জাল সনদে তার স্ত্রী ও ভাইকে নিয়োগ দিয়েছেন।
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার এন,পি (নওদাপাড়া) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদে চাকরী করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি বি,এ পাশের আগেই এম,এ পাশ করে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এমন প্রতারণার ঘটনাটি ঘটেছে, গাংনী উপজেলার কাজীপুর ইউনিয়নের নওদাপাড়া এনপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, এন,পি মাধ্যমিক ১৯৯৮ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর দু’এক বছর পূর্বে (১৯৯৪ ইং সালে) কাজীপুর কলেজ স্থাপিত হয়। কলেজ পরিচালনা পরিষদের সুপারিশে সেখানে সহকারী লাইব্রেরীয়ান হিসেবে ০৮.০৩.৯৯ তারিখে যোগদেন মনিরুল ইসলাম।
তখন তিনি এইচএসসি পাশ ছিলেন। এভাবে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি সহকারী লাইব্রেরীয়ান পদে চাকরী করেন এবং সরকারী সম্মানীভাতা গ্রহণ করেন।
এক পর্যায়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ তার নিকট ডিগ্রী পাশ সনদ চাইলে তিনি ডিগ্রী পাশ সার্টিফিকেট দিতে না পেরে (০১-০৪-২০০৭ ইং তারিখে ) চাকরী থেকে অব্যাহতি নেন। কলেজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে গ্রামে স্থাপিত এনপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি বেসরকারী ইউনিভার্সিটি থেকে ক্রয় করা সনদ প্রদর্শন করে নিজেকে এমএ পাশ দাবি করে প্রধান শিক্ষক পদ হাতিয়ে নেন।
হঠাৎ জানা গেল তিনি মেহেরপুর মুজিবনগর ডিগ্রী কলেজ থেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) আওতায় ২০০৭ ইং সালে ডিগ্রী পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ২০০৭ ইং সালে তিনি বাউবি থেকে ডিগ্রী পাশ করলেন, তাহলে ২০০০ সালে তিনি কিভাবে এম,এ পাশ সনদ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক হলেন।
এখন শিক্ষা গবেষকগণ জানান, যদি প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ২০০৭ সালে ডিগ্রী পাশ করেন। তাহলে তিনি শিক্ষক নিবন্ধন ছাড়া কিভাবে বিদ্যালয়ে যোগদান করলেন। আবার যদি আগে যোগদান করে থাকেন তাহলে ততদিনে তিনি এইচএসসি পাশ ছিলেন। কিভাবে তিনি এম এ পাশ দেখালেন সেটা তদন্ত করে দেখার বিষয়।
এছাড়াও তিনি কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা না থাকা সত্বেও তার ভাইকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। একই ভাবে তিনি ভুয়া কৃষি ডিপ্লোমা সনদ দিয়ে রোকসানাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, রোকসানা কানিজ একজন গৃহিনী। বিয়ের সময় তিনি এসএসসি পাশ করেছিলেন। তার স্ত্রীকে কৃষি শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিতে ঢাকা থেকে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রয় করা সনদ দেখিয়ে চাকরী নিয়েছেন।
মনিরুল ইসলাম শিক্ষা অফিস ও শিক্ষা অফিসার কে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষকের পরিচয় দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে স্কুলের জমিদাতা ফরহাদ হোসেন ও রুহুল আমিন জানান, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে জমি দিয়েছি। অথচ প্রধান শিক্ষক আমাদের বাদ দিয়ে অবৈধভাবে জাল সনদে তার স্ত্রী ও ভাইকে নিয়োগ দিয়েছেন। ফরহাদ হোসেন জানান, আমার ভাবিকে এবং রুহুল আমিনের স্ত্রীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য টাকা পয়সা উৎকোচ নিলেও নিয়োগ দেয়নি।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হয়েছে। সরকার অনুমোদিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভুয়া শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হবে এটি কাম্য নয়। এলাকার সচেতন মহলের দাবি অনতিবিলম্বে বিদ্যালয়ের কাগজপত্র তদন্ত করে ভুয়া সনদধারী শিক্ষককে বহিস্কার এবং প্রতারণার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন এবং শিক্ষা বিভাগের আশু হস্তক্ষেপ গ্রহন করা হউক।
এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলামের সাথে কথা বলতে বিদ্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। অন্য শিক্ষকগণ জানান স্যার খুলনায় গিয়েছে। পরে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি পরে কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন।