি ডিলার সমিতির সাধারন সম্পাদক মনোয়ার হোসেন দুলু জানান, সার মজুদ রাখলে তার বিরুদ্ধে সমিতি ব্যবস্থা নিবে । প্রশ্ন করা হয়, কেন তাহলে সারের দাম অতিরিক্ত রাখা হচ্ছে। আবার প্রশাসন অবৈধমজুদকৃত সার অভিযানে উদ্ধারও করছে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৫টি উপজেলায় ৫২ জন বিসিআইসির সার ডিলার রয়েছে। শুধুমাত্র লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১১ জন ডিলার তাদের নিজেদের সার নিজেরা উত্তোলন করে থাকে। বাকি ৪১ জন ডিলারের সার একজন ব্যক্তি উত্তোলন করে থাকে। সকল ডিলারের লাইসেন্স একজন ডিলারের কাছে মোনাফা নিয়ে ডিলার গণ মৌখিক হস্তান্তর করে রেখেছে। কৃষক বিসিসিআই ডিলারদের সার ক্রয় -বিক্রয়ের মেমো চাইলে দেয়া হয়না। ডিলার গণ প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতার ছত্র ছায়ায় থাকায় নিরীহ কৃষক এক বস্তা সার কিনতে গিয়ে কোন ঝুঁটঝামেলায় যেতে চায় না।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, সারের কোন সংকট নেই। পর্যাপ্ত সার সরবরাহ ও মজুদ রয়েছে। সার মজুদ করে সিন্ডিকেট করলে ভ্রামান্যমান আদালতের মাধ্যমে ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
দৈনিক দেশতথ্য/এসএইচ//

Discussion about this post