মেঝেতে তিন ইঞ্চি সিসি ঢা্লাইয়ের স্থলে কোথাও ১ ইঞ্চি কোথাও ২ ইঞ্চি কোন কোনটাতে দেওয়াই হয়নি। ইটের গাথুনিও ডিজাইন মতো হয়নি। নাম রক্ষার লক্ষে সুফল ভোগীরা নিরব। ইউএনও বললেন: অনিয়মের প্রমান পেলে খতিয়ে দেখবেন। খুলনার ডিসি বললেন এই প্রকল্পে অনিয়মের সুযোগ নেই। পি আইও অফিসের কার্য সহকারী কাজ দেখা শুনা করেন। নির্মাণ সামগ্রীর মান অনুপাত সম্পর্কে তিনি নাকি কিছুই জানেন না।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের গৃহ নির্মাণে ব্যপক অনিয়ম হয়েছে বলে বেশিরভাগ স্থানে ঘর উদ্বোধনের আগেই ভেঙ্গে পড়েছিল। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই বিব্রত হয়ে সঠিক তদারকির নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন হবে। ঘর নির্মানের সময় সবাই থাকবেন সজাগ বলে ভাবা হয়েছিল। খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় সজাগ থাকার তেমন প্রমান দৃশ্যমান হয়নি।
খুলনার ডুমুরিয়ায় উপজেলার বরাতিয়া ভদ্রানদীর পাড়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভূমিহীনদের জন্য দুর্যোগ সহশীল ঘর তৈরীতে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।
এমন খবরের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে উপজেলার বরাতিয়া ভদ্রানদীর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, দুর্যোগ সহনশীল ওই সব নির্মানাধীন ঘর গুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের ইট খোঁয়া সহ বিভিন্ন সামগ্রী।
এর আগে গ্রেটবীম ঢালাইয়ের দিন সেখানে গিয়ে দেখা যায় উপজেলা পি আইও অফিসের কার্য সহকারী মোঃ রিপন মিয়া সেখানে উপস্থিত আছেন। সেখানকার কাজে ব্যবহৃত খোঁয়া,বালু ও সিমেন্টের আনুপাতিক হার জানতে চাইলে সেব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি আরো বলেন “ইউএনও মহোদয়” তাকে পাঠিয়েছেন তাই তিনি কাজ দেখভাল করতে এসেছেন। যিনি কিছুই জানেন না তিনি কি দেখভাল করছে তা বোধগম্য নয়।

সেখানে কর্মরত একাধিক শ্রমিক জানান, ইউএনও স্যার যে জিনিস পাঠাইছে তাই দিয়েই তারা কাজ করছেন। আমরা নিন্ম মানের সমগ্রী ব্যাবহারের ব্যাপারে স্যারকে (ইউএনও) বলেছি। কিন্তু তিনি গুরুত্ব না দিলে তাদের কিই বা করার আছে।
তারা আরও জানান, প্রথমে ৩ ইঞ্চি সিসি ঢালাই দেয়ার কথা থাকলেও ঢালাই ঠিকমত দেওয়া হয়নি। এমনকি কোন ঘরে ১ থেকে ২ ইঞ্চি ঢালাই আবার কোন কোনটাতে ঢালায়ই দেওয়া হয়নি। ইটের গাথুনি ১৫ ইঞ্চি হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ঠিকমত দেওয়া হয়নি।
বরাদ্দ তালিকায় থাকা কয়েকজন ভূমিহীন দৈনিক দেশতথ্যকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর বানিয়ে দিতেছে। ওই ঘরই হবে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাই। কিন্ত ঘর বানানোর দায়িত্বে যারা আছেন, তারা নিম্নমানের ইট ও নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘর বানাইতেছেন। এই ঘরের কি হবে তা আল্লাহই জানেন।
তারা কে বাধা দিচ্ছেন না, এর উত্তরে তারা বলেন, ‘কিছু বললে যদি তালিকা থেকে নাম কেটে দেয় এই ভয়ে কিছু বলতে পারছিনা। যেভাবে কাজ করা হচ্ছে, তাতে এসব ঘর বেশিদিন টিকবে না বলেও তাদের শঙ্খা রয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ আসিফ রহমান জানান, উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানেই ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনশীল প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে সরাসরি তার দপ্তরে গিয়ে প্রমান দেখালে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলেও আশ্বস্ত করেন।
যদিও ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এসব ঘর নির্মাণে সার্বিক তদারকি করছে খোদ ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসন। নির্মাণসামগ্রী নিম্নমানের হওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করতেই প্রমান পেলে খতিয়ে দেখার আশ্বাসও দিয়েছেন ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ দিয়ে উনি কি বোঝাতে চেয়েছেন তারও কোন সদুত্তর নেই।
সংশ্লিষ্ঠ দপ্তর সূত্রে জানা যায়,২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর আওতায় উপজেলায় ১৬৫টি ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে একটি করে সেমিপাকা গৃহনির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৬৫টি ঘর নির্মাণ শেষে সুবিধাভোগীদের মাঝে সেগুলো হস্তান্তরও করা হয়েছে। ২য় ধাপে নির্মাণাধীন রয়েছে ১০০টি ঘর। যার প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লক্ষ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডুমুরিয়া উপজেলায় এই কাজের দেখভাল করছে খোদ উপজেলা প্রশাসন।
খুলনা জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভূমিহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ঘর তৈরীতে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। আর এ ব্যাপারে তিনি নাকি অবগত নন। তবে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার কথা তিনি যেহেতু শুনলেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে খতিয়ে দেখবেন বলেও তিনি জানান।
আর//দৈনিক দেশতথ্য//১৮ জুন-২০২২//

Discussion about this post