গাংনী প্রতিনিধি : মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে মৌখিক ব্যবহার খারাপ ও নাম জারী কেসের অনুমোদনে মোটা অংকের টাকা দাবীর অভিযোগ এনে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিকট লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন ধানখোলা ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা সেলিম রেজাসহ ৪০ জন সদস্য।
গত ২৮ এপ্রিল পাঠানো অভিযোগ পত্র অনুযায়ী বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মেহেরপুর জেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের ভার পেয়েছেন সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (রাজস্ব) নাদির হোসেন শামীম।
অভিযোগে ধানখোলা ইউনিয়নের বাসিন্দাগণ উল্লেখ করেন, নাম জারী কেসের অনুমোদনে টাকা না দেওয়া হলে সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রহিম কেস অনুমোদন না দিয়ে তা বাতিল করে প্রেরন করেন।
এলাকাবাসীরা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, বাঁশবাড়ীয়া মৌজার আরএস ০১ খতিয়ানভুক্ত জমি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ০২/১২/২০২৪-২০২৫ নং কেস অনুমোদন করেছেন ধানখোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রহিম। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সাধারণ জমাজমির খারিজ কেস বাতিল করা হয় অথচ ০১ নং খাস খতিয়ান ভুক্ত জমি যাহা সরকারি স্বার্থ জড়িত রয়েছে এমন কেস অনুমোদন করেন।
উল্লেখ থাকে যে, ধানখোলা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন ও কুষ্টিয়া বিজ্ঞ স্পেশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে যাহার মামলা নম্বর ০৮/২০১৬ এবং সে উক্ত মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আমঝুপি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় আব্দুর রহিম ১নং খতিয়ান ভুক্ত জমাজমি খারিজ বাবদ মোটা অংকের টাকা নিয়ে নাম খারিজ করে দেয়। এ কারণে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক আব্দুর রহিমকে ১০ বছর যাবত সাসপেন্ডে রাখেন। যাহা আব্দুর রহিমের সার্ভিস বুক দেখলেই প্রমাণ মিলবে। বসন্তপুর মৌজায় ১ নং খতিয়ানে ১ টি দাখিলা লিখে উপ-সহকারী কর্মকর্তা আনিসুজ্জামানকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় এবং এতে আনিসুজ্জামানের চাকুরী ছেড়ে দেওয়ার জন্য আব্দুর রহিম চাপ দিতে থাকে। আব্দুর রহিম চাকুরী ঠিকই করছে কিন্তু অসহায় উপ-সহকারী কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান চাকুরীচ্যুত হয়ে আজ পথের ভিখারী। ঠিক একইভাবে ধানখোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এসে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা ছাড়া আর কোন কাজকর্ম করে নাই। একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এখন অবধি কিভাবে চাকুরী করছে এটাই ভাবনার বিষয়।
ইতিপূর্বে আব্দুর রহিমের কু-কর্মের ও খারাপ ব্যবহার প্রত্যাহারের জন্য গত ১৫/৮/২০২৪ তারিখে এলাকাবাসীর অনেকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের নিকটে গেলে জেলা প্রশাসক শামীম হাসান গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদ্দাম হোসেন বরাবর একটি চিরকুট লিখে বিষয়টি সহানুভূতির সাথে বিবেচনার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু নানা ব্যস্ততা আর অজুহাতে সে নির্দেশও পালন করা হয়নি। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে আব্দুর রহিমের কু-কর্মের কথা গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের সমুদয় কর্মকর্তাগণ অবগত রয়েছেন।
আরও উল্লেখ থাকে যে, ধানখোলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে নাম জারী কেসের অনুমোদনে মোটা অংকের টাকা দাবীর অভিযোগে কয়েক মাস পূর্বে কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী ভূমি অফিসে বিষয়টি নিয়ে তদন্তে গেলে ভূমি কর্মকর্তা সংবাদ কর্মীদের সাথে অসদাচরণ করেন এবং রাগান্বিত ও উচ্চ স্বরে অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিক যে যা পারে করে নিক বলেও জানান ঐ ভূমি কর্মকর্তা। তাছাড়া ভূমি অফিসে দালাল চক্রসহ বহিরাগতদের আনাগোনা রয়েছে এমন অভিযোগও ছিলো। যেটি সরেজমিনে ভূমি অফিসে পাওয়া যায়। এখন অবধি সেখানে বহিরাগতদের আনাগোনা রয়েছে। যা সরেজমিনে ভূমি অফিসে গেলেই পাওয়া যাবে।
সরেজমিনে আব্দুর রহিমের বাসভবন মেহেরপুর সদর উপজেলার হরিরামপুর গিয়ে বিভিন্ন ধরনের লোকজনের সাথে আলাপকালেও বিভিন্ন জনে আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মত প্রকাশ করেন। অতএব দুর্নীতিবাজ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রহিমের হয়রানির শিকার হতে রেহাই পাওয়ার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন ধানখোলা ইউনিয়নবাসীর অনেকে। যা অভিযোগের কপিতে সাক্ষরসহ উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কাছে এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
এসকল বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রহিমের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

Discussion about this post