নিজস্ব প্রতিনিধি : কুষ্টিয়া কুমারখালি উপজেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের মডেল ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কৃষি কর্মকর্তা রাসেলের বিরুদ্ধে ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ও ঠিকাদার মিলে প্রতিটি ঘরের অর্ধেক বরাদ্দ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রকৃত যোগ্য কৃষকদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে স্বজনপ্রীতি করে কৃষকদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে যারা এই মডেল ঘর পেয়েছেন, তাদের অনেকের ঘরের নির্মাণ এখনো শেষ হয়নি। অথচ পেঁয়াজ উঠানো শেষ হয়েছে আরো একমাস আগে। যে কারণে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
অন্যদিকে বরাদ্দ পাওয়া কৃষকদের প্রশিক্ষণের বরাদ্দের টাকা নিয়ে হয়েছে নয় ছয় ।
জানা যায়, ফলন ও দাম ভাল হওয়ায় প্রতিবছরই কুমারখালি বাড়ছে পেঁয়াজের আবাদ। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে এখানকার উৎপাদিত পচনশীল ফসল পেঁয়াজের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশই নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁয়াজ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এমন অবস্থায় পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল প্রান্তিক পেঁয়াজ চাষিরা।
এর ফলে কৃষিবিপণণ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে কুমারখালি ১৫ টি ঘরের বরাদ্দ দেওয়া হয়।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাঠ কর্মকর্তা রাসেল বিশ্বাসের যোগসাজশে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে এ সকল সরকারি ঘর। এছাড়া ঘরের ডিজাইন বিকৃত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘর নির্মাণে অথবা বিতরণের বিষয়ে কোন মতামত নেওয়া হচ্ছে না কুমারখালি উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসের। এমনকি কুমারখালি উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি অফিসে নেই এ সকল ঘরের তালিকা।
সরেজমিনে দেখা যায় , ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ প্রতিটি ঘর বাড়ির উঠান বা ফাঁকা জায়গায় মাত্র এক শতাংশ জমিতে টিন-বাঁশ, কাঠের বাটাম, লোহা ও কংক্রিটের সমন্বয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এই ঘরের আয়তন প্রায় ৩৭৫ বর্গফুট। প্রতিটি ঘরে বাতাস চলাচলের জন্য ৬টি বায়ু নিষ্কাশন পাখা সংযুক্ত রয়েছে। মূলত ভ্যান্টিলেশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকার কারণেই সংরক্ষিত পেয়াজ পঁচবে না। তাপমাত্রা ও অর্দ্রোতা পরিমাপের জন্য প্রতিটি ঘরে হাইগ্রোমিটার রয়েছে। এই উপজেলার বেশিরভাগ ঘরের কাজ এখনও শেষ হয় নাই। ঘর করতে অনেক কৃষকে দিতে হয়েছে সিমেন্ট, বালি ও ইট। ঘরের পিলারের ঢালায়ে খোয়া ও রডেও করেছে অনিয়ম। প্রত্যেক কৃষকে ঘর তৈরীর মিস্ত্রিকে প্রায় মাস খানেক থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। প্রতিটি ঘরে সংরক্ষণ করা যায় ৩শ থেকে সাড়ে ৪শ মণ পেঁয়াজ ও তিনটি আলাদা আলাদা স্তরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন অন্তত ১০ জন কৃষক। কিন্তু রাখছেন মাত্র একজন কৃষক। এ ঘরে নয় মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ ভালো থাকে। পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণের দেশীয় মডেল ঘরের আশায় পেঁয়াজ চাষিরা তাদের পুরাতন ঘর মেরামত না করায় এখন পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
চাঁদপুর ইউনিয়নের বরইচারা গ্রামের খয়বার আমিনের ছেলে বাবু মোল্লা প্রতিবেদকে বলেন, আমার ঘরের কাজ এখনও শেষ হয় নাই। ঘরের কাজের বিষয়ে রাসেলকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে ঈদের পরে কাজ করলে ভালো হবে। সে আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চেয়েছে ঘরবাবদ আমি বলেছি ঘরের কাজ শেষ হলে আমি আপনাদের খুশি করব কিন্তু এখন না। এই ঘর করতে আমার কাছ থেকে সিমেন্ট চেয়েছিল আমি বলেছি আপনারা করেন আমি পরে দিব। এই ঘরের মেঝে করতে আমাকে বালি ও ইট দিতে হয়েছে। যতদিন এই ঘরের কাজ করেছে মিস্ত্রি সবাইকে আমার তিন বেলা খেতে দিতে হয়েছে এবং থাকতে দিতে হয়েছে।
এই বিষয়ে অন্য কৃষক বাগুলহাট ইউনিয়নের দমদম গ্রামের সাত্তার মুন্সির ছেলে আতিয়ার রহমান বাড়িতে না থাকায় তার স্ত্রীর সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি জানান,রাসেল আমার বোনের ছেলে তাই আমরা পাইছি।
“রাত্রির মধ্যে হুরপার করে করলি” পিলার ভালো হয়নি। ঘর ভাড়া দেবার কথা জানতে চাইলে বলেন আমারই দেছে তাই আমারই পিয়াজ রাখি, কেউ যদি ভাড়া নেয় নিবি’। ঘর নিতে কত টাকা লেগেছে সে প্রসঙ্গে বলেন,”টাকা পয়সা কত লাগেছে আমার ছেলে জানে আমার কাছে কয়ও না এসব কথা, বলে যা করিছি আমরা করেছি তোমার এত শোনার দরকার নেই। তবে তিনি আরো জানান, টাকা ছাড়া কোন কাজ হয়রে বাবা। ঘরে কাজ করার সময় তিন বস্তা সিমেন্ট দিয়েছি আর ওরা যতদিন কাজ করেছে ততোদিন খাতি দিয়েছি। কোন মাল
বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিসান এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার মনোয়ার হোসেনের মুঠো ফোনে ফোন দিলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এই বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তা রাসেলের সাথে কথা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আমার দায়িত্ব ঠিকমতোই পালন করছি কোন অনিয়ম করিনা।
কুমারখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে কল করলে তিনি ফোন ধরেন নাই। করেন নাই
কুষ্টিয়া জেলার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, আমার পেঁয়াজের ঘরে কোন অভিযোগ নাই। কোথায় অভিযোগ পায়ছেন কোনডা দেখছেন সেডা আমি জানি। এজাবত কেউ অনিয়ম পাই নাই। আপনি কোথায় অনিয়ম পাইছেন আমার জানা নাই।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তৌফিকুল রহমান বলেন, আমি আসার পরে এই রকম কোন ঘর দেওয়া হয়ছে কিনা আমার জানা নাই হয়তো আমি আসার আগে হয়ে থাকতে পারে।

Discussion about this post