প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ধকল সইয়ে উঠতে না উঠতে গবাদি পশু গরুর ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ বা এলএসডি নামে আরেক ভাইরাস মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। মহামারী আকারে জেলাট হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের পূর্ব কদমা গ্রাম সহ আশে পাশে দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন শতশত শত গবাদি পশুতে ছড়িয়ে পড়েছে। পূর্ব কদমা গ্রামের নয়ন ও মনু নামে দুই কৃষকের গরু লাম্পিং রোগ মারা গেছে।
সীমান্তবর্তী পূর্ব কদমা গ্রামে এ ভাইরাসে শত শত গরু আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এর কোনো প্রতিষেধক না থাকায় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে খামারি ও কৃষকরা। এলএসডি গরুর জন্য একটি ভয়ঙ্কর ভাইরাসজনিত চর্মরোগ, যা খামারের ক্ষতির কারণ। পূর্ব কদমা গ্রামের কৃষক কৃষ্ণ আচার্যের অভিযোগ আমরা ব্যক্তিগত ভাবে গ্রাম্য পশু চিকিৎসক ডেকে নিয়ে এসে চিকিৎসা করাচ্ছি কিন্তু সরকারি কোন গবাদি বা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে দেখা মেলেনি। কৃষক বিজন বম্মন জানান, তার গ্রামে প্রতিটি বাড়িতে পুশ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। দুই টি গরুর মারা গেছে ।
হাতীবান্ধা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কে বিষয়টি এই প্রতিবেদক জানিয়েছে। একই সাথে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কে ফোন দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর সরকার জানান, লম্পিং পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে মেডিকেল টিম গঠন করে তাৎক্ষণিক সকল ধরনের সেবা পাবেন গবাদি পশু খামারি গণ ও কৃষক পরিবার। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে দেখছি। তিনি প্রয়োজনীয় সেবা দিতে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
জানা যায়, ১৯২৯ সালে সর্বপ্রথম আফ্রিকা মহাদেশের জাম্বিয়াতে এ রোগ দেখা দেয়। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে মহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তবে এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। মশা-মাছি বাহিত রোগটি মূলত মশার মধ্যমেই বেশি ছড়ায়। আক্রান্ত গরু সুস্থ হতে দীর্ঘদিন সময় লাগে। দিন দিন গরুর বাছুর দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মারাও যায়। একটি খামারকে অর্থনৈতিকভাবে ধসিয়ে দিতে খুরা রোগের চেয়েও অনেক বেশি ভয়ঙ্কর রোগ এটি।
বাংলাদেশে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রথম দেখা দেয় ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে। এরপরই মাঠে নামে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তদন্ত টিম। তখন দেশের ১২ জেলায় ৪৮ হাজার গরুর মধ্যে এ রোগের লক্ষণ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। এ বছর আবার এ রোগটি দেশের বিভিন্ন জেলায় দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আফ্রিকা মহাদেশে ৪০ শতাংশ গরু এ রোগে মারা গেছে বলে কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে।
খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ৭ জুলাই ২০২৩