প্রথম পর্যায়ে খুলনা বিভাগের ৬২টির মধ্যে ১৮ টি থানা/উপজেলার ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধন করা হবে। আগামী ২০ মে থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ কর্মসূচির আওতায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ, নিবন্ধন, ভোটার স্থানান্তর ও মৃত ভোটার কর্তন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এক্ষেত্রে প্রথম ধাপে ৬৪ জেলার ১৪০টি উপজেলায় এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।
খুলনা বিভাগের ১৮টি উপজেলা থানার মধ্যে রয়েছে খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা ও দৌলতপুর থানা। এছাড়া মেহেরপুরের গাংনী, কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী, চুয়াডাঙ্গা সদর, ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ, হরিণাকুন্ডু, যশোর সদর, অভয়নগর ও বাঘারপাড়া, মাগুরা সদর, নড়াইল সদর, বাগেরহাট সদর, শরণখোলা, সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলা।
খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আগামী ২০ মে থেকে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে শেষ হবে ৯ জুন। এরপর ১০ জুন থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে খুলনা বিভাগের অবশিষ্ট
৪৪টি উপজেলা /থানার তথ্য সংগ্রহ ও নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। ২০ নভেম্বরের মধ্যে খুলনা বিভাগের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে এবং ভোটার স্থানান্তর ও মৃত ভোটার কর্তন কার্যক্রম ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে
সম্পন্ন করা হবে। নিবন্ধিত নাগরিকদের মধ্যে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে শুধুমাত্র তাদের তালিকা ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার হিসেবে প্রকাশ করা হবে।
এছাড়া দাবী আপত্তি নিস্পত্তি করে ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। অন্যদিকে যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে থাকবে তারা জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্য হবেন কিন্তু ভোটার তালিকাভূক্ত হবেন না, বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া
সাপেক্ষে তারা ২০২৪ সালের ২ মার্চ এবং ২০২৫ সালের ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকাভূক্ত হবেন।
তিনি বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এ কার্যক্রম সুষ্ঠু সুন্দর ও নির্ভূলভাবে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের বিশেষ করে বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, আনসার ও ভিডিপি বিভাগসহ জনপ্রতিনিধিদের একান্ত সহযোগিতা প্রয়োজন।
ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, অন্যান্য উপজেলার ভোটার কার্যক্রমও ধাপে ধাপে শুরু হবে। এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। এ
কার্যক্রমে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে জন্মগ্রহণকারীদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। অর্থাৎ ১৬ বছর বয়সীদের তথ্যও নেওয়া হবে। যারা পরে বয়স ১৮ বছর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন। তারা
ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন ২০২৪ ও ২০২৫ সালে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইসি নিয়োজিত কর্মীরা তথ্য নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশ দিয়ে এবং ছবি তুলে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন
করতে হবে। এ কর্মসূচিতে ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারের নাম কাটা ও আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তরের বিষয়েও কার্যক্রম গৃহীত হবে।
যে কাগজপত্র জমা নেওয়া হবে : নিবন্ধনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পূরণকৃত নিবন্ধন ফরম-২ এর সঙ্গে অনলাইন জন্মসনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অথবা এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা বা যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা পাসের সনদের ফটোকপি।
এছাড়া অন্যান্য কাগজপত্র যেমন নাগরিক সনদ, প্রত্যয়নপত্র/বাড়ি ভাড়া/হোল্ডিং ট্যাক্স/যেকোনো ইউটিলিটি বিল পরিশোধের রসিদের কপি জমা দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন। ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩(কক) এ
নামের সংজ্ঞায় শিক্ষা সনদসমূহের পাশাপাশি জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪-এর অধীন নিবন্ধিত নাম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হবে।
হিজড়া : সরকার বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘হিজড়া লিঙ্গ’ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দেওয়ায় তারা ভোটার তালিকায় নতুন অন্তর্ভুক্তি করতে পারবেন। তবে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তাদের
শনাক্তকরণের জন্য সমাজসেবা অফিসের প্রত্যয়ন অথবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়ন লাগবে। এ বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি, যে তারা যেন ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কোনোভাবেই বঞ্চিত না
হয়।
ভোটার এলাকা স্থানান্তর : এক ভোটার এলাকা থেকে অন্য ভোটার এলাকায় স্থানান্তরের লক্ষ্যে ফরম-১৩ (স্থানান্তর) পূরণপূর্বক প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ সরাসরি স্থানান্তরিত এলাকার থানা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়ার পর যথাযথ যাচাই-বাছাই ও তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ভোটার এলাকা স্থানান্তর করা হবে। এছাড়া
তথ্যসংগ্রহকারী বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভোটার স্থানান্তরের তথ্য সংগ্রহ করে তা সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কার্যালয়ে পাঠাবেন।
এছাড়া মৃত ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তনের জন্য অনলাইন মৃত্যু নিবন্ধন সনদ ও এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে। ভোটার নিবন্ধনের সময় দেয়া তথ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এর তথ্য হিসেবে সংরক্ষিত থাকবে। তাই সঠিক তথ্য দিয়ে ভোটার নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে হবে। একাধিকবার বা একাধিকস্থানে ভোটার হওয়া দন্ডনীয় অপরাধ।
ইতোপূর্বে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে থাকলে এবং যদি তার কোন তথ্য বা কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে না থাকে, তবে যেকোন জেলা নির্বাচন অফিসে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আঙুলের ছাপ যাচাইয়ের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা যাবে।
প্রসঙ্গত, এবারে তিন বছর পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে ইসি। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই হবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তথ্যের শেষ হালনাগাদ। বর্তমানে ইসির সার্ভারে ১১ কোটি ৩২ লাখ ভোটারের তথ্য রয়েছে।
এবি//দৈনিক দেশতথ্য//মে ১০,২০২২//