তামাক কোম্পানি যদি তার প্রান্তিক চাষীদের সুবিধার্থে ধান চাষে সহযোগিতা নির্দেশক “টোব্যাকো-কর্পোরেট রাইস রেসপনসিবিলিটি’ কাষ্টমাইজ্ড সি.এস.আর প্লাটফর্মে আসে, তবে তামাকের কর্পোরেট কোরে সমন্বিত চাষ-সহযোগী পরিচয়ের প্রান্তিক চাষীদেরকে তারা ব্রী'র নিয়মিত গুচ্ছ ক্যাম্পে হাতেকলম প্রশিক্ষণের জালে গুটিয়ে আনতে এবং পক্ষান্তরে মাঠে ফিরিয়ে ফলোআপে রাখাতেও সক্ষম,তামাকে যেমন প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। সেকারণে তামাকে প্রতিশ্রুত ধানি জমি ও চাষীকে পরবর্তী তামাক মৌসুমের প্রস্তুতিতে ধরে রাখতে মাঠে তাদের সারা বছরের যেকোনো সুবিধামত সময়কে ব্রী'র ধান চাষ প্রযুক্তির কৃষকীকরনে ব্যবহারের যে সুযোগ রয়েছে- সেটাই এখানে মূল ফাইন্ডিংস। লক্ষ্য হচ্ছে ধান চাষের উন্নয়নে তামাক কোম্পানির অবদানযোগ্য সক্ষমতাকে, কৌশলগত খাদ্য নিরাপত্তায় চিহ্নিত করা, যতক্ষন তামাক নিষিদ্ধ না হচ্ছে।
তামাক কোম্পানিগুলো যেহেতু কৃষকের আয়-দায় এর মোট নির্ভরতার ধানি জমিকেই মৌসুমী তামাকে মাইগ্রেটের মূল সুফলভোগী ও খাদ্যনিরাপত্তাকে লুজারকারি এবং তামাক কোম্পানির আর্থ-সামাজিক যাবতীয় উচ্চতার বুনিয়াদ হচ্ছে মাঠে থাকা তার চাষ-সহযোগী পরিচয়ের প্রান্তিক চাষীগন। অতএব তামাক কোম্পানির ইকোসিস্টেমে কৌশলগত খাদ্যনিরাপত্তার দায়িত্বকে শেয়ার করতে হবে, কেননা খাদ্যনিরাপত্তা হচ্ছে রাষ্ট্রিয় স্থিতিশীলতার প্রথম রক্ষাকবচ।
ধান চাষীদেরকে তামাকে উচ্চ ফলনের জটিল কৌশলে দক্ষ বানাতে সিদ্ধহস্ত তামাক ব্যাবস্থাপনার কৃষক চেইনকে একীভূত ভাবে ব্রী’র ধানি প্রযুক্তি সম্প্রসারনে শেয়ারের সাশ্রয়ী কৌশলের মূলে- আমাদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদার তুলনায় ক্রমহ্রাসমান আবাদী জমির বিপদজনক ভারসাম্যকে উপেক্ষা করে যখন তামাক কোম্পানিগুলো তাদের চাহিদামতো ধানের জমিতে তামাক চাষকল্পে প্রান্তিক-চাষীদেরকে জমির বিপরীতে ঋন ও উপকরন সহায়তা এবং উচ্চ মূল্যে তামাক ক্রয়ের লোভনীয় অফারে ‘চাষ-সহযোগী’ হিসেবে অধীগ্রহনের মূল বেনিফিসিয়ারি, তখন সেই অধিভুক্ত জমিতে ধানচাষের উন্নতি সাধনে
তামাক বানিজ্যের ইকোসিস্টেমকে “অবশ্যই কাজে লাগতে হবে। কারন তামাক কৃষকের কোন নিজস্ব কৃষিপণ্য নয়, বরং দক্ষ ব্যাবস্থাপনার কঠোর নিয়ন্ত্রনে উৎপাদিত একটা কর্পোরেট প্রোডাক্ট এবং কোম্পানির চাহিদার বাইরে শততই একটি বিপদ্জ্ব্বনক বর্জ্য- এটি পশু খাদ্যে অচল, পুড়ালে বায়ু, ডোবালে পানি, চাপা রাখলে মাটি দূষণ,আবার তামাক শুকাতে গো-খাদ্যের অপব্যবহারে পশু পালন ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে৷ এসবের দায়ে