দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার বটতৈল-খাজানগর-পোড়াদহ এলাকায় গেল ৪৫ বছর ধরে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত সাড়ে চারশো চালকল গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বড় আকারের অটোমেটিক রাইস মিলই আছে ৫৫টি। দিনের পর দিন এখানে রাইচ মিলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কুষ্টিয়ার বটতৈল-কবুরহাট-খাজানগর হয়ে পোড়াদহ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে জুড়ে এসব রাইচ মিলে গড়ে উঠেছে। নানা কারণে কুষ্টিয়া পোড়াদহ এই সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত এই সড়কের দুই ধার দিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম। অন্য দিকে রয়েছে পোড়াদহ রেলওয়ে জংশন।
আবার দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের হাট রয়েছে পোড়াদহে। এছাড়াও কুষ্টিয়া থেকে যারা দর্শনা বর্ডার দিয়ে কলকাতা ভ্রমন, ব্যবসা কিংবা চিকিৎসার জন্য সড়ক পথে চলাচল করেন তারা এই সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই কুষ্টিয়া-পোড়াদহ সড়কে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি নিয়ে জনদুর্ভোগের যেন শেষ নেই। একদিকে ওয়ান ওয়ে রাস্তা তার ওপর রাইচ মিলের মালিকরা এই সড়কের দুই পাশে ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখে দিন রাত সব সময় মালামাল ওঠা নামা করান। যে কারণে সব সময় এখানে যানজট লেগেই থাকে। এছাড়াও রাস্তার দুই ধারে অন্তত ৩০ ফুট জেলা পরিষদের সরকারি ফাঁকা জায়গা থাকার কথা থাকলেও এখানকার অনেক রাইচ মিল মালিকরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি এসব জায়গা নিজেদের দখলে নিয়ে রাইচ মিলের জায়গা সম্প্রসারণ, গাড়ি-ট্রাক রাখার গ্যারেজসহ দোকান ঘর নির্মাণ করে ফেলেছেন।
একদিকে রাস্তাটি সরু তার ওপর রাস্তার দুই পাশের সরকারি জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে এই সড়কে নিত্য যানজট লেগেই থাকছে। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশেষ করে দোস্ত পাড়া কালভার্টের কাছে তানিয়া রাইচ মিলের সামনে, সুর্বণা রাইচ মিলের সামনে, খাজানগর আরব আলী রাইচ মিলের সামনে, রাজধানী রাইচ মিলের সামনে সব সময় রাস্তার একপাশে ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখে মালামাল লোড আনলোড করা হয়ে থাকে। যে কারণে এসব জায়গায় প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকছে। আর যানজটের কারণে এখানকার বাসিন্দাদের অফিস-আদালত এবং স্কুল কলেজে যেতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। তেমনি জনসাধারণকে চরম ভোগান্তিও পৌহাতে হচ্ছে। আবার দেখা গেছে অনেক জায়গায় মিল মালিকরা সরকারি ড্রেনের জায়গা দখল করে সেখানেও স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। যে কারণে এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাও অনেকাংশে ভেঙ্গে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সম্প্রতি সুবর্ণা রাইচ মিল জেলা পরিষদের সরকারি জায়গা দখল করে পাকা স্থপনা নির্মাণ করছে। জানা যায়, সুবর্ণা রাইচ মিলের ৩ টা অটো রাইচ মিল এক সাথে। কিন্তু এত বড় রাইচ মিলের নিজস্ব কোন গাড়ি পার্কিং’র ব্যবস্থা নেই। সম্প্রতি এই মিল মালিক জেলা পরিষদের সরকারি জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সী মো: মনিরুজ্জামান জানান, সরকারি জায়গায় কোন ভাবেই অনুমতি ব্যতিরেকে কেউ কোন স্থাপনা নির্মাণ বা দখল করতে পারবে না।
ইতোপূর্বে সুর্বণা রাইচ মিল কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করা হয়েছিল। তারা নোটিশের যে জবাব দিয়েছে তা সন্তোষজনক নয়। অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিন্টু ফকির উদ্বেগ প্রকাশ করে ও এলাকাবাসীর ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, মিল মালিকরা যদি নিজেরা নিজেদের ভালো না বোঝেন এবং জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা না করেন তাহলে কার কী করার আছে? স্থানীয়দের বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি প্রশ^স্তকরণসহ সরকারি জায়গা দখল করে যারা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন সেই সব দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//এপ্রিল ১৭,২০২২//

Discussion about this post