Print Date & Time : 24 April 2025 Thursday 5:32 pm

গর্ভাবস্থায় রোজা পালনে যা করতে হবে

মায়ের শরীরে জন্ম নেয় নবজাতকের ভ্রূণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বিকশিত হয়। পূর্ণতা পায় মানবশিশুর অবয়ব। মায়ের গর্ভে শিশুর বেড়ে ওঠা, সুস্থতা, ওজন, মেধা, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, জন্মগত ত্রুটি—এসবের অধিকাংশই নির্ভর করে মায়ের স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার ওপর। আর মায়ের সুস্থতা নির্ভর করে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন প্রণালির ওপর।

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের স্বাভাবিকের প্রায় দ্বিগুণ ক্যালরির প্রয়োজন হয়। ক্যালরি সরবরাহ নিশ্চিত করতে মাকে অল্প অল্প করে ঘন ঘন খাবার খেতে হয়। মায়ের অপুষ্টির ফলে গর্ভস্থ সন্তানের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এতে শিশু দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তাই এই সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি

খাবার খেতে হবে। সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।

রমজান মাসে গর্ভবতী মায়েদের রোজা রাখার ব্যাপারে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। রোজা রাখা ঠিক হবে কি না, এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে রোজা রাখার ব্যাপারে গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে শিথিলতা রয়েছে বলে আমরা সবাই জানি। তবে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে যেকোনো গর্ভবতী চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা পালন করতে পারেন।

গর্ভকালকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে ভাগ করা হয়।

প্রথম ট্রাইমেস্টার

(১-১৩ সপ্তাহ)

এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠিত হয়। তা ছাড়া প্রথম তিন মাস বমিভাব ও অরুচি বোধ করার কারণে বেশির ভাগ মা ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারেন না। ফলে দুর্বলতা, ক্লান্তি ভাব, অনিদ্রা এবং ওজন কমে যাওয়ার মতো ব্যাপারগুলো ঘটে থাকে। তাই গর্ভের প্রথম তিন মাস রোজা না রাখাই ভালো।

দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার

(১৪-২৬ সপ্তাহ)

গর্ভকালীন এই সময়কে ‘স্বর্ণালি সময়’ বলা হয়। প্রথম ট্রাইমেস্টারের অপ্রীতিকর উপসর্গগুলো থেকে এ সময় মুক্তি পাওয়া যায়। ফলে মায়ের খাবার গ্রহণ এবং ঘুমের যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। দুর্বলতা কমে গিয়ে ভালো অনুভব করেন। মা ও শিশুর যদি কোনো শারীরিক জটিলতা না থাকে, তাহলে ১৪ থেকে ২৬ সপ্তাহকাল সময়ে রোজা রাখতে কোনো বাধা নেই। তবে তার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

তৃতীয় ট্রাইমেস্টার

(২৭-৪০ সপ্তাহ)

প্রথম ট্রাইমেস্টারের মতো এই ট্রাইমেস্টারেও প্রয়োজন কিছু বাড়তি যত্ন ও সতর্কতার। এ সময় শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। তাই মায়ের খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। রোজা রাখার ফলে যদি মায়ের ওজন কমে যায় কিংবা শিশুর নড়াচড়া কম করে, তবে রোজা না রাখাই ভালো এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লক্ষ রাখতে হবে

যখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন

একজন গর্ভবতীর শরীরে বেড়ে ওঠে আরেকটি জীবন। সেই জীবনের সুস্থতা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে মায়ের সুস্থতার ওপর। গর্ভের শিশুর সামান্যতম ক্ষতি হতে পারে এমন কিছু করা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যেকোনো সুস্থ-সবল গর্ভবতী নারী অনায়াসে রোজা পালন করতে পারেন।

এম/দৈনিক দেশতথ্য//