কোটালীপাড়ায় সিত্রাংয়ের হানায় প্রায় ২শত ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি। মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সব মিলিয়ে এ উপজেলায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বিভিন্ন দপ্তরের প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে। তবে এ হিসাব আরো বাড়তে পারে।
এদিকে গত ৩দিন বিদ্যুৎ না থাকায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষ ভোগাপন্তিতে আছে। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান হতে আরো ৫/৭ দিন লাগতে পারে বলে উপজেলা বিদ্যুৎ অফিস থেকে জানা গেছে।
গত সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার উপর দিয়ে এই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বয়ে যায়। উপজেলার কুরপালা গ্রামের দিনমজুর কালাম শেখ ও পান্নু হাওলাদার বলেন, তাদের ঘরগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘরগুলো মেরামতের জন্য কোন টাকা পয়সা নেই। সরকারি সহযোগিতা না পেলে এই বিধ্বস্ত ঘরেই ছেলে মেয়েদের নিয়ে বসবাস করতে হবে।
পোলসাইর গ্রামের অরুন বৈরাগী বলেন, আমার ২বিঘা জমির টমেটো, ১বিঘা জমির ফুলকপির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমার কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তালপুকুরিয়া গ্রামের খোকন রায় বলেন, সিত্রাংয়ের আঘাতে আমার ২টি পোল্ট্রি সেড সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে। সেডে থাকা ১হাজার মুরগি মারা গেছে। এতে আমার প্রায় ৫লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি একেবারে নিঃস হয়ে গেছি। সরকারি সহযোগিতা না পেলে আমার পথে বসতে হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিটুল রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে এ উপজেলায় ৩দিন ধরে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। আমাদের প্রাথমিক তথ্য মতে এই বৃষ্টির পানি ও বাতাসে মৌসুমী ফসলের প্রায় ১০কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে ২/১ দিনের মধ্যে পানি না শুকালে এই ক্ষতির পরিমান আরো বাড়তে পারে।
উপজেলা প্রকৌশলী এম এ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিত্রাংয়ের আঘাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ রাস্তা বিধ্বস্ত হয়েছে। আমরা প্রাথমিক ভাবে ৫কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারনা করছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাশেদুর রহমান বলেন, আমরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত বিধ্বস্ত প্রায় ২শত ঘরবাড়ির তালিকা পেয়েছি। তবে এর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সিত্রাংয়ের আঘাতে উপজেলা পল্লী বিদ্যুতের ৫০টি খুঁটি ভেঙ্গে ও ২শত খুঁটি হেলে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিড়ে গেছে। এসব মেরামত করতে আমাদের প্রায় ৫ থেকে ৭দিন সময় লাগবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, আমাদের প্রাথমিক তথ্য মতে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ, বনবিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও কৃষি বিভাগ নিয়ে এ উপজেলায় সিত্রাংয়ের আঘাতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মাঝে বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়া শুরু করেছি। আমাদের এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
তবে এই উপজেলায় ক্ষতির পরিমান আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন উপজেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//অক্টোবর ২৬,২০২২//