রুকুনুজ্জামান, পার্বতীপুর প্রতিনিধি:
নামেই শুধু খোলাহাটী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ও বানিজ্য মেলা। বাস্তবে নেই কোন উল্লেখযোগ্য কুঠির শিল্পের প্রদর্শন। যা আছে তা হলো অবৈধ লটারির ব্যবসা ও সার্কাস এ নগ্ন নৃত্যের মহোৎসব।
দিনাজপুরের পার্বতীপুরের সীমান্ত ঘেষা বদরগঞ্জের হাসিনা নগরস্থ একটি বিস্তীর্ন মাঠে গত ১৮ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে তথাকথিত শিল্প ও বাণিজ্য মেলার নামে এসব অবৈধ কারবার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মেলাটিতে সকাল থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত প্রকাশ্যে অবৈধ লটারির টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে।
পার্বতীপুর, পার্শ্ববর্তী রংপুর জেলার বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী ১০/১২টি উপজেলার মানুষজন টিকেট কাটতে ভিড় করছেন মেলাটিতে। পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মেগা পুরস্কার প্রাপ্তির আশায় সাধারণ মানুষ ২০ টাকার টিকেট থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত টিকেট ক্রয় করছেন। অনেকেই এনজিও থেকে লোন নিয়ে বা ধার কর্জ করে এই লটারি খেলায় অংশ নিয়ে পুরস্কার না পেয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন । ঋণের টাকা শোধ করতে অনেকের সংসারে অর্থনৈতিক টান পড়ছে পাশাপাশি স্বামী স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে ঝগড়া বিবাদ লেগেই রয়েছে। ইতোমধ্যেই এই অবৈদ লটারি নামের জুয়ার বিরূপ প্রভাব পড়েছে গ্রামীন সমাজে। মসজিদের দানবাক্স চুরির হিড়িক পড়েছে। অজ্ঞাত চোরের দল দানকৃত টাকাসহ পুরো দানবাক্স ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিয়ন এলাকা থেকে এমন অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, যে মুহূর্তে দিনাজপুর সহ রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় মঙ্গা মৌসুম শুরু হয়েছে। দু’বেলা দুমুঠো খাদ্য জোগার করতে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ যখন নাকাল। সেই মূহুর্তে খোলা হাটি শিল্প বাণিজ্য মেলায় লটারির নামে চলছে জুয়া।
জানা যায়, মেলা কমিটি’র নেতৃত্বে পার্বতীপুরসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা মুহের শতশত স্পটে লটারী বিক্রির বুথ বসানো হয়েছে। প্রতিটি বুথ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টিকেট বিক্রি হচ্ছে। গ্রামের নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই সংসারের সারা মাসের খরচের টাকা দিয়ে লটারীর টিকেট কিনে সর্বশান্ত হচ্ছেন।
পার্বতীপুর উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে প্রায়ই জরিমানা অব্যাহত রাখলেও সব জায়গায় টিকেট বিক্রি বন্ধ করতে পারছেননা। অভিযোগ রয়েছে, লটারী’র টিকেট বিক্রি বন্ধের জন্য থানা পুলিশকে খবর দিলেও
পুলিশ আইনী ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছে। এ কারনেই সর্বত্রই টিকেট বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।
পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ সাদ্দাম হোসেন জানান, মেলার স্পটটি বদরগঞ্জ উপজেলা এলাকায় হওয়ায় সেখানে আমার পক্ষে সরাসরি কোন অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয়। পার্বতীপুর উপজেলায় সর্বত্র টিকেট বিক্রয়ের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন বিভিন্ন স্পটে চোরা গুপ্তা ভাবে বুথ বসিয়ে টিকিট বিক্রয় করা হলেও আমি সাধ্যমত দমন অভিযান অব্যাহত রেখেছি। জনগনের মধ্য থেকে সার্বিক সহায়তা পেলে সম্পূর্নরূপে অবৈধ টিকেট বিক্রয় বন্ধ করা সম্ভব হবে।