গৌরাঙ্গ লাল দাস,কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ)প্রতিনিধি :
প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে একের পর এক বিল। অপরিকল্পিত ভাবে কাটা হচ্ছে মাছের ঘের। নষ্ট হচ্ছে ফসলী জমি। ধবংস হচ্ছে দেশীয় মাছ ও জীব বৈচিত্র।
ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন আইন থাকলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই আইনের তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিত ভাবে কেটে যাচ্ছে একটার পর একটা মাছের ঘের।
আর এই বিল, দেশীয় মাছ, জীব বৈচিত্র, তিন ফসলী জমি রক্ষা ও অপরিকল্পিত ভাবে মাছের ঘের কাটার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
আজ মঙ্গলবার উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের বুরুয়া দক্ষিণপাড়া এলাকার নারী-পুরুষ বুরুয়া বিলে হাটু পানিতে নেমে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় গৃহিণী চায়না হালদার, নয়নতারা মন্ডল, আধুরী বৈদ্য, সবিতা মজুমদার, কৃষক মঙ্গল বিশ্বাস, অরবিন্দ দত্ত, পরিতোষ হাজরা, বুদ্ধিমন্ত বিশ্বাস, পরিতোষ মজুমদার, মৃনাল বৈদ্য বক্তব্য রাখেন।
বুদ্ধিমন্ত বিশ্বাস বলেন, এই বুরুয়া বিলে গত ৪০বছর ধরে আমি দেশীয় মাছ ধরে সংসার চালাই। এখন এখানে ঘের করা হলে আমার অন্য পেশায় গিয়ে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। আমার মতো আরো অনেকে এই বিল থেকে দেশীয় মাছ ধরে সংসার চালায়। তাই আমরা এলাকাবাসী চাইনা এখানে ঘের কেটে এই দেশীয় মাছ ধবংস করা হোক।
চায়না হালদার বলেন, এই বিল থেকে ঘাস কেটে আমরা আমাদের গরুকে খাওয়াই। এখন এখানে ঘের কাটলে এই বিলে আর ঘাস পাওয়া যাবে না। আর ঘাস পাওয়া না গেলে আমাদেরকে গরু পালনে সমস্যায় পড়তে হবে।
মঙ্গল বিশ্বাস বলেন, এই বিলের উচু এলাকার দিকে আমার চার বিঘা জমি। এই জমিতে তরমুজ, ধানসহ বছরে তিন ধরণের ফসল হয়। এই তিন ফসলী জমি কেটে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী আমাদের কাছে জিজ্ঞেস না করে মাছের ঘের কাটছে। এই ঘের তৈরী করলে আমাদের জমিতে আর তিন ধরণের ফসল হবে না। আমরা চাইনা এভাবে এখানে ঘের তৈরী হোক।
কৃষক মৃনাল বৈদ্য বলেন, এলাকার চিত্ত মজুমদার, স্বপন মজুমদার, দিলীপ মজুমদার, মনোতোষ মজুমদারসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি মিলে বুরুয়া বিল দখল অপরিকল্পিত ভাবে মাছের ঘের তৈরী করছে। এ ভাবে মাছের ঘের তৈরী করলে দেশীয় মাছ, জীব বৈচিত্র ধবংস ও তিন ফসলী জমি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই আমরা এই অপরিকল্পিত ভাবে মাছের ঘের কাটা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
মাছের ঘের তৈরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোতোষ মজুমদার বলেন, এই বিলে আমাদের প্রায় একশত বিঘা জমি আছে। এই জমি বছরের প্রায় অধিকাংশ সময়ই পানিতে ডুবে থাকে। আমরা সকলে মিলে বিলের কিছু এলাকায় বাঁধ দিয়ে এই পানি নামানোর জন্য একটি স্লুইসগেট নির্মাণের চেষ্টা করছি। এভাবে বাঁধ দিয়ে স্লুইসগেট নির্মাণের মাধ্যমে পানি নামালে আমাদের জমিগুলো আর অনাবাদি থাকবে না। এ জন্য আমরা কয়েকজন মিলে এখানে মাছের ঘের তৈরী করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, দেশীয় মাছ, জীব বৈচিত্র ও ফসলী জমি রক্ষার জন্য আমরা নানা ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এছাড়া ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন আইন মেনে পরিকল্পিত ভাবে যাতে মাছে ঘের কাটা হয় সে জন্য আমরা প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি। যদি কেউ এই আইন না মেনে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন ঘটায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দৈনিক দেশতথ্য//এইচ//