Print Date & Time : 21 April 2025 Monday 6:54 pm

গাংনীতে কোটি টাকার জমি ফিরে পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ফাকের আলী

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক কর্নেল মকসুদুল হাসান ও প্রফেসর জিয়াউল আহসান মিয়ার বিরুদ্ধে অসহায় পরিবারের ৭০ শতক জমি প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক কর্নেল মকসুদুল হাসান ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুক্তভোগী ফাকের আলীর জমি রেজিস্ট্রি করে নেন।

রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ভুক্তভোগী আলমডাঙ্গা উপজেলার মোড়ভাঙ্গা গ্রামের গুড়া তামাক ব্যবসায়ী ফাকের আলী তার বক্তব্যে জানান, আমি দীর্ঘদিন সৌদি প্রবাসে ছিলাম, ছুটিতে বাড়ি এসে তামাকের ব্যবসা শুরু করি। একদিন গাংনী উপজেলার ধানখোলা বাজারের জিয়াউল মিয়া ও সাজ্জাদ মিয়ার কাছ থেকে কিছু গুড়া তামাক ক্রয় করি, এসময় জিয়াউল মিয়ার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ও সাজ্জাদ মিয়ার কাছে ৯০ হাজার টাকার গুড়া তামাক বাকিতে ক্রয় করে নিয়ে যায়। তামাক বেচাকেনা করে তাদের টাকা পরিশোধ করার কথাছিল।
ওই বছরে তামাকের চাহিদা কম থাকায় নগদ টাকায় তামাক বিক্রয় করতে পারিনি। পরে বাকিতে তামাক গুলো বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয় করি। তাদের নিকট থেকে টাকা আদায় করতে পারিনি।

আমি আত্মসম্মানের ভয়ে ২০০৪ সালে সাজ্জাদ মিয়া ও জিয়াউল মিয়ার কাছে গিয়ে আমার সমস্যার কথা তুলে ধরি। আমি অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত আছি, আমাকে আরও কিছু দিন সময় দেন। আমি সামনের মাসে আবার প্রবাসে চলে যাবো। প্রবাস থেকে আপনাদের টাকা পরিশোধ করে দিবো।

এসময় সাজু মিয়া ও জিয়াউল মিয়া আমাকে বলেন, আপনাকে সময় দেয়া হবে। তবে আপনার যে গাংনীতে জমি আছে ওই জমি আমাদের নামে লিখে দিতে হবে। আপনার কোন সমস্যা নেই। আমরা টাকা পাওয়ার সাথে সাথে আপনার জমি ফেরত দিয়ে দেবো।
আর যদি না দেন তাহলে আমার ভাই কর্নেলকে ডাকবো। কর্নেল মকসুদুল হাসান আমাকে প্রাণ নাশের ভয় দেখিয়ে আমার ৪২/৪৬ নং চৌগাছা মৌজার আর এস ৩১৮৮, ৬৭৫৫ দাগসহ অপর ২৫ টি দাগে কোটি টাকা মূল্যের ৭০ শতক জমি মাত্র ৫৩ হাজার টাকায় রেজিস্ট্রি করে নেন।

আমি সরল বিশ্বাসে প্রভাবশালী পরিবারের কাছে আমার শেষ সম্বলটুকু লিখে দিয়ে প্রবাসে চলে আসি। প্রবাসে যাওয়ার ৫ মাস পর তাদের টাকা ফেরত দিয়ে জমি ফেরত চাইলে তারা আজকাল করে ঘুরাইতে থাকে।

তারা বলেন, জমি আমাদের নামে রেজিস্ট্রি হয়নি। কর্লেন মকসুদুলের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। সে ঢাকাতে আছে ঢাকায় থেকে আসলে আপনার জমি ফেরত দেয়া হবে। এভাবে দীর্ঘ ১৫ বছর ঘুরাইতেছে।
ফাকের আলী আরও বলেন, আমি কর্নেল মকসুদুলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করি তিনি বলেন, জমির কথা বললে তোর স্বপরিবারকে তুলে নিয়ে লাশ গুম করে দেবো।
এভাবেই হুমকি দিয়ে আসছেন। কিছু দিন আগে জিয়াউল মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করি তিনি বলেছেন, আমি ভাইকে বলে আপনার জমি ফেরত দিবো।

এঘটনায় ফাকের আলী বাদী হয়ে গাংনী থানায় একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২ এপ্রিল বুধবার সকালে স্থানীয় ভাবে জিয়াউল মিয়াসহ উভয়পক্ষকে ডেকে নেওয়া হয়। এসময় সাংবাদিকসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন সবার সম্মুখে প্রথমের দিকে কথাগুলো অস্বীকার করলেও পরে জমি ফেরত দেওয়ার কথা ছিলো বলে শিকার করেন জিয়াউল মিয়া ।

এব্যাপারে জিয়াউল মিয়া বলেন, জমি ফেরত দেওয়ার কথা ছিলো না, আমাদের পাওনা টাকা বাবদ তিনি জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। জমি ফেরত দেওয়ার বিষয়টি আমার মনে নেই।
তার কাছে কোন প্রমাণ থাকলে দেখাতে বলেন, এ সময় ফাকের আলী সবার সম্মুখে মোবাইল রেকর্ডিং শোনানোর পরে জমি ফেরত দেয়ার কথাটি স্পষ্ট হয়।
পরে তিনি বলেন, কথা ছিল দুই বছরের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে হবে। তিনি তা দিতে পারেনি। ১৫ বছর পর এসে জমি ফেরত চাইলে হবে। তবে আমি কর্নেল মকসুদুল হাসানের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবো।

এব্যাপারে মৃত সাজ্জাদ মিয়ার ছেলে মাসুদ মিয়া জানান, আমি ব্যবসায়িক লেনদেনের বিষয়টি অবগত না। আর জমি ফেরত দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
এব্যাপারে আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক কর্নেল মকসুদুল হাসান দেশের বাহিরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।