কেরানি থেকে সভাপতি, একই পদ আগলে আছেন ২৫ বছর

কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের মৃত্তিকাপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সাবেক কেরানির (করণিক) বিরুদ্ধে একই মাদ্রাসার সভাপতির পদ ২৫ বছর ধরে দখলে রাখার অভিযোগ।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের মৃত্তিকাপাড়ায় ১৯৯৭ সালে এলাকাবাসীরা মিলে মৃত্তাকাপাড়া দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওই মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় উজানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হামিদুর রহমানের ঘনিষ্ট এক ব্যক্তি। এর পর মৃত্তিকাপাড়া মাদ্রাসার সভাপতিকে দিয়ে কেরানি (করণিক) পদে নিয়োগ নেন সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান মাদ্রাসা সভাপতি মো. হামিদুর রহমান। সভাপতি অন্য ব্যক্তি হলেও কেরানি (করণিক) হওয়া শর্তেও মো. হামিদুলের নির্দেশনায় চলতে থাকে ওই মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম। মো. হামিদুল ওই মাদ্রাসার সভাপতিকে দিয়ে নিজের আত্মীয় স্বজনকে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করিয়ে নেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। পরবর্তীতে মো. হামিদুল রহমান চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে ওই মাদ্রাসার সভাপতি হিসেবে বোর্ড থেকে নিজের নাম অনুমোদন করিয়ে আনেন।

এর পর আরও অনিয়ম দূর্ণীতিতে জড়িয়ে পরেন তিনি। পরে মো. হামিদুর রহমান তালিকাভুক্ত রাজাকার পুত্র ও শিবিরের তালিকাভুক্ত স্বক্রিয়কর্মী ও বর্তমান জামায়াত কর্মী মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদকে অর্থের বিনিময়ে ওই মৃত্তিকাপাড়া মাদ্রাসার সুপার হিসেবে নিয়োগ দেন। এর পর সভাপতি মো. হামিদুল রহমান ও মাদ্রাস সুপার মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদ মিলে বেপরোয়া হয়ে উঠেন নানা অনিয়মে। তাদের বেপরোয়া অনিয়মে দেখে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। তাদের দুজনে বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, মাদ্রাসার গাছ বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ ও অন্যের জমি দখলসহ মাদ্রাসার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে৷ এর মধ্যে বেশ কয়েকবার মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচন না দিয়ে মো. হামিদুর রহমানকে সভাপতি করে এডহক কমিটি পাস করিয়ে তিনিই সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আর এডহক কমিটি বোর্ড থেকে অনুমোদন করাতে সহযোগিতা করেন মাদ্রাসা সুপার মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদ।

এর পর সরকার স্কুল পরিচালনা কমিটিতে পর পর দুইবারের বেশি সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে পারবে না এমন নীতিমালা গঠন করলে সভাপতি মো. হামিদুর রহমান সভাপতির পদ ছাড়তে বাধ্য হন। এর পর নির্বাচন না দিয়ে সাবেক সভাপতি ও মাদ্রাসা সুপারের আস্থাভাজন ব্যক্তিকে সভাপতি করে এডহক কমিটি পাস করিয়ে নিয়ে আসেন মাদ্রাসা সুপার মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদ। তার সেই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে আবারও মো. হামিদুর রহমান নিজেকে সভাপতি করে এডহক কমিটি অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আসেন। এভাবে মো. হামিদুর রহমান কোন নির্বাচন না করে ২৫ বছর ধরে সভাপতির পদ আগলে আছেন। দীর্ঘদিন সভাপতির দায়িত্বে থাকার সুযোগে মো. হামিদুর রহমান ও মাদ্রাসা সুপার মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদ যোগসাজস করে মৃত্তিকাপাড়া দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকসহ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন বলে দীর্ঘদিনেরল অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এছাড়াও স্কুলের বহু বছরের পুরাতন লক্ষাধিত টাকার গাছ বিক্রি করে সেই টাকা মাদ্রাসা ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও জমি দখল করে রাখারও অভিযোগ রয়েছে ওই মাদ্রাসার সভাপতি মো. হামিদুর রহমান ও মাদ্রাসা সুপার মো. ফয়জুল্লাহ অর রশিদের বিরুদ্ধে। এসবের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেন তাদের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা সুপার থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে জিডি করেন এবং পুলিশ দিয়ে হয়রানী করার ভয় দেখিয়ে আসছেন।

এসব দূর্ণীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উজানগ্রাম ইউনিয়নের মৃত্তিকাপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সামনে মৃত্তিকাপাড়া গ্রামের সাধারণ জনগণ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল এবং গণস্বাক্ষর কর্মসূচী পালন করেন এলাকাবাসী। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানসহ কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), কুষ্টিয়া, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কুষ্টিয়া সদর উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগও দেন তারা।

পরে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এসব অভিযোগ তদন্ত করে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রমজান আলী আকন্দ বলেন, মৃত্তিকাপাড়া মাদ্রাসার সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি ইতিমধ্যে সরেজমিনে ওই মাদ্রাসায় তদন্তের জন্য গিয়েছিলাম। আমরা তিনটা বিষয়কে টার্গেট করে তদন্তের কাজ করছি। গাছ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ও একই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি থাকার বিষয় নিয়ে কাজ করছি। এখনো তদন্তের কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে। সেগুলো শেষ হলেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এরপর সংশ্লিষ্টরা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।