প্রতিবেদক, গাংনী: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের মানিকদিয়া এগারপাড়া আলিম মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্য ও গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী একরামুল হক তাজু এবং অধ্যক্ষ আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে উক্ত অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসিনা সরকারের আমলে একরামুল হক তাজু দীর্ঘ ১২ বছর সভাপতি পদে থেকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেন।
এ সময় অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের, বিদ্যুতসাহী সদস্য আব্দুল কুদ্দুস, সভাপতির ভাই দাতা সদস্য জাহিদুল হক সাজু ও অফিস সহকারী একরামুল হকের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রামবাসী এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং মাদ্রাসার আর্থিক হিসাব চায়। তবে হিসাব দিতে গড়িমসি করতে গিয়ে অভিযুক্তরা কৌশল অবলম্বন করে। তারা জনগণের মতামত উপেক্ষা করে ২০ মার্চ ২০২৫ তারিখে গোপনে সাবেক সভাপতির স্ত্রী কানাডা প্রবাসী শামীমা নার্গিস হককে এডহক কমিটির সভাপতি করেন। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা শামীমা নার্গিস হক দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাস পার হলেও এখনও কোনো মিটিং করেননি, যা নিয়মবহির্ভূত।
হাসিনা সরকারের আমলে অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের ও অফিস সহকারী একরামুল হক নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। নিয়োগ বোর্ডের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেন।
সহকারী শিক্ষক শাহিনুর বেগমকে (সামাজিক বিজ্ঞান) বাণিজ্য শাখার নিবন্ধন সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ ওই মাদ্রাসায় বাণিজ্য শাখার কোনো পদ নেই।
নৈশ প্রহরী আশরাফুল ইসলামকে বয়স জালিয়াতি করে এবং ভূয়া নৌবাহিনীর সনদ ব্যবহার করে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার জন্ম তারিখ একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। আশরাফুল ইসলামের বর্তমান বয়স ও তার ছোট ভাই আনিছুর রহমানের বয়সের মধ্যে অসামঞ্জস্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এছাড়া অফিস সহকারী, আয়া, কম্পিউটার ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, সাবেক সভাপতি একরামুল হক তাজু ক্ষমতায় থাকাকালে অর্থ পাচারের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি মাদ্রাসার জমিতে অবৈধভাবে তার পিতার নামে ‘আলহাজ মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশন’ গড়ে তোলেন এবং সরকারি নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করে মাদ্রাসার গাছ কেটে বিক্রি করেন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, একরামুল হক তাজু ও অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের দীর্ঘ ১২ বছর ধরে দুর্নীতি চালিয়ে আসছেন। বর্তমান গভর্নিং বডি গঠনের প্রক্রিয়ায় এদের যেন কোনো পদে রাখা না হয়, সেই দাবি তুলেছেন তারা।
অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের বলেন, “বাণিজ্য শাখা থেকে নিবন্ধন নিয়ে সামাজিক বিজ্ঞানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে—এটা সত্যি। তবে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।” সাবেক সভাপতি একরামুল হক তাজুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মনিরুল ইসলাম জানান, “অবৈধ নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো লিখিত অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, “ভুক্তভোগীরা যদি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন, তাহলে তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”