তামাক কোম্পানি মাত্র’ই, “টোবাকো-করপোরেট রাইস রেসপন্সিবিলিটির” সিএসআরে পূনর্গঠিত হওয়ার যে দাবি, তার বিপরীতে বাস্তবতা হচ্ছে- সরকারী ট্যাক্স হলিডের আওতায় ব্যবসায়ীক সুবিধামত সিএসআর বাস্তবায়নের কৌশলে, উল্টো তামাক বানিজ্যের সামাজিক প্রডাব বৃদ্ধির যে এন্টি-ট্রাষ্ট প্র্যাকটিস, সেক্ষেত্রে বলা চলে যে “Unity is power but parallel unity that vested power always curbs the liberal unity as corrupt,and their absolute power is absolutely corrupt” । তার চেয়ে “টোবাকো-করপোরেট রাইস রেসপন্সিবিলিটি” অবশ্যই অগ্রগন্য।
বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউট (ব্রী) থেকে প্রত্যায়িত চাষ প্রযুক্তিসমুহ সীমিত পরিসরে কৃষক পর্যায়ে আসতে দশক পেরিয়েও অজনপ্রিয়তার মূলে, তৃণমূলে প্রযুক্তি আত্মস্থে দূর্বলতা জনিত অনাস্থা, অথচ তামাকের নিত্যনতুন জটিল কৌশলে সেই একই মাঠের কৃষকই কিন্তু আপডেটেড। অতএব সমস্যা কৃষকের চেয়ে কর্তৃপক্ষে।
দেশে ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদার বিপরীতে ক্রমহ্রাসমান আবাদী জমির এক পরিসংখ্যান মতে- সন্নিকটস্থ ২০২৫ সালে ধানের গড় উৎপাদন বেড়ে হতে হবে হেক্টর প্রতি ৪.৬ মেট্রিকটন। এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞদের যে সাবধানী-অশাবাদ; সেক্ষেত্রে ধানের মাঠে থাকা তামাক কোম্পানিগুলোকে স্ব-স্ব মাঠের দায়িত্বকে দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে।
ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরাপত্তা ও প্রায় ৭০ ভাগ কৃষিজীবীর শিক্ষা-চিকিৎসা সহ সামষ্টিক ক্রয় ক্ষমতার পূর্ণ নির্ভরতার এই ক্রমহ্রাসমান আবাদী জমিতে বর্ধিত উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিন্তু আবাদি জমির সুস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার স্বীকৃত। যেমন ধানে এলসিসি পদ্ধতিতে ইউরিয়ার যথেচ্ছ অপ্প্রয়োগ নিরোধের পাশাপাশি ড্রাম সীডারে সারিবদ্ধ বীজ বপনের ফলে বীজতলার অত্যাচার বিহীন চারার জীবনচক্রের সুবাদে ১৫%+ বর্ধিত ফলনের সাথে দিন১৫ সময়ের সাশ্রয়ে জমির কিছুটা বিশ্রামজনিত যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা- এহেন চাষ কৌশল সম্প্রসারণে বরং মাঠে থাকা তামাক কোম্পানিকেই দায়িত্বশীল করতে হবে। তামাকে ভূমির পুষ্টি ক্ষয়, ধানে অতিব্যবহৃত ইউরিয়ার রাসয়নিকীকরণ এবং আবাদী জমির অবিশ্রাম ব্যবহারের মোট সংকট সমাধানে বিএটিবি‘র নীতিমালাও কিন্তু টোব্যাকো-কর্পোরেট রাইস রেসপন্সিবিলিটি’র সমার্থক। স্বভাবতই মাঠে থাকা তামাক কোম্পানির উপরেই ব্রী'র মাঠকর্ম সম্প্রসারণের প্রথম দায়িত্ব বর্তায়,যা সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক ।
