Print Date & Time : 21 April 2025 Monday 1:17 pm

গাংনীতে শিশুশ্রম বন্ধে নেই কার্যকর কোন ভূমিকা

‘শিশুর শিক্ষা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করি, শিশুশ্রম বন্ধ করি’ এই শ্লোগানে ১২ জুন বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালিত হলেও। প্রতিরোধ ও সচেতনতা সৃষ্টি সেই সাথে শিশুশ্রম বন্ধে কার্যকর ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে না। শিশুশ্রম বন্ধে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। তা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবার কথা থাকলেও মেহেরপুরের গাংনীতে এটি বেমানান।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন ২০১৮ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সে অনুযায়ী কেউ যদি শিশুশ্রমিক নিয়োগ করে, তঁাকে পঁাচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হবে। আইন অনুযায়ী ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোরেরা হালকা কাজ করতে পারবে। আগে ১২ বছরের শিশুদের এমন হালকা কাজের সুযোগ ছিল। নিকট অতীতে এই আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যায়নি। জেলায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কোনো কার্যালয় নেই। শিশুশ্রম বন্ধ বা আইন প্রয়োগে তঁাদের কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না।

বিভিন্ন হাট বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, হোটেল রেস্তোরায় ও মিনি কারখানায় শিশু শ্রমিক ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যাপক হারে। এছাড়া হরেক রকম ফেরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে অসংখ্যক শিশু শ্রমিক। শিশু শ্রম আইনের কোন প্রয়োগ না থাকায় দিন দিন বেড়েই চলছে এর সংখ্যা। কিছু সংখ্যক সুবিধাভোগী মহাজন, দোকান ও কারখানা মালিক কম পারিশ্রমিকে শিশু শ্রমিক নিয়োগ করে তাদের দিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র পরিবারের বেশির ভাগ শিশু এসব কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত।

সরজমিনে গাংনীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন মুদি দোকান, হোটেল রেস্তোরা, ওয়েলন্ডিং কারখানাসহ ঝঁুকিপূর্ণ কাজে নির্বিঘ্নে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। অপরদিকে, অভাবের তাড়নায় অনেক শিশু বাদাম, চকলেট, দুধ, খেলনা সামগ্রী বিক্রি করে সংসার চালাতে পিতা-মাতাকে সহযোগীতা করছে। গাংনী হাইস্কুল মার্কেটের জননী ওয়েল্ডিং কারখানায় কামাল(১৩), হাসিবুল(১০) ও সাদ্দাম(১৪) মাত্র ৫শ টাকা মাসিক চুক্তিতে কাজ করছে। যে বয়সে স্কুলে পড়াশুনা নিয়ে এদের ব্যস্ত থাকার কথা সে বয়সে তারা দু’মুঠো ভাতের আশায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে ।

ঝুঁকিপুর্ণ এসব কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় মৃত্যু বা পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে অনেকেরই। ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর বামন্দী সেলিম ওয়ার্কসপে কাজ করতে গিয়ে ছাতিয়ান গ্রামের আরিফুল হকের ছেলে ইব্রাহিম(১৫) বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে মারা যায়। চলতি বছরের ২৩ মে মাটি বহনকারী লাটা হাম্বার চালাতে গিয়ে দূর্ঘটনায় মারা যায় গাংনীর চরগোয়াল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সাজ্জাদ(১৪)। একই সাথে আহত হয় সাজ্জাদের বন্ধু হাসান আলী(১৫)। গত ০৭ জুন সন্ধ্যায় পাখিভ্যান চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আহত হয় কুঞ্জনগরের লাল্টু মিয়ার ছেলে আবু বকর(৯)। তার বাম হাত ভেঙ্গে যায়।

শিশু শ্রমের বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু জানান, শিশু শ্রমের বিষয়ে তেমন কোন অভিযোগ বা কথ্য নেই। যদি কোন তথ্য পাওয়া যায় সেটি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খালিদ সাইফুল, দৈনিক দেশতথ্য, ১২ জুন ২০২৩