এ পর্যায়ে দুটি বিষয়ে আলোকপাত করতে চাইঃ
(ক) তামাক সম্প্রসারণের আশঙ্কাঃ- বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা গৃহীত তামাক বিরোধী শ্লোগান কার্যতঃ সেবনকে ‘সতর্কীকরনে’ সীমিত, শিল্পকে প্রতিরোধ করে না।
মোট কথা, খাদ্য-নিরাপত্তাহীনতার আঘাত যদি মানুষকে সেভাবে স্পর্শ না করে তবে নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিকর জেনেও অর্থদায়ি তামাক চাষে কেউই নিবৃত্ত হবে না৷ তামাক চাষ যেহেতু কোম্পানির চাহিদায় সীমিত,ফলে ধানেও উন্নতি হলে তখন উন্নত জীবন মানের কৃষকের কাছে কোম্পানিকে তামাকের পণমূল্যও বেড়াতে হবে ।
(খ) আন্তঃকৃষি সংলাপঃ কৃষক পর্যায়ে কথা বলে অভিজ্ঞতা হচ্ছে,টুকরা টুকরা কাজের ফলে কৃষি তথ্য ও উপকরণের যথাযথ কৃষকীকরণ ঘটেনি৷ ‘ফাও’ এর আন্তঃকৃষি সংলাপও সেভাবে পৌছেনি,অথচ জরুরি ছিল। সেক্ষেত্রে ধানের মাঠে থাকা তামাক কোম্পানিকে কাজে আসার নাম "টোব্যাকো-কর্পোরেট রাইস রেসপনসিবিলিটি", যেখানে ব্রী’র আগ্রহ থাকলেও, বিএটিবি’র রয়েছে- আশংকা৷ তবে সামাজিক বনায়নের মত বিস্তৃত কর্মসূচীর পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে কুষ্টিয়াতে বিএটিবি’র নিয়মিত চিত্রপ্রদর্শনী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় পর্যায়ে কর্পোরেট হান্টিং কর্মসূচির মত চলমান প্রমোশনাল কাজের বিপরীতে “টোব্যাকো-কর্পোরেট রাইস রেসপন্সিবিলিটির"এই রাইস ভিশন সি.এস.আর'কে যে কোন রকমের উপেক্ষার বরাতে একটি উদাহরনে শেষ করছি৷
বাংলাদেশী একটি দৈনিকের উদ্বোধনী সংক্ষায় নোয়াম চমস্কি উদ্বৃত করেছেন- তিনি ২০০৮ সালের ২৬ অক্টোবর বাংলাদেশের নিউনেশন পত্রিকায় পড়েছেন যে, ‘বিশ্বের প্রভাবশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচাতে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করার কথা বলা হচ্ছে৷ অথচ খাদ্যসংকট মোকাবেলায় বছরের শুরুতে রোমে যখন সে তুলনায় নিতান্ত কম, মাত্র ১২.৩ বিলিয়ন ডলার সাহায্য চাওয়া হয়েছিল,তখন পাওয়া গিয়েছিল মাত্র এক বিলিয়ন ডলার৷ জাতিসংঘের এমডিজি আলোকে আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে অন্তত দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীদের দারিদ্রতা দূর করার যে স্বপ্ন আমরা দেখছি তাকে এখনো যে অবাস্তব মনে হচ্ছে তা সম্পদের স্বল্পতার কারনে নয়, বরং বিশ্বের দরিদ্রদের নিয়ে সত্যিকারের দায়িত্বশীলতার অভাবের কারনে৷’ । (০৮ এপ্রিল ২০২২, কুষ্টিয়া।)

Discussion about